রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিকে ছুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

১১ দিনের অচলাবস্থার পর আজ শুরু হচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষা কার্যক্রম। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল ও ডাইনিং খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থানের কারণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হককে ছুটিতে যাওয়ার পাশাপাশি তাকে আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করতে না দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করার কথা জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। এদিকে আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মহিউদ্দিন আহমেদ শিফাত বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগ কিংবা তাকে ছুটিতে পাঠানোর লিখিত প্রমাণ ছাড়া আন্দোলন প্রত্যাহার করতে অসম্মতি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

দীর্ঘ ১১ দিনের অচলাবস্থা নিরসনে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল সার্কিট হাউসের সভাকক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা সভার আয়োজন করে বিভাগীয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের ২৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ সদস্যের শিক্ষক প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের নেতাদের উপস্থিতিতে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষ হয় বিকাল ৪টায়। বৈঠক শেষে শিক্ষার্থী শিফাত উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তারা এত দিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অভিভাবকসুলভ আচরণ পাননি। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তাদের সেই অভিভাবকশূন্যতা পূরণ হয়েছে। বৈঠকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনড় থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ উপাচার্যকে আর বরিশালে দায়িত্ব পালন না করতে দেওয়ার বিষয়ে একমত হন বৈঠকে উপস্থিত সবাই। শিক্ষার্থীরা এখনো আন্দোলনে আছেন কি না- এমন প্রশ্নে শিক্ষার্থী নেতা শিফাত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছেন। এ সময় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে না হলেও কিছু দাবির সঙ্গে তারা একমত পোষণ করেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী এই উপাচার্যকে ছুটিতে পাঠানো কিংবা তাকে আর দায়িত্ব পালন করতে না দেওয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়কে অবহিত করবেন বলে জানান। একই সঙ্গে বিকালেই (গতকাল) সব আবাসিক হল ও ডাইনিং খুলে দেওয়া ছাড়াও আজ রবিবার থেকে সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও শিক্ষক ড. হাসিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৌখিকভাবে আজ (গতকাল) বিকাল থেকে সব আবাসিক হল ও ডাইনিং চালুর জন্য বলা হয়েছে। বিকালে তিনি এ বিষয়ে নোটিস জারি করবেন। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামীকাল (আজ) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হবে।’

এদিকে সমঝোতা বৈঠক শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পর বিকাল ৫টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম নেতা অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর বর্ষের ছাত্র জহিরুল ইসলাম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে উপাচার্যকে ছুটিতে পাঠানো কিংবা তার পদত্যাগের লিখিত প্রমাণ হাতে পাওয়া ছাড়া শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্যাম্পাসও খুলতে দেবেন না।

সন্ধ্যা ৬টায় বরিশাল প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ শিফাতও একই বক্তব্য দেন। তাদের আন্দোলনে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি। আন্দোলনের ফলে শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি হচ্ছে স্বীকার করে শিফাত বলেন, এই উপাচার্য ফের ক্যাম্পাসে এলে তারা বরং আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন। এ ছাড়া ফের কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস পাবেন না। তাই তারা উপাচার্যের পদত্যাগ কিংবা ছুটি নেওয়ার লিখিত প্রমাণ ছাড়া আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান। সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদ করলে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের কটূক্তি করেন। এই কটূক্তির প্রতিবাদ ও তা প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবিতে ২৭ মার্চ থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন প্রশমিত করতে ২৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে ওই দিন বিকালের মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন উপাচার্য। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৮ মার্চ থেকে ১০ দফা বাদ দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে ২৯ মার্চ উপাচার্য তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এতে সন্তুষ্ট না হয়ে তার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

সর্বশেষ খবর