একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তোপের মুখে পড়েন দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। গতকাল জাপার বনানী কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়। সভায় সারা দেশ থেকে আসা এমপি প্রার্থীরা গত নির্বাচনে সম্মানজনক আসন না পাওয়া, অর্থের বিনিময়ে পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ তোলেন। নির্বাচনের প্রায় দুই মাস পর এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশগ্রহণকারী একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য দেন। সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ১৭২ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৫৮ জন। সভা থেকে বের হয়ে উপস্থিত প্রার্থীরাও এ স্বল্পসংখ্যক উপস্থিতিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে সভা চললেও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা না করায় প্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অংশ নেওয়া প্রার্থীরা জি এম কাদের ও মশিউর রহমান রাঙ্গার ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, বিগত নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে কোনো ধরনের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়নি। এমনকি দলটির নেতৃত্বে থাকা নেতারা পার্টির প্রার্থীদের ফোন রিসিভ করারও প্রয়োজন মনে করেননি। কিছু কিছু বক্তা মহাজোটে কম আসন পাওয়ার জন্য দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে দায়ী করেন। পঞ্চগড়-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আবু সালেহ বলেন, বিগত নির্বাচনে দলের শীর্ষনেতারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এ অবস্থায় হয়তো আমি এ পার্টি আর করব না। মানিকগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জহিরুল আলম রুবেল বলেন, প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই নেতৃত্ব নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এসব ষড়যন্ত্রের কারণেই তৃণমূল ধ্বংস হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল পার্টির মহাসচিব রাঙ্গাকে উদ্দেশ করে বলেন, মহাজোটে আমাদের ৪৫টি আসন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনি মহাসচিব হওয়ার পর এ আসন ২০ থেকে ২৫টিতে নেমে এসেছে। এ সময় রাঙ্গা বলেন, আমি কিছু জানি না। আমি মহাসচিব হওয়ার আগেই তা ঠিক করা হয়। টাঙ্গাইল মির্জাপুর থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, মনোনয়ন ও পদবাণিজ্যে আমরা আজ দিশেহারা। সামাজিক মর্যাদা ও দলে কোনো রকমের অবদান না থাকলেও টাকার বিনিময়ে নমিনেশন ও বড় পদ দেওয়া হয়। এ ধারা থেকে বের হওয়ার নিশ্চয়তা না পেলে আগামীতে রাজনীতি থেকে আমরা সরে দাঁড়াব। সাতক্ষীরা থেকে আবু মতলুব লিয়ন উপস্থিত প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কোমর সোজা করে দাঁড়ান। ভয় পেলে চলবে না। সব অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। তখন জিএম কাদের তাকে বলেন, তুমি তোমার কথা বল। জবাবে লিয়ন বলেন, আমার কথা যদি পছন্দ না হয় তাহলে বলেন পার্টি ছেড়ে চলে যাই।
জাপার যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু বলেন, আমাদের নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে আবার প্রত্যাহার করানো হলো। নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে ফরম বিক্রয় ও পার্টির চাঁদা বাবদ ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা আয় হয়েছে। সেখান থেকেও আমরা যারা পার্টির ত্যাগী নেতারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি তাদের কিছু কিছু করে টাকা দিতে পারত। সভার শেষ পর্যায়ে জিএম কাদের বলেন, সবার মাঝেই কিছু রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে। আগামীতে সবাইকে নিয়ে দল গুছিয়ে পার্টিকে ক্ষমতায় নিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। সভায় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।