মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

শোকের ছায়া, কঠোর নিরাপত্তা বাংলাদেশে

শ্রীলঙ্কার মতো হামলার ঝুঁকি নেই : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনার পর রাজধানীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকার কূটনৈতিকপাড়া, সব অভিজাত হোটেলসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জোরদার করা হয়েছে নি-িদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে দেশের সব কটি মহানগর পুলিশ, রেঞ্জ ও জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে পাঠানো হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতর থেকে আটটি ক্রাইম বিভাগ, কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। যদিও শ্রীলঙ্কার মতো এ দেশে কোনো ধরনের হামলার হুমকি নেই বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। অন্যদিকে, সাবেক মন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি শিশু জায়ান চৌধুরীর মৃত্যু ও জামাতা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স গুরুতর আহত হওয়ায় গকতাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ আওয়ামী লীগ ও সরকারের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেখ সেলিমের বাসায় গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। গত রবিবার সন্ধ্যা ৭টা। তেজগাঁও গির্জার গলির সামনে একটি পুলিশের গাড়ি। এলাকায় অনেকটা সুনসান নীরবতা। কিছু রিকশা চলছে। শবেবরাতের নামাজ পড়ে বিভিন্ন বয়সী লোকজন ঘোরাঘুরি করলেও তাদের অনেককেই তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করছিল পুলিশ। অনেকটা একই অবস্থা ছিল কাকরাইলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার গির্জার আশপাশে। এসব এলাকায় সন্দেহভাজনদের দেখামাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অনেকটা একই ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর তেজগাঁও, গুলশান, বনানী, মতিঝিল, রমনা ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মোড়ে মোড়ে পুলিশের টহল টিমের পাশাপাশি চেকপোস্ট রয়েছে। সেখানে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি চলছিল। সেই সঙ্গে যে কোনো অপ্র্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে একসঙ্গে অনেক লোককে এক জায়গায় জড়ো হতে দেয়নি পুলিশ। বন্ধ ছিল ফুটপাথের চায়ের দোকান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ছিল বাড়তি নিরাপত্তা প্রস্তুতি। গির্জাসহ অন্যান্য উপাসনালয়েও ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সজাগ উপস্থিতি। পোশাকে ও সাদা পোশাকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় দায়িত্ব পালন করছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো হামলার কোনো হুমকি নেই। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সর্বাত্মক সচেষ্ট আছে, সতর্ক আছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে সে রকম তথ্য আমাদের কাছে নেই। গতকাল রাজধানীর বানানীতে আওয়ামী লীগের সভাপতিম লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বাসায় গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, শ্রীলঙ্কায় নিহত বাংলাদেশিদের সংখ্যা মঙ্গলবার জানা যাবে। কারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত এবং কেন এ হামলা- এসব তদন্তের পর শ্রীলঙ্কা সরকার বাংলাদেশকে জানাবে। এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের ওপর আমাদের জোর দেওয়া উচিত। যাতে যেখানেই যে ইনফরমেশন পাওয়া যাবে তা শেয়ার করলে হয়তো কিছুটা প্রটেকশন দেওয়া যেতে পারে। আর যে ঘটনা ঘটেছে আমি মনে করি শ্রীলঙ্কা সরকার তা যথার্থভাবেই চিহ্নিত করতে পারবে, চিহ্নিত করার পর তারা আমাদের জানাবে যে কী হয়েছিল। পুলিশ ও র‌্যাব সদর দফতর সূত্র জানিয়েছেন, গত রবিবার ইস্টার সানডে প্রার্থনার সময় শ্রীলঙ্কায় গির্জা আর পাঁচতারা হোটেলে একযোগে বোমা হামলার ঘটনার পর দেশের সব গির্জাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিশেষ করে শবেবরাত-কেন্দ্রিক যে উৎসব চলে সেখানেও যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে বিশেষ খেয়াল ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, শ্রীলঙ্কার ঘটনার পরপরই দেশের সব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। কেউ যাতে নাশকতামূলক কর্মকা  চালাতে না পারে সেদিকে তাদের নজরদারি রয়েছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, শ্রীলঙ্কায় নারকীয় হামলার পরপরই আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে এ ধরনের হামলা করার মতো জঙ্গিদের সেই সক্ষমতা নেই। তার পরও র‌্যাবের প্রত্যেক সদস্যকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো র‌্যাবের সক্ষমতা রয়েছে। প্রসঙ্গত, রবিবার শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির নাতি শিশু শেখ জায়ান চৌধুরী নিহত হয়। জায়ান শেখ সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়ার ছেলে। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স। তারা সেখানে বেড়াতে যান। একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ছিলেন তারা। বোমা বিস্ফোরণের আগে ছেলে জায়ানকে নিয়ে ওই হোটেলের নিচতলায় নাস্তা করছিলেন মশিউল।

সর্বশেষ খবর