শিরোনাম
সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও ক্লাস হয়নি আন্দোলন অব্যাহত

প্রতিদিন ডেস্ক

দীর্ঘ ১১ দিনের অচলাবস্থার পর বিভাগীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সমঝোতা সভায় গতকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও ক্লাস কিংবা পরীক্ষায় অংশ নেননি শিক্ষার্থীরা। তারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে তার অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গতকালও ছিল উত্তপ্ত। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর- বরিশাল : গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক নোটিসে গতকাল থেকে সব আবাসিক হল ও ডাইনিং চালুর পাশাপাশি ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেওয়া হলেও বাস্তবে তা শুধু নোটিসেই থেকে গেছে। গতকাল ১২তম দিনেও শিক্ষার্থীরা সব প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে থেমে থেমে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেছেন। কাগজে-কলমে ক্যাম্পাস খুললেও বিভিন্ন গেটে তালা ঝুলানো থাকায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে প্রবেশ করতে না পেরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বাড়ি ফিরে যান। এর আগে আন্দোলনের ১১তম দিনে গত শনিবার বরিশাল সার্কিট হাউসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চার ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন সদর আসনের এমপি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ নেতা ও শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হককে আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে উপাচার্যকে ছুটি দিয়ে কিংবা পদত্যাগ করিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওইদিন রাতেই গতকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নোটিস জারি করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যায় বরিশাল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ কিংবা তাকে ছুটিতে পাঠানোর প্রমাণপত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে সব প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে নানা স্লোগান দেন। ফাঁকে ফাঁকে তারা বিভিন্ন সংগীত পরিবেশন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সুব্রত কুমার জানান, ঘোষণা থাকলেও গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং প্রশাসনিক কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এদিকে উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হক জানিয়েছেন, তিনি কারও চাপের মুখে পদত্যাগ কিংবা ছুটিতে যাবেন না। তিনি বলেন, আমাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন চ্যান্সেলর (রাষ্ট্রপতি)। চ্যান্সেলর যদি মনে করেন আমার পদত্যাগ কিংবা ছুটিতে যাওয়া প্রয়োজন- তা হলেই আমি সেই আদেশ মানতে বাধ্য। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই পদোন্নতিসহ ১২ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে পৃথক মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীরা। গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে তার অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন উত্তপ্ত। শিক্ষার্থীরা গতকাল সকালে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। ছাত্রীদের যৌন হয়রানির বিষয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টির ব্যাপারে মৌখিকভাবে জেনেছেন। তারা ওই শিক্ষককে বেশ কিছু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানালেও এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেছেন, তাকে শিক্ষক পলিটিকসের শিকার হতে হয়েছে। গোপালগঞ্জ শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এখানে ৩৩ বিভাগ ও তিনটি ইনিস্টিটিউটে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মো. আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে দুই ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন ডিসেম্বরে। তারা এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হয় বলে দুই ছাত্রী অভিযোগ করেন। অতিসম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরলে বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় উঠে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এ বিষয়টি এখন বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলার সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। যৌন নির্যাতনের শিকার দুই ছাত্রী ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরাও এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। গতকাল তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী শিক্ষকের শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন বলে সমাবেশে ঘোষণা দেন। গোপালগঞ্জ জেলা সুজন সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, শিক্ষক আক্কাস আলী ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করে যে অপরাধ করেছেন, এর জন্য অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান জানান, শিক্ষক আক্কাস আলী সম্পর্কে যে কথা শোনা যাচ্ছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। বিষয়টি শুধু শিক্ষকসমাজ নয়, গোটা জাতির জন্যও কলঙ্কজনক। অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আক্কাস আলী জানিয়েছেন, তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিকসের শিকার হতে হয়েছে। একই বিভাগের অন্য শিক্ষকের সঙ্গে বিভাগীয় প্রধান হওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলে আসছিল। এরই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তাকে শিক্ষার্থী দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন আবদুল কুদ্দুছ মিয়া জানান, ইতিমধ্যে অধ্যাপক ড. আবদুর রহিমকে প্রধান করে এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিলেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর