সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
এশিয়া কাপে দুর্দান্ত বাংলাদেশ

এক ইনিংসেই অমর হয়ে থাকবেন তামিম

আসিফ ইকবাল, দুবাই থেকে

এক ইনিংসেই অমর হয়ে থাকবেন তামিম

হাতে আঘাত পেয়ে এশিয়া কাপ শেষ তামিমের।

গালফ সমুদ্রের পাড়ে দুবাইয়ে দিন-রাতের পার্থক্য নেই এতটুকু। রোশনাই আলোয় আলোকিত শহরটি ব্যস্ত সকাল-সন্ধ্যা। চওড়া চওড়া সড়কে এক-দেড়শো কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলছে শো শো করে। ছুটে চলছে ব্যস্ত মানুষ। কারও দিকে নজর নেই কারও। সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ কাজ নিয়ে। দিন-রাত্রির তাপমাত্রায় কোনো হেরফের নেই। ৩৮ থেকে ৪৩ ডিগ্রির এদিক-ওদিক উঠা-নামা করে। তবে দিনের বেলা সূর্যের তেজে গা জ্বলসে যায়, চামড়া পুড়ে যায় যেন! পর্যটন নগরীর হাজারও ব্যস্ততায় নিজেদের জড়িয়ে রাখা লাখো বাঙালির মন উৎসবমুখর। একই সঙ্গে মনও খারাপ। স্বজন হারানোর বেদনায় নীল হয়ে আছেন তারা! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয়ে উৎসব, উচ্ছ্বাসে মেতে আছেন। মুগ্ধ মুশফিকুর রহিমের অবিশ্বাস্য সেঞ্চুরিতে। কিন্তু মন খারাপ তামিম ইকবালের কব্জি ভেঙে যাওয়ার খবরে। এমনতরো ইনজুরিতে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান তামিমের এশিয়া কাপ শেষ বলাই যায় এখন। যদিও আজ আল রাশেদিয়া হাসপাতালে এমআরআই করা হবে। সেখানে একজন জার্মান কনসালটেন্টের সঙ্গে আলোচনার পর বলা যাবে, কতদিনের জন্য মাঠের বাইরে দর্শক হয়ে বসে থাকতে হবে বাঁ হাতি ওপেনারকে। তামিম খেলবেন না এশিয়া কাপ। কিন্তু ভাঙা হাতে ব্যাটিং করে যেভাবে সঙ্গ দিয়েছেন ‘সেঞ্চুরি ম্যান; মুশফিককে, তাতে মন জয় করে নিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের। জয় করেছেন দুবাই প্রবাসী বাঙালিদের মনও। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম রয়েছেন দারুণ ফর্মে। গত দুই-তিন বছর ধরে তার ব্যাট যেন কথা বলছে। ব্যাট হাতে রানের নহর বইয়ে দিচ্ছেন। দুবাই এশিয়া কাপে বাংলাদেশ এবার এসেছে শুধুমাত্র অংশ নিতে নয়, প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে গোটা জাতিকে রংধনুর হাজার রঙে রাঙাতে। দুর্ভাগ্য বাঁ হাতি ওপেনারের। শুরু করেছিলেন ভালোভাবেই। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে সুরঙ্গা লাকমলের লাফিয়ে ওঠা বলে পুল খেলতে যেয়ে বাঁ কব্জিতে ব্যথা পান। সেই ব্যথায় মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে বসে ছিলেন ব্যান্ডেজ হাতে। সাজঘরে বসে দেখছিলেন মুশফিকের দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং। ইনিংসের ৪৬.৫ ওভারে মুস্তাফিজ সাজঘরে ফিরলে প্যাড, ডান হাতে গ্লাভস পরে নেমে পড়েন মুশফিককে সঙ্গ দিতে। ভাঙা হাতে এক বল খেলেনও। ইনিংসের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে মুশফিকের সাজঘরে ফেরা পর্যন্ত ১৪ বল সঙ্গ দেন এবং জুটি বেঁধে মুশফিক সংগ্রহ করেন আরও ৩২ রান। মুশফিক খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১৪৪ রানের ইনিংস। তামিমের ইনজুরি নিয়ে ম্যানেজার মাহমুদ বলেন, ‘কব্জিতে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন তামিম। আগামীকাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। তখন বুঝা যাবে কি অবস্থা তার হাতের। তবে আমি মনে করি তার পক্ষে বাকি ম্যাচগুলো খেলা সম্ভব নয়। তার রিপ্লেসম্যান আনা হবে না। যেহেতু দলটি ১৬ সদস্যের।’ ভাঙা হাতে ব্যাটিং করার বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র ব্যাটসম্যান ক্রিকেটার তামিম। অবশ্য ক্রিকেট বিশ্বে ভাঙা হাতে ব্যাটিংয়ের আরও নজির আছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক হাতে প্লাস্টার নিয়ে ব্যাটিং করেছিলেন ম্যালকম মার্শাল। বছর কয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্লাস্টার হাতে ব্যাটিং করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ। তামিম ভাঙা হাতে ব্যাট করতে নেমে জয় করেছেন বাঙালির হৃদয়। তার এই অসামান্য কৃতিত্বের জন্য অধিনায়ক মাশরাফি, ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন, ক্রিকেটাররা সবাই সাধুবাদ জানাচ্ছেন। মাশরাফি তার ফেসবুকের ভ্যারিফায়েড পেজে লিখেছেন, ‘বা হাত ভেঙেছে। কিন্তু তুমি ডান হাতে খেলে জয় করেছ লাখো বাঙালির হৃদয়। ক্রিকেট সে ফ একটি খেলা। কিন্তু কখনও কখনও তাও নয় তামিম...’। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে টাইগারদের টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘সবার অনুরোধে তামিম ভাঙা হাতে ব্যাটিং করেছে। হ্যাটস অফ তামিম।’

তামিম খেলতে পারবেন না এশিয়া কাপের বাকি ম্যাচগুলো। কিন্তু ভাঙা হাতে ব্যাট করতে নেমে জয় করে নিয়েছেন লাখো বাঙালির হৃদয়। শুধু এই ব্যাটিং তাকে অমর করে রাখবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।

সর্বশেষ খবর