রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

জামায়াতে অস্থিরতা অব্যাহত

সাবেক শিবির সভাপতিকে বহিষ্কার রাজ্জাককে নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জামায়াতে ইসলামীতে অস্থিরতা চরমে। একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া-না চাওয়া, জোটপ্রধান বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা-না রাখা, নতুন দল গঠন প্রভৃতি নিয়ে দলটিতে চলছে নানা আলোচনা- সমালোচনা।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক শুক্রবার দল থেকে পদত্যাগ করার পরপরই দলে সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ঢাকা মহানগর জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য মজিবুর রহমান মঞ্জুকে বহিষ্কার করা হয়। গতকাল দুপুরে মঞ্জু নিজেই তার ফেসবুকে এ তথ্য জানিয়ে লিখেন, ‘শুক্রবার, আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদের পক্ষ থেকে নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য আমাকে জানান যে, আমার দলীয় সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে।’

এদিকে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক কেন দল থেকে পদত্যাগ করলেন এ নিয়ে দলে চলছে বিশ্লেষণ। তিনি নতুন কোনো দল গঠন করেন কি-না তা নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বলেন, নতুন দল গঠনসহ নানা প্রস্তাব রয়েছে। জামায়াত একটি বড় দল। দলের বিভিন্ন স্তর থেকে নানা রকমের প্রস্তাব আসে। কেন্দ্রীয় নেতারা বিচার-বিশ্নেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। নতুন দল হবে কি-না, তার নেতৃত্বে কারা থাকবেন, প্রয়োজন হলে এ সিদ্ধান্ত  নেওয়া হতে পারে। সংস্কারপন্থি অংশের এক নেতা বলেন, এমন হতে পারে আবদুর রাজ্জাক ব্যক্তিস্বার্থেও পদত্যাগ করতে পারেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের রোষানলে। লন্ডনে থাকা ব্যারিস্টার রাজ্জাক দেশে ফিরলে গ্রেফতার হতে পারেন। তার বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করছে সরকার। এমনও হতে পারে আবদুর রাজ্জাক সরকারের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতায় গেছেন। এমনটি হলে তার নেতৃত্বে নতুন সংগঠন করা সম্ভব কি-না তা ভেবে দেখা হবে।

জানা যায়, রাজ্জাকের পদত্যাগের নানা দিক নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। এমনকি সংস্কারপন্থিরাও। রাজ্জাকের পদত্যাগের ঘটনায় চরম হতাশ, হতভম্ব ও বিস্মিত নেতারা। একাত্তরে দলের ভূমিকা, যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিরোধ চলছিল ব্যারিস্টার রাজ্জাকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের কর্মপরিষদের কয়েকজন সদস্য বলেন, আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগে দলের সংস্কারপন্থি ও সংস্কারবিরোধী নেতৃত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিভাজন স্পষ্ট হলো। যে কোনো সময় রাজ্জাকের অনুসারী অংশটির নেতৃত্বে নতুন সংগঠনের জন্ম নিতে পারে। একাত্তরে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই অংশ বহুদিন ধরেই দল থেকে বেরিয়ে নতুন সংগঠন করার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু দলের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্ব, বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া মতিউর রহমান নিজামীর অনুসারী অংশটির বাধার মুখে পেরে উঠছেন না তারা। সংস্কারপন্থি অংশের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব মনে করছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ঘিরে ও তৃতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থানে থেকে দলের পক্ষে রাজনীতি করা সম্ভব নয়। অংশটি চাইছে একাত্তরের কৃতকর্মের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসে উদারভাবে রাজনীতি করতে। কিন্তু দলের যুদ্ধাপরাধী নেতা ও তাদের অনুসারীদের বাধার মুখে তা হয়ে উঠছে না। তাই বাধ্য হয়ে এই অংশ শেষ পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাকসহ দলের একটি অংশের দ্বারস্থ হয়।

আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগের কারণে দল ভেঙে যাচ্ছে কি-না জানতে চাইলে এক কর্মপরিষদ সদস্য বলেন, আমরা চাই বর্তমান কাঠামো ঠিক রেখে নতুন নামে নতুন সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বৈঠকে এমনই আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

মঞ্জু বহিষ্কার : মঞ্জুকে বহিষ্কার নিয়ে জামায়াতে ইসলামী গণমাধ্যমে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। তবে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, মজিবুর রহমান মঞ্জুকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন মজিবুর রহমান মঞ্জু। স্ট্যাটাসে মঞ্জু বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে সংগঠনের কিছু বিষয়ে আমি দ্বিমত করে আসছিলাম। মৌখিক ও লিখিতভাবে  বৈঠকে আমি প্রায়ই আমার দ্বিমত ও পরামর্শের কথা দায়িত্বশীলদের জানিয়েছি।

সর্বশেষ খবর