শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সিলেটের বিশ্বাসঘাতকরা রেহাই পাবে না : কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও সিলেট

সিলেটের বিশ্বাসঘাতকরা রেহাই পাবে না : কাদের

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল সিলেট আওয়ামী লীগের শোকসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে— এ কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অনেক হয়েছে, কারা কী করেছেন, দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিশ্বাসঘাতকরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নৌকাকে পরাজিত করেছেন, নৌকা ঠেকানোর নেতৃত্ব কে দিয়েছেন? এই আত্মবিনাশী প্রতিযোগীরা রেহাই পাবেন না। অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। সব খতিয়ে দেখছি, দোষ প্রমাণ হলে রেহাই নেই— নৌকার বিরোধিতাকারী যত বড় প্রভাবশালীই হোন না কেন রক্ষা পাবেন না। গতকাল বিকালে সিলেট মহানগরের রেজিস্ট্রি মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সভাপতিত্বে এবং জেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর পরিচালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুত্ফর রহমান, মহানগর সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমেদ, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপি, ইমরান আহমেদ এমপি প্রমুখ। বিকাল ৩টায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সভাস্থল। পরে নেতা-কর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শোনেন। বক্তারা প্রায় সবাই সিলেট সিটি নিবাচনে পরাজয়ে বিষয়ে কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, মনে রাখবেন যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন, বাংলাদেশে আর ২০০১ সালের পুনরাবৃত্তি হবে না। সকাল ১০টায় ভোট শেষ সেই নির্বাচন বাংলাদেশে আর হবে না। দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করে কাদের বলেন, দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সব খবর আমরা রাখি। কানাডায় বসে, মধ্যপ্রাচ্যে বসে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কারা কোন দেশে কখন কী উদ্দেশ্যে কী ষড়যন্ত্র করে সে খবর আমরা রাখি, আমাদের কাছে সব খবর আছে। ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের চোরাবালি দিয়ে ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত আমরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করব।

তিনি বলেন, বিএনপি বলেছে তারা সংলাপ চায়, আমরাও সংলাপ চাই। কিন্তু কার সঙ্গে সংলাপ করব? ২০১৪ সালের নির্বাচনে আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি বিএনপি নেত্রীকে ডাকেননি? তিনি কী উত্তর দিয়েছিলেন? আবার খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যখন দেখতে গেলেন তখন মুখের ওপর দরজা কি বন্ধ করে দেওয়া হয়নি? সেদিনই খালেদা জিয়া দরজা বন্ধ করে দিয়ে সংলাপের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন।

ইভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইভিএম ব্যবহার আমাদের নতুন দাবি নয়। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যখন সংলাপে বসি, তখনই এ প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সিটি নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, কম সময়ে নির্ভুল এবং বেশি গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে ইভিএম ব্যবহার করে। সিলেটেও ইভিএমে ভোটে বিএনপি বিজয় লাভ করেছে। তাহলে বিএনপির ইভিএম ব্যবহারে আপত্তি কোথায়? যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করেন কোনোভাবেই ২০০১ সালের মতো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। সকাল ১০টার মধ্যেই ভোট গ্রহণ শেষ করা যাবে না। কোথায় কী ষড়যন্ত্র করছেন আমরা সব জানি। কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটে বিশ্বাসী নয়। তারা ষড়যন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা আবারও ষড়যন্ত্র করছে। এদের সঙ্গে কিছুসংখ্যক সুশীল যোগ দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়েই হবে, কোনো ষড়যন্ত্রই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। দেশের জনগণ সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে। অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সদ্য সমাপ্ত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সিলেটে আমাদের এমন পরিস্থিতি হওয়ার কথা ছিল না। কেন পরাজয় হলো? অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছিল কিনা? নাকি সাংগঠনিক দুর্বলতা? পরাজয়ের পেছনে বিশ্বাসঘাতকতা কাজ করেছে কিনা? কোনো ষড়যন্ত্রকারী ছিল কিনা? এসব খুঁজে বের করে দোষ প্রমাণিত হলে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে আমরা সিলেটে নির্বাচনের সফল ঘরে তুলতে পারব না।

আহমদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে চলবেন, মুজিবকোট পরে ঘুরবেন আর ভোট দেওয়ার সময় নৌকায় ভোট দেবেন না— এমন আওয়ামী লীগ দরকার নেই। আজকে যারা শোকসভায় হট্টগোল করছেন (আহমদের বক্তৃতার সময় মঞ্চের সামনে বসা কর্মীরা হট্টগোল করেন) তারা কীসের আওয়ামী লীগ? যারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ধানের শীষে ভোট দেন তারা কীসের আওয়ামী লীগ? মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। এনামুল হক শামীম বলেন, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ধরে রাখতে চাইলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিতে হবে। নৌকায় ভোট দিলে দেশের মানুষ ভালো থাকে, উন্নয়ন হয়, অগ্রগতি হয়। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নৌকার বিজয়ের জন্য প্রয়োজন নিজেদের ভিতরে ঐক্য। যদি সেই ঐক্য ধরে রাখতে পারি তাহলে উন্নয়ন সম্ভব। ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের শিক্ষা নিয়ে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হব। সভাপতির বক্তব্যে অশ্রুসিক্ত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, আজকে এখানে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পারিনি। আর মনোনয়ন চাই না। আমি আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে চাই। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন কামরান। বলেন, ‘আমি আর কাত্তে পারি না, আমি কানলে আমার কর্মীরাও কাঁদে।’ এ সময় মঞ্চের সামনের কর্মীরা ‘বেইমানদের চামড়া তুলে নেব আমরা’সহ নানা স্লোগান দেন।

সর্বশেষ খবর