বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
রহস্যঘেরা বিমান ছিনতাই চেষ্টা

২২ মাসে ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ পলাশের

সাখাওয়াত কাওসার

২২ মাসে ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ পলাশের

২২ মাসে ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছিলেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-১৪৭ ফ্লাইট ছিনতাই চেষ্টাকারী সেই রহস্যমানব মাহাদী ওরফে মাহিবী ওরফে পলাশ আহমেদ। এ সময়ের মধ্যেই তিনি দুবাই ও মালয়েশিয়াসহ ভারত, নেপাল ও ভুটান ভ্রমণ করেছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই তিনি দুই-তিন দিনের বেশি এসব দেশে অবস্থান করেননি। এ কারণে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, পলাশ চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারেন। তার আয়ের উৎস ও অন্যান্য বিষয়েও খোঁজখবর করছেন তারা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। পলাশ নামে ওই যুবক কেন বিমানে অস্বাভাবিক আচরণ করেছিলেন এবং এর নেপথ্যে কেউ আছে কি না তা আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে এখন পর্যন্ত বলার মতো তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।’ পলাশের ব্যক্তিগত সব বিষয়ই খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল তার নামে একটি এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। তার পাসপোর্ট নম্বর বিএন ০৯৫০৮৮২। এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে পলাশ সর্বশেষ গত বছরের ২৬ নভেম্বর ভারতে গিয়ে ২৮ নভেম্বর আবার ফিরে আসেন। এর আগে গত বছর ১৯ আগস্ট একবার বিমানপথে ভারতে গিয়ে ২১ আগস্ট বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে সড়কপথে দেশে ফিরে আসেন। ২০১৮ সালের ২ জুন পলাশ একবার ভারতে গিয়েছিলেন। ৯ জুন আবার তিনি দেশে ফিরে আসেন। ওই বছরেরই ১৭ মার্চ ভারতে গিয়ে ২০ মার্চ ফিরে আসেন পলাশ। আর ওই মাসেই তিনি একবার ভুটান ভ্রমণ করেন। ভুটানে তিনি ১০ মার্চ প্রবেশ করে ১২ মার্চ দেশে ফিরে আসেন। এ ছাড়া গত বছরের শুরুতেই ১৮ জানুয়ারি নেপালে যান তিনি। ২৫ জানুয়ারি নেপাল থেকে দেশে ফেরেন পলাশ।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১১ মে পলাশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতের রাজধানী দুবাই যান। ১৭ মে তিনি আবার ফিরে আসেন। এর আগে ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল তিনি মালয়েশিয়া ভ্রমণের জন্য এক মাসের একটি ভিসা সংগ্রহ করেন। পরে ২ মে পলাশ মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রায় দুই মাস অবস্থান করার পর ৫ জুলাই দেশে ফিরে আসেন। সূত্র জানায়, পলাশ তার নতুন পাসপোর্ট দিয়ে গত ২২ মাসে পাঁচবার ভারত, দুবার নেপাল এবং একবার করে ভুটান, মালোয়শিয়া ও দুবাই ভ্রমণ করেন। এই পাসপোর্ট ছাড়াও তার আগের একটি পাসপোর্ট রয়েছে। ওই পাসপোর্ট নম্বর ৭৯৫৫৫৩০। ধারণা করা হচ্ছে, আগের পাসপোর্ট দিয়েও তিনি একাধিক দেশ ভ্রমণ করে থাকতে পারেন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পলাশের ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিনি বেশির ভাগ সময়ই কোনো দেশে গিয়ে দুই-তিন দিনের মধ্যে ফিরে এসেছেন। সাধারণত চোরাকারবারিরা এ রকম দুই-তিন দিন অবস্থান করে অবৈধ জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করে। সে ক্ষেত্রে পলাশ বড় কোনো চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের সদস্য হয়ে কাজ করতেন কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, পলাশের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও আয়ের উৎসগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুদি দোকানদারের ছেলে হয়ে তিনি বিলাসবহুল জীবন কীভাবে যাপন করতেন এবং কীভাবে তিনি ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেছেন তা জানার চেষ্টা চলছে। এ জন্য তার বন্ধু-স্বজন এবং সাবেক স্ত্রী চিত্রনায়িকা সিমলাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

 

সর্বশেষ খবর