শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগের কমিটি আজ জমা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে

রফিকুল ইসলাম রনি

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখন কেবল ঘোষণার অপেক্ষায়। আজ কমিটির তালিকা তুলে দেওয়া হবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তার নির্দেশনা পেলেই যে কোনো সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হবে। আর আগামী সাত দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিও। ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের দায়িত্ব পাওয়া শীর্ষ নেতৃত্বের তথ্যমতে, চুলচেরা যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। যেহেতু এর আগে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটানোর অভিযোগ ছিল, সেদিক বিবেচনায় পদপ্রত্যাশীদের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খোঁজখবর নিয়ে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

গত বছরের ১১-১২ মে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই সভাপতির পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর নানা ইস্যুতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। ফলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হন তারা। এ ছাড়াও তারা গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়েন। গত ১৫ এপ্রিল ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রতা ও নেতিবাচক কর্মকান্ডে  ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে ছাত্রলীগের বর্তমান দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে নতুন সম্মেলন করার হুমকি দেন তিনি। সেদিন তার বাসভবন গণভবনে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের চার নেতাকে ছাত্রলীগের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেন তিনি।

ছাত্রলীগের কমিটি দেখভালের দায়িত্ব পেয়ে পরদিনই সংগঠনটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং বি এম মোজাম্মেল হক। ১৭ এপ্রিল তারা বৈঠক করেন আগের কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঙ্গে। এর ধারাবাহিকতায় ২১ এপ্রিল বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেন। একাধিক বৈঠকে সবার মতামত নিয়েই চূড়ান্ত করা হয়েছে খসড়া তালিকা। আজ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সে তালিকা তুলে দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, একাধিকবার বৈঠক করে খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। শুক্রবার সে তালিকা তুলে দেওয়া হবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। তিনি অনুমোদন দিলেই যে কোনো সময়ে ঘোষণা করা হবে কেন্দ্রীয় কমিটি। এদিকে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা শেষ মুহূর্তে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, এমপি ও সাবেক ছাত্রনেতাদের কাছে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আওয়ামী পরিবারের সদস্য প্রমাণ দিতে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্রও নিয়ে আসছেন। তবে কমিটিতে পদ পেতে বিতর্কিত ব্যক্তিরাও তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। পদপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, কারা নেতা হবেন, তারা কার অনুসারী, কোন এলাকার নেতা এসব হিসাব শেষ হচ্ছে না সাবেক ও বর্তমান নেতাদের। ছাত্রলীগের তথাকথিত ‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার কারণেই মূলত যথাসময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় থমকে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। ১৩০টি সাংগঠনিক ইউনিট পরিচালনা করা দুই নেতার পক্ষে অনেকটা অসম্ভব। দীর্ঘ সময় কমিটি না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, সবার সঙ্গে পরামর্শ করেই আমরা কমিটি প্রস্তুত করেছি। তারপরও বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে একটি তালিকা তৈরি করেছি। পদপ্রত্যাশী সবাইকে তো আর নেতা বানানো সম্ভব নয়, অধিকতর গ্রহণযোগ্য, জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের এবং ভালো ছাত্রদের কমিটিতে রাখা হয়েছে।’ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। এর মধ্যে সম্মেলন না হলে কমিটির কার্যকারিতা থাকবে না। এরই মধ্যে নির্ধারিত সময়ের একটা অংশ পার করে ফেলেছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই। এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটি না হওয়ায় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগরের দুই গুরুত্বপূর্ণ শাখার কমিটিও আটকে আছে। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণেরও পূর্ণাঙ্গ কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।

সর্বশেষ খবর