বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
খালেদার মুক্তি-চিকিৎসা দাবি

বিএনপির প্রতীকী অনশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির প্রতীকী অনশন

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে গতকাল প্রতীকী অনশনে বিএনপি নেতা-কর্মীরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেছেন, মুক্ত খালেদা জিয়াকে ছাড়া একতরফা কোনো নির্বাচন এ দেশে হবে না, হতে দেওয়া হবে না। খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও তার মুক্তির দাবিতে গতকাল দুপুরে এক প্রতীকী অনশনে দলের নেতারা এ হুঁশিয়ারি দেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন পালন করা হয়। বিএনপির অভিযোগ, মানববন্ধন থেকে ফেরার পথে অর্ধশত নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। সারা দেশের জেলা ও মহানগর সদরে অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পরে বিকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঢাকায় ১০৭ জনসহ সারা দেশে ১৫১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রতীকী অনশনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ পানি খাইয়ে নেতাদের অনশন ভাঙান। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার যতই ষড়যন্ত্র করুক ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি এ দেশে হবে না। তফসিল ঘোষণার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। নইলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘অন্যায় ও মিথ্যা’ মামলায় খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্র করে কারাগারে রাখা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আর খালেদা জিয়াকে ছাড়া, বিএনপিকে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আওয়ামী লীগের কর্মচারী নয়। যারা এখনো আওয়ামী লীগের কথায় কাজ করছেন, তাদের কিন্তু ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাই অযথা বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানি, গ্রেফতার ও মামলা দেবেন না।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সামনে এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে,  যে কর্মসূচিতে এই সরকারের নৌকা ভেসে যাবে। তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথ। রাজপথে আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। খালেদা জিয়াকে ‘মুক্ত করে’ নির্বাচনে যেতে চাইলে হাতে আর ‘মাসখানেক’ সময় আছে। নেতা-কর্মীদের রাজপথের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে বলেন সাবেক এই আইনমন্ত্রী। মির্জা আব্বাস বলেন, ‘গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ কারারুদ্ধ। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হলে রাজপথেই ফয়সালা করতে হবে। তার নেতৃত্বেই আমরা জাতীয় নির্বাচনে যাব।’ আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া যদি দলের কেউ নির্বাচনে যেতে চায়, তাদের সমুচিত জবাব দিতে হবে। নেতাদের অনশন ভাঙিয়ে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে যে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই গণতন্ত্র আজ ভূলুণ্ঠিত। আমরা আইনের শাসন, মানবাধিকার,  মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র হারিয়েছি। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভবিষ্যতে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে এসব ফিরে পেতে চাই।’

অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মিজানুর রহমান মিনু, আতাউর রহমান ঢালী, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, ইমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, রেহেনা আক্তার রানু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, রফিক শিকদার, হেলেন জেরিন খান, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাদেক আহমদ খান, রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরোয়ার, আবদুল হালিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, কল্যাণ পার্টির শহীদুর রহমান তামান্না, আজহারুল ইসলাম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক লুত্ফর রহমান প্রমুখ অংশ নেন।

নয়াপল্টনে রিজভীর অনশন : নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী প্রতীকী অনশন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রতীকী অনশনে অংশ নেন। অনশন শেষে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, আজ সকাল থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রমের বনানীর বাসভবন সকাল থেকে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। দেশব্যাপী সরকারি সন্ত্রাসের অংশ হিসেবেই প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ মেজর হাফিজের বাসা পুলিশ ঘিরে রেখেছে। জানা যায়, দুপুরে মেজর হাফিজের বাসা পোশাকধারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘেরাও করে রাখে। পরে অবশ্য বিকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি।

আদালতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের অনশন : দুই দিনের কর্মসূচি : আদালত স্থানান্তরের প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এবং সুচিকিৎসার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের আইনজীবী সমিতিগুলোতে দুই দিনের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ ও ১৯ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। গতকাল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখা আয়োজিত এক প্রতীকী অনশন কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বেলা ১টা থেকে এক ঘণ্টাব্যাপী এ প্রতীকী অনশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মোহাম্মদ আলী, শরীফ ইউ আহমেদ, ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, বি এম সুলতান মাহমুদ, রফিকুল ইসলাম মন্টু, মনির হোসেন প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর