মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা করছে বিএনপি

সামনে কেন্দ্রীয় কমিটি ও অঙ্গসংগঠনে ঠাঁই মিলবে না প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে

মাহমুদ আজহার

দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। সাংগঠনিক পুনর্গঠন সামনে রেখে এই তালিকা তৈরি করছে বিএনপি। এ নিয়ে জেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরই মধ্যে অন্তত ৬২ জেলার নেতাদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডেকে এনে জেলা পর্যায়ে কারা কারা নিষ্ক্রিয় তাদের তালিকা করতে দিকনির্দেশনা দেন তিনি। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন ও থানা পর্যায়ের কমিটি গঠনের তাগিদও দেওয়া হচ্ছে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ পদগুলোতে বিগত সময় আন্দোলন-সংগ্রামসহ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যারা অগ্রগামী ছিলেন তাদেরই দলে গুরুত্ব দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ইউনিয়ন, উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটি করার দিকনির্দেশনা দিচ্ছে কেন্দ্র। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, কেন্দ্রীয়ভাবে গোপনীয়তার সঙ্গে নিষ্ক্রিয় নেতাদেরও পৃথক তালিকা তৈরি করছে বিএনপির হাইকমান্ড। বেগম জিয়া মুক্তি পেলে পরবর্তী কাউন্সিলের মাধ্যমে দল পুনর্গঠনে নিষ্ক্রিয় নেতাদের পেছনের সারিতে রাখা হবে। একইভাবে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ পদেও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন মূলত সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে। মাঠপর্যায়ে কোথায় কমিটি নেই, কোথায় মেয়াদোত্তীর্ণ- এগুলো চিহ্নিত করে কমিটি গঠনের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে চলমান রাজনীতি, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের বিষয়ে কথাবার্তা তো আসবেই।’ সূত্রে জানা যায়, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে স্কাইপিতে জেলা নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কথা বলছেন তারেক রহমান। এর মধ্যে ৬২ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। মতবিনিময়ে তৃণমূল নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ওপরও জোর দেন। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের সব পর্যায়ের কাউন্সিলে নির্বাচিত হওয়া নেতাদের মাধ্যমে কমিটি গঠনেরও অনুরোধ জানান তারা। একইভাবে বিএনপির হাইকমান্ড থেকেও বেশ কিছু বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত রাখতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ, বিগত আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন থেকে থানা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের কমিটি গঠন। এসব নির্দেশনা পেয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন তৃণমূল নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কারাবন্দী বেগম জিয়াকে মুক্ত করতেই আমরা এখন দল গোছানোর উদ্যোগ নিয়েছি। মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটি হচ্ছে। দল গুছিয়ে আমাদের বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে রাজপথে নামতে হবে।’ জানা যায়, বিএনপি সাংগঠনিক জেলা ৮২টি। এর মধ্যে ৬২ জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারেক রহমান। বাকি ২০টি জেলার নেতাদের সঙ্গেও ধারাবাহিকভাবে কথা বলবেন তিনি। আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে মহানগর ছাড়া বাকি সবগুলো সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে বৈঠক শেষ হবে। এসব মতবিনিময় সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অংশ নিচ্ছেন। স্কাইপির মাধ্যমে যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বৈঠকে প্রত্যেক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ‘সুপার ফাইভ’ অথবা ‘সুপার সেভেন’ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা অংশ নেন। এরপর ঢাকাসহ সব মহানগর কমিটির নেতাদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ পর্যন্ত ৬২ সাংগঠনিক জেলা শাখার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। সেখানে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় এরই মধ্যে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, তাঁতী দল, ওলামা দল, ড্যাব ও অ্যাবের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিগগিরই মেয়াদোত্তীর্ণ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি দেওয়া হবে। এ ছাড়া যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অসম্পূর্ণ কমিটিও পূর্ণাঙ্গ করা হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বেগম জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো গোছানোর বিকল্প নেই। বিএনপি এখন সেই পথেই হাঁটছে। দলকে গুছিয়ে আমরা রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্ত করব।’ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুল বলেন, ‘শুধু আমরাই নই, তৃণমূল নেতা-কর্মীরা চান বেগম জিয়ার মুক্তিতে দুর্বার আন্দোলন। কিন্তু আন্দোলনের আগে দলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামনে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সব কমিটিই হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে। আইনি প্রক্রিয়ায় ম্যাডামের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই রাজপথই আমাদের বেছে নিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর