যে জীবন পিছনে ফেলে এসেছি, যেসব মানুষ জীবনের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন একদিন, তাঁদের অনেকেই এখন আর নেই, অনেকে এখনো আছেন।। জীবন বয়ে চলেছে জীবনের মতো। আমার জীবনের সবচাইতে স্মরণীয় বছর ১৯৭১। সেই বছর আমরা পেলাম আমাদের স্বাধীনতা। শত্র“মুক্ত হলো বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। আর আমি আমার বাবাকে হারালাম। পাকিস্তানিরা ঠিক গুলি করে মারল না তাঁকে, মারল একটু অন্যভাবে। বাবার বয়স তখন মাত্র ৪৪ বছর। মা ৪০ বছরের মহিলা। সংসারে আমরা দশটি ভাইবোন। দেশে চলছে মুক্তিযুদ্ধ। আমার মা দশটি ছেলেমেয়ে নিয়ে শুরু করলেন অন্য রকমের এক যুদ্ধ। বেঁচে থাকার যুদ্ধ। একদিকে চলছে দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ, অন্যদিকে এক নারীর ছোট ছোট দশটি ছেলেমেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ। এই সময়টিকে নিয়ে, এই বিষয়টিকে নিয়ে সেই মাকে কেন্দ্র করে তাঁর যুদ্ধের গল্পটা আমি এবার লেখার চেষ্টা করেছি। পুরান ঢাকার গে ারিয়ার পটভূমিতে লেখা উপন্যাসটিতে ’৬৮-৬৯ সালের দুর্বার আন্দোলন যেমন ছায়া ফেলেছে, তেমনি বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক, ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বেলিত হচ্ছে জাতি, সে কথাও এসেছে। এই পরিবারেও লেগেছিল সেই হাওয়া। মেজো ছেলেটি সেই হাওয়ায় উড়ছিল। তার আগে ভদ্রলোকের চাকরি ছিল না। পরিবারটি যাচ্ছিল ভয়ঙ্কর এক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে। কত মানুষের কথা মনে পড়েছে এই উপন্যাস লিখতে গিয়ে। কত ছোট ছোট ঘটনার কথা মনে পড়েছে। আমি সে বছর এসএসসির ক্যান্ডিডেট ছিলাম। পাকিস্তানিদের নেওয়া পরীক্ষা দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। স্বাস্থ্য খারাপের কারণে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া হয়নি। আমার বন্ধু মোহাম্মদ আলী মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানিদের নেওয়া এসএসসি পরীক্ষার সেন্টারে মোহাম্মদ আলী গিয়ে গ্রেনেড মেরে এলো। একজন কাবলিঅলা এবং তিনজন মিলিশিয়া অন্যরকমের এক চাপ দিয়ে মেরে ফেলল আমার বাবাকে। বড় ভাই ইন্টারমিডিয়েট পড়ে। ছোট একটা চাকরি করে টঙ্গিতে গিয়ে। পাশে আর্মি ক্যাম্প। সেই ক্যাম্পের ম্যাপ এঁকে দিল মুক্তিযোদ্ধাদের। ক্যাম্প উড়িয়ে দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। ঘরে-বাইরে দুই রকম যুদ্ধের কাল। দৃঢ়চেতা মা সবকিছুর পরও ছেলেদের উৎসাহিত করছেন, দেশের জন্য কিছু কর। আমি অসহায়ভাবে ছটফট করি। করা হয় না কিছুই। কত মানুষের চেহারা দেখি শয়তানের মতো। যাদের আগে মনে হতো খুব ভালো মানুষ। আবার কঠোর কঠিন বাইরে থেকে নির্দয় মনে হওয়া মানুষকে দেখি তিনি আসলে ফেরেশতা। একাত্তরের নয়টি মাস ও তার আগের অনেকগুলো বছরের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং একটি পরিবার ঘিরে অনেক মানুষের কথা লিখেছি। এই লেখা লিখতে গিয়ে মনে হয়েছে ’৬৮-৬৯ এর কত ঐতিহাসিক ঘটনা আমি চোখের সামনে দেখেছি। যেমন আসাদ যেদিন শহীদ হলেন, মতিয়ুর যেদিন শহীদ হলেন, সেই মিছিলে আমিও ছিলাম। বানরের মতো মুখ নিয়ে গে ারিয়ার বন্যার্ত এলাকা দেখতে এসেছিল ইয়াহিয়া খান। কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে সেই লোকটাকে দেখেছি। এসবই লেখার চেষ্টা করেছি উপন্যাসটিতে। ‘অনন্যা প্রকাশনী’ বইটা বের করেছে। লেখার সময় চলে যেতাম একটা ঘোরের মধ্যে। বর্তমান সময়টাতে আমি আর থাকতামই না। ঘুরে বেড়াতাম একাত্তর সালে। লেখা থেকে মুখ তুলে দেখতাম আমার মা তাঁর বিষণœ দুঃখী মুখটি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। সেই যুদ্ধ করা মায়ের মুখ সারাক্ষণই আমার সঙ্গে। অসহায় বাবার মুখটা দেখতে পেতাম। আর দেখতে পেতাম নিজেকে। একটা পনেরো-ষোলো বছরের রোগা ছেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে গেন্ডারিয়ার এ-রাস্তায় ও-রাস্তায়। কত পিছনে ফেলে এসেছি সেই জীবন। তারপরও আমি যেন আছি সেই জীবনের ভিতরেই।
শিরোনাম
- এসএসসিতে ফেল : বরিশালে পাঁচ ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা, দুইজনের মৃত্যু
- এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস না পেয়ে বগুড়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
- টানা বৃষ্টির প্রভাব রাজধানীর বাজারে
- এসএসসিতে অকৃতকার্য হওয়ায় গেন্ডারিয়ায় শিক্ষার্থীর 'আত্মহত্যা'
- সেই আলফি পাস করেছে
- এনবিআরের প্রথম সচিব তানজিনা বরখাস্ত
- ফ্যাসিবাদবিরোধীদের ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান মামুনুল হকের
- দুদকের মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত গ্রেফতার
- মাকে মারধর করায় যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল স্বজনরা
- ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগে জেলেনস্কির আহ্বান
- আবারও ইসরায়েলি বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হুথিদের
- কুয়ালালামপুরে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিরল বৈঠক
- লঙ্কানদের ১৫৫ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল টাইগাররা
- ট্রাম্পের লবিস্টদের লাখ লাখ ডলার দিচ্ছে দরিদ্র দেশগুলো
- নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সহযোগিতার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
- জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সম্প্রচার-ব্যবস্থা যুগোপযোগী করা হবে : তথ্য উপদেষ্টা
- ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলি বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
- কারাগারে একক সেলে নেওয়া হলো সাবেক আইজিপি মামুনকে
- উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক : প্রধান উপদেষ্টা
- নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধনের নির্দেশনা বাতিল