বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

গ্রেফতার আরও দুই কাজ শুরু উচ্চ পর্যায়ের কমিটির

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা ও ফেনী প্রতিনিধি

গ্রেফতার আরও দুই কাজ শুরু উচ্চ পর্যায়ের কমিটির

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে হাফেজ আবদুল কাদের (২৫) ও মোহাম্মদ শরিফ (২২) নামের দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে শরিফকে এবং ফেনী থেকে কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই। পুলিশ বলছে, কারাগারে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে ৩ এপ্রিল দেখা করার সময় এই দুজন উপস্থিত ছিলেন। পরে ৬ এপ্রিল পশ্চিম হোস্টেলের বিশেষ পরিকল্পনা বৈঠকেও এই দুজন উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে কাজ শুরু করেছে পুলিশ সদর দফতরের উচ্চপর্যায়ের কমিটি। তবে ওসির ওপর এসপির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল না এমনটাই নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কামরুন নাহার মনিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতার মোহাম্মদ শামীম। জানা গেছে, গতকাল থেকেই কাজ শুরু করেছে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি রুহুল আমিনের নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের কমিটি। গতকাল বিকালে কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। কথা বলেন মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারীর সঙ্গে। পরে তারা নিহত নুসরাতের বাড়িতে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান। গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে ডিআইজি রুহুল আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করেছি। তবে এখনই বলার মতো কোনো অগ্রগতি হয়নি। সময়মতো বিষয়টি আপনাদের জানানো হবে।’ সূত্র বলছে, সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বক্তব্যের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতার কারণেই ফেঁসে যাচ্ছেন ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম সরকার। প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় পরিচয় দেওয়ায় খোদ এসপিই বিশেষ গুরুত্ব দিতেন ওসিকে। এ কারণে অনেক সময় এসপির সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেন ওসি মোয়াজ্জেম। নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টাকে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে শুরু থেকেই ওসি মোয়াজ্জেম জানিয়ে আসছিলেন এসপি জাহাঙ্গীরকে। এসপিকে দফায় দফায় তিনি বলেছেন, নুসরাতের লোকজন থানার পুলিশকে তাদের মতো করে মামলা নিতে শাসাচ্ছে। তাদের মতো কাজ না করলে তারা পুলিশকে দেখে নেবে। গ্রেফতার শরিফ ও হাফেজ কাদেরের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারাগারের সাক্ষাৎকক্ষেই পরিকল্পনার শুরু। সেখানে অধ্যক্ষ সিরাজ বলেছিলেন, সব পরিস্থিতিতে সহায়তা করবেন আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন। মামলা প্রত্যাহার না করলে প্রয়োজনে নুসরাতকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে।পাঁচ দিনের রিমান্ডে মনি : নুসরাতের সহপাঠী ও কিলিং মিশনের পাঁচজনের একজন কামরুন নাহার মনির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। আদালত পুলিশের পরিদর্শক (কোর্ট ইন্সপেক্টর) গোলাম জিলানি জানান, গতকাল দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে কামরুন নাহার মনিকে হাজির করা হয়। এ সময় পিবিআই কর্মকর্তা আসামি মনির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এদিকে আবদুর রহিম শরীফকে দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে তোলা হলে আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। মানববন্ধন : গতকাল সকালে ফেনী ও সোনাগাজীতে একাধিক সংগঠন মানববন্ধন করেছে। সকালে ফেনী শহরের শান্তি নিকেতন এলাকায় সিটি গার্লস, সেন্ট্রাল পাবলিক, শান্তি নিকেতন প্রি-ক্যাডেট ইনস্টিটিউটসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট : নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা, নারায়ণগঞ্জের ত্বকী, কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু এবং পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার অগ্রগতিও আদালতকে জানানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে এই রিটে। গতকাল হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের আইজি ও সোনাগাজীর ওসিসহ মোট পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়েছে।

 ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, রিট আবেদনটি বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে।

৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিম শ্রেণির আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে মাদ্রাসায় দুর্বৃত্তরা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচ দিন পর ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান। পরদিন ১১ এপ্রিল বিকালে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামি করে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান মামলা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর