মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

হাসপাতালে যান না ডাক্তাররা

অনুপস্থিত ৪০ শতাংশই, ঢাকার বাইরে ৬১। দুদকের অভিযান ১১ হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাসপাতালে যান না ডাক্তাররা

হাসপাতালে দুদকের টিম। দেখা মেলেনি চিকিৎসকের

ডিউটি রোস্টারে ডাক্তারদের নাম আছে। অথচ কর্মস্থলে তারা নেই। এটি দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র। অর্থাৎ হাসপাতালে যান না ডাক্তাররা। তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা না দিয়ে বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ব্যস্ত। ফলে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা চরম হয়রানির শিকার ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ জেলায় অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় হাসপাতালে নিয়োজিত থাকা মোট চিকিৎসকের ৪০ ভাগই অনুপস্থিত থাকেন বলে জানায় সংস্থাটি। ঢাকায় অনুপস্থিতির হার ১০ এবং ঢাকার বাইরে ৬১ শতাংশের বেশি বলে জানানো হয়। গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত একযোগে ৮ জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অভিযান চালায় দুদকের অ্যানফোর্সমেন্ট টিম। এর মধ্যে রাজধানীর তিনটি, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, কুষ্টিয়ার একটি করে এবং পাবনার দুটি হাসপাতাল রয়েছে।

অভিযান শেষে বলা হয়, ঢাকার বাইরে ৭টি হাসপাতালে চিকিৎসকের অনুপস্থিতির হার প্রায় ৬১.৮ শতাংশ। তবে একমাত্র রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সব চিকিৎসককেই উপস্থিত পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে এক কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অ্যানফোর্সমেন্ট অভিযানের সমন্বয়ক দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য সেক্টরের অবক্ষয় অত্যন্ত দুঃখজনক। মানবসেবার চেতনা না থাকলে চিকিৎসাসেবা পরিত্যাগ করা উচিত। তবে হাসপাতালে চিকিৎসকদের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে দুদক কঠোর অবস্থান নেবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে তাদের চাকরি হারাতে হবে। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সারা দেশের স্বাস্থ্য সেক্টর দুদকের নজরদারিতে থাকবে।

দুদক জানায়, তাদের অভিযোগ কেন্দ্রে (১০৬) আসা নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই হাসপাতালগুলোতে একযোগে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের হয়রানির শিকার ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায়। অনেকে সপ্তাহে দু-একদিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে পুরো মাস অনুপস্থিত থাকেন এবং মাস শেষে পুরো মাসের বেতন নিয়ে যান।  যেসব হাসপাতালে দুদকের অভিযান চালানো হয়- রাজধানীর কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতাল, মা ও শিশু সদন হাসপাতাল ও মুগদা জেনারেল হাসপাতাল। এ ছাড়া ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রংপুরের পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দিনাজপুর সদর হাসপাতাল, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পাবনার সদর জেনারেল হাসপাতাল ও আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দুদক টিমের পরিদর্শনে এসব হাসপাতালে যেসব চিত্র ফুটে ওঠে- সরকারি ১১ হাসপাতালে রোস্টার ডিউটি অনুযায়ী ২৪১ জন চিকিৎসক কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু এদের মধ্যে ৯২ জনই অনুপস্থিত ছিলেন। রাজধানীর দুটি হাসপাতালের ১১০ জন চিকিৎসকের মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন ১১ জন। আর ঢাকার বাইরে ৭ জেলায় ১৩১ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৮১ জনই ছিলেন অনুপস্থিত। তবে অভিযানকালে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সব চিকিৎসকের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও সেবা দেওয়ার নামে ঘুষ নেওয়ায় জরুরি বিভাগের আবু মুসা ভূঞা নামে এক কর্মচারী ধরা পড়ে। দুদক টিমের সুপারিশক্রমে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতাল থেকে বরখাস্ত করা হয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুদকের অভিযানে যে চিত্র পাওয়া গেছে এটা সাধারণ মানুষেরই অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। চিকিৎসকরা যে সরকারি হাসপাতালে নিয়মিত সময় দেন না, এটা সরকারের মন্ত্রীও বিভিন্ন সময় বলেছেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা তাদের ব্যবসায়িক চিন্তা থেকেই প্রাইভেট হাসপাতালে বেশি সময় দেন। তবে আরও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন আছে যে, অনুপস্থিত থাকা তাদের এক ধরনের প্রবণতা কি না? তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আয়ের সঙ্গে সম্পদের তারতম্য বেশি থাকলে দুদকও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে।

সর্বশেষ খবর