বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

দল গোছানোর মিশনে বিএনপি

শক্তি সঞ্চয় করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত, সাংগঠনিক ৬২ জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে স্কাইপিতে কথা বলেছেন তারেক রহমান, প্রতি শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক

মাহমুদ আজহার

দল গোছানোর মিশনে বিএনপি

বিএনপি এখন দল গোছানোর মিশনে। শক্তি সঞ্চয় করেই দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে মাঠে নামতে চায় দলটি। এর আগে দলের জেলা পর্যায়ের কমিটি ও সব অঙ্গ সহযোগী সংগঠন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দলের ৬২টি সাংগঠনিক জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাকি দশ মহানগর ও কয়েকটি জেলার সঙ্গেও শিগরিই স্কাইপিতে কথা বলবেন তিনি। তৃণমূল নেতাদের সাংগঠনিক দিক নির্দেশনার পাশাপাশি তার মা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতেও আহ্বান জানানো হয়েছে। সামগ্রিক বিষয় তদারকি করতে সপ্তাহে একদিন (প্রতি শনিবার) স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসবে। সেখানেও লন্ডন থেকে স্কাইপিতে যুক্ত হবেন তারেক রহমান। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, যেসব জেলার নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমান কথা বলেছেন, ওইসব জেলায়ও কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মতবিনিময় করছেন। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন বা থানা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর কি অবস্থা তা নিয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। একটি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ওইসব কমিটি গঠনের দিক নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি দল গোছানোর ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতাদের মতামতও নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে তৃণমূল নেতারা বলছেন, ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় সব কমিটিই কাউন্সিলের মাধ্যমে হতে হবে। পকেট কমিটি বা চাপিয়ে দেওয়া কমিটি যেন না হয়, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন আমাদের এক নম্বর কাজ হচ্ছে দল গোছানো। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এরই মধ্যে জেলা নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিও হচ্ছে। এরপর আমরা বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে রাজপথমুখী হব। একইসঙ্গে আইনি লড়াই অব্যাহত থাকবে।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী জানান, ‘নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এরই মধ্যে ৬২টি জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে স্কাইপিতে কথা বলেছেন তারেক রহমান। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে হবে। মূলত সাংগঠনিক বিষয়েই তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে।’  জানা যায়, এরই মধ্যে কয়েকটি অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠন করা হয়েছে। কৃষক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল, বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব এবং এ্যাবের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। এ ছাড়া মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিগগিরই ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ কমিটি করতে এরই মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে একটি ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতেও সার্চ কমিটির নেতারা বৈঠক করেছেন। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ জানুয়ারিতে সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। সাবেক এক ছাত্রনেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আপাতত আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। এক্ষেত্রে সিনিয়র-জুনিয়র নেতাদের নেতৃত্বেই এ কমিটি হতে পারে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর আদলে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। এ নিয়েই মূলত সার্চ কমিটি কাজ করছে। এ দিকে জাতীয়তাবাদী যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যুবদল এরই মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করছে। সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমানও নিয়মিত কথা বলছেন। একইভাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজও চলছে। সূত্রমতে, আগামী তিন চার মাস বিএনপি দল গোছানোতেই ব্যস্ত থাকবে। রমজানে ইফতার পার্টির মাধ্যমেও সাংগঠনিক কর্মকা  চালু রাখবে। তবে বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে এবার বিএনপির পক্ষ থেকে ইফতার পার্টি কম করা হবে। রমজানের পর কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নিজ নিজ জেলায় আবারও যাবেন। সেখানকার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে দলের হাইকমান্ডকে রিপোর্ট করবেন তারা। দল গুছিয়ে কোরবানির ঈদের পর বিএনপি মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের পাশাপাশি ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বিএনপি একই বার্তা দিয়েছে। সবাইকে দল গোছানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপির এক নেতা জানান, জেলা বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনের কমিটি হলেও আপাতত কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হবে না। দলের চেয়ারপারসন বেগম জিয়া কারামুক্ত হলেই তার নেতৃত্বে বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহী বিভাগে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিভাগটির সব জেলায় আমি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তৃণমূলের বক্তব্য হচ্ছে, সব পর্যায়ের কমিটি হতে হবে গণতান্ত্রিক উপায়ে। কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনের কোনো কমিটি দেওয়া যাবে না। ওয়ার্ড-ইউনিয়ন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সব কমিটিই সম্মেলনের মাধ্যমে হতে হবে। এ বিষয়টি আমি দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন,  জেলা-উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর কি অবস্থা তা আমরা জানার চেষ্টা করেছি। তৃণমূলে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, থানা বা উপজেলা পর্যায়ে বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠনের দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, সম্প্রতি পুরাতন কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে নিজের আইনজীবীদের ওপর ক্ষুব্ধ হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় তিনি খুবই বিরক্ত হন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমি এখনো কেন জেলখানায়? আইনজীবীরা কী করছেন? কেন আমাকে মুক্ত করতে পারছেন না? আমার মামলার আপিল হচ্ছে না কেন? এরপরই বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৈঠক করে আইনজীবীরা কে কোন মামলায় লড়বেন তা সুনির্দিষ্ট করে দেন। এ নিয়ে সর্বশেষ সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বেগম জিয়ার মামলার আইনি লড়াই নিয়েও নেতাদের সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেগম জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীকে। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় লড়বেন অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন। অন্যদিকে নিম্ন আদালতে নাইকো মামলায় লড়বেন অ্যাডভোকেট রেজ্জাক খান। গ্যাটকো মামলায় লড়বেন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম। তাদের সহযোগিতা করবেন দলের সিনিয়র ও জুনিয়র আইনজীবীরা। এ ছাড়া বৈঠকে বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ও সাংগঠনিক বিষয়ে কথা বলেন সদস্যরা। এতে স্কাইপিতে যুক্ত হন তারেক রহমান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর