মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

গডফাদারে জিম্মি কাগজ ও বস্ত্রখাত

দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ, কাজ করলে বদলি কাস্টমস কর্মকর্তা, ভয়াবহ বিস্তার চোরাচালানের

রুহুল আমিন রাসেল

গডফাদারে জিম্মি কাগজ ও বস্ত্রখাত

নয়াবাজারের বন্ডের গডফাদার খ্যাত আবুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন এক ডজন চোরাকারবারির নানা দৌরাত্ম্যেই কাগজ-বস্ত্রসহ দেশীয় শিল্প খাত ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েছে। তারা রাজধানীতে বন্ড সুবিধায় আনা শুল্কমুক্ত পণ্যের বাধাহীন বাজার গড়ে তুলেছেন। নানা প্রতিযোগিতায় ফেলে দেশীয় শিল্পকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। সংঘবদ্ধ এই চক্র এতই প্রভাবশালী যে, তাদের কাছে সরকারের দায়িত্বশীল মহলও জিম্মি হয়ে পড়েছে। পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকার আবুল হোসেন মার্কেটের কর্ণধার ‘বন্ড গডফাদার আবুল হোসেনের’ আধিপত্যের বিরুদ্ধে কারও টুঁ শব্দটি করারও উপায় নেই। এই গডফাদার ও তার সহযোগীদের অপকর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কথা বলে নিস্তার পাচ্ছেন না কেউ। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাস্টমসের কর্মকর্তাদের পর্যন্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনোভাবেই এসব গডফাদারকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। বরং অনেক ক্ষেত্রেই রাঘববোয়ালদের প্রকাশ্য চোরাচালান নিয়ে পুলিশের নির্বিকার ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে। ফলে ধ্বংসের হাত থেকে কাগজ ও বস্ত্র খাতকে কোনোভাবেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। জানা গেছে, মধ্যরাতে পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকায় আবুল হোসেন মার্কেটের আঙ্গিনাতেই বন্ড সুবিধায় আনা কাগজ লোড-আনলোড হয়। সেখানে পুলিশ ছাড়াও আবুল হোসেনের পোষ্য মাস্তান দল পাহারায় থাকেন। অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্ব নেওয়ার পর থেকেই আবুল হোসেন রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার পেপার মার্চেন্ড অ্যাসোসিয়েশনের অভ্যন্তরে গ্রুপিং সৃষ্টির মাধ্যমে পছন্দের ব্যবসায়ীদের নিয়ে গড়ে তোলেন আলাদা সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটই তার নেতৃত্ব বহাল রাখে, এ সিন্ডিকেটই চোরাকারবারি নিশ্চিত রাখে। নেতৃত্বের ক্ষমতা দিয়েই আবুল হোসেন যখন যাকে খুশি হুমকি-ধমকি দেন, কাগজের বাজার বন্ধ করার ভয় দেখান। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আবুল হোসেনের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই প্রতি বছর সরকারি বই মুদ্রণের পূর্ব মুহূর্তে বাজারে কাগজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির নানা পাঁয়তারা চালিয়ে থাকে। 

সরেজমিন কাগজের সবচেয়ে বড় খোলাবাজার নয়াবাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুল্ক সুবিধায় আনা কাগজ প্রায় প্রতিটি দোকানেই বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, সাধারণত রাত ১১টার পর থেকে বন্ডের মাধ্যমে আনা পণ্য লোড-আনলোড হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্ডস অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল হোসেন বলতে পারবেন। তিনিই এ ব্যবসার মূল হোতা। পুরো নয়াবাজারের পেপার মার্কেট তার নিয়ন্ত্রণে চলে। তার কথায় সবাই ওঠে-বসে। তিনিই (আবুল হোসেন) বলতে পারবেন কে কে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্ডস অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল হোসেনের অফিসে কয়েকবার গেলেও তার অফিসের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে দেখা বা যোগাযোগ করতে দেননি। তারা জানান, আবুল হোসেন অফিসে নেই। তার মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে বলেন, আমাদের নম্বর দেওয়ার কোনো অনুমতি নেই। কয়েক দিন পর এসে তার থেকে নেবেন। পরপর দুই দিন তার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড লাইসেন্স থাকলেও অনিয়মের কারণে ১ হাজার ৭৫৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কাস্টমস। আবার কারখানা বন্ধ থাকার পরও বন্ড লাইসেন্স আছে ২ হাজার ৪৩৮টি পোশাক ও প্যাকেজিং কারখানার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবুল হোসেন বন্ডের পণ্য চোরাচালানের নেতৃত্ব দিয়ে এখন ধনকুবেরে পরিণত হয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে তার রয়েছে দীর্ঘদিনের শখ্য। কাস্টমস কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে অভিযানে গিয়ে বিপাকে পড়েন বন্ড গডফাদার আবুল হোসেনের পেটোয়া বাহিনীর হাতে। এক্ষেত্রে কোতোয়ালি থানার ওসির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিযোগ উঠেছে। এমতাবস্থায় সদরঘাট ও আশপাশের এলাকায় বন্ডের পণ্যের চোরাচালান ঠেকাতে বিশেষ নজরদারি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানোর দাবি জানিয়েছেন কাগজ ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা। সূত্র জানায়, সম্প্রতি মোংলা ইপিজেডের মুন স্টার, সৈয়দপুর ইপিজেডের ফারদিন এক্সেসরিস ও কোয়েস্ট এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের ওয়েবকোয়াট নামের এই চারটি বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্ত কাগজ জাতীয় পণ্য রাজধানীর নয়াবাজারে কয়েক দফা বিক্রি করেছে। এর আগেই এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ে। কিন্তু কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় পুনরায় চোরাকারবারিতে জড়িয়ে পড়েছে ওই চার প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, মোংলা ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান মুন স্টারের মালিক অত্যন্ত প্রভাবশালী। তার একাধিক প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বন্ড লাইসেন্স। এর আগেই কাগজ জাতীয় পণ্য খোলাবাজারে বিক্রির অপরাধে ওই ব্যক্তির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েকটি মামলা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। তবুও থামেনি চোরাচালান। সম্প্রতি মুন স্টার কাগজের একটি বড় চালান কালোবাজারে বিক্রি করেছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও চোরাচালানের দায়ে ওয়েবকোয়াটের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট জানিয়েছে, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও বন্ডেড পণ্য চোরাইপথে খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার পণ্য জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। সেদিন রাতে রাজধানীর গুলিস্তান ও বিরুলিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাতটি কাভার্ডভ্যানও জব্দ করে কাস্টমস। এ অভিযানে ফারদিন এক্সেসরিজসহ ছয় প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার পণ্য জব্দ করা হয়। এর আগেও বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্ত পণ্য এনে দেশের খোলা বাজারে অবৈধভাবে বিক্রি করেছে মেসার্স ফারদিন এক্সেসরিজ। প্রতিষ্ঠানটির এ অনিয়ম সম্পর্কে ২০১৫ সালে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফারদিন এক্সেসরিজ জিপিপিএস, এইচআইপিএস, পিভিসি রেজিন, পিইটি রেজিন, প্যারাফিন ওয়াক্স, পিপি, এইচডিপিই, এলডিপিই, এলএলডিপিই, বিওপিপি, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ডসহ ২৫ ধরনের কাঁচামাল এনে বিক্রি করেছে ৩৫ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে ১২ কোটি ৯ লাখ টাকার। ফারদিন এক্সেসরিজ লি. একটি নব্য অনুমোদনপ্রাপ্ত বন্ডেড প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট, রংপুর কমিশনারেট একটি সাময়িক বন্ড লাইসেন্স দিয়েছে, যার নম্বর ০৪/২০১৪ তারিখ ১৪-০৭-২০১৪। প্র্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধার আওতায় বিনা শুল্কে আমদানি করা কাঁচামাল উৎপাদনে ব্যবহার না করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। দেশে শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানির নামে বন্ডেডওয়্যার হাউস সুবিধার অপব্যবহার বাড়ছেই। আমদানি পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করে শুল্ক ফাঁকির মহোৎসব চলছে। আবার আমদানির আড়ালে বেড়েছে অর্থপাচার। সব মিলিয়ে বন্ড সুবিধায় এখন ‘পোয়াবারো’ চোরাকারবারিদের। একশ্রেণির ব্যবসায়ী বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে কালোবাজারে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আত্মসাৎ করছে। চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য বন্ডের কার্যক্রম শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয়, বরং রাজস্ব ফাঁকি ও দেশীয় শিল্পকে হুমকির সম্মুখীন করছে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আসছে বাজেটে পদক্ষেপ থাকবেই। ইতিমধ্যে বন্ডেড সুবিধা অপব্যবহারকারী ৬০ থেকে ৭০টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। নতুন আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে অভিযান হচ্ছে।

জানা গেছে, ইসলামপুরে শুধু বন্ডের কাপড় চোরাচালান করেই শূন্য থেকে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন অনেকে। যাদের মধ্যে কেউ কেউ এক সময় ছিলেন হকার, সেলসম্যান কিংবা শ্রমিক। এই সোনার হরিণের পেছনে ছুটে খুব কম সময়ে তারা এখন সমাজের উঁচুতলার মানুষ বনে গেছেন। শুধু কাপড় নয়, কাগজ এবং পিপি দানাসহ বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল থেকে শুরু করে সব ধরনের বন্ড সুবিধার পণ্যই এভাবে চলে যাচ্ছে কালোবাজারে। চোরাই কাপড়ের কারবার করেই শূন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন এমন তালিকায় আছেন দীপু চাকলাদার ও অপু চাকলাদার নামের দুই ভাই। যাদের একজন আওয়ামী লীগ এবং আরেক ভাই বিএনপি করেন। ফলে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন কাপড় কালোবাজারির ব্যবসায় তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। অপু দীপু দুই ভাইয়ের শত কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এ ছাড়া চোরাই কাপড়ের গডফাদারদের মধ্যে আছেন গুলশানারা সিটির কাইয়ুম ওরফে বিজি কাইয়ুম, সোহেল ওরফে পেট মোটা সোহেল, হাতকাটা আইনুল ওরফে রনি গং। তাদের সঙ্গে আছেন ইসলামপুরের বড় ব্যবসায়ী খোকা মিয়া। খোকা মিয়া এক সময় সাধারণ ভয়েল কাপড়ের খুচরা ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু চোরাই কাপড়ের ব্যবসা করে তিনি এখন কোটিপতি। তার ১৫-১৬টি দোকান রয়েছে। ইসলামপুরে নিপ্পন ট্রেডার্সসহ একাধিক মিল ফ্যাক্টরির মালিক তিনি। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলায়।

আরেক কালোবাজারি রেজা রোমান আগে কাপড়ের দোকানে সেলসম্যান ছিলেন। এখন যৌথ ফেব্রিক্স নামের বিশাল দোকান দিয়েছেন ইসলামপুর গুলশানারা সিটিতে। এ চক্রের অন্যতম সদস্য মতিন মিয়া, আওলাদ চেয়ারম্যান, আইনাল, রনি, হাজী মোমেন আলী, কুদ্দুস, খোকা মিয়া। তাদের অনেকের পাসপোর্ট জব্দ করেছে সিআইডি। তাদের মধ্যে সোহেল নামের এক দালাল শুধু কাপড় পাচার চক্রের দালালি করেই এখন কোটিপতি। সূত্র বলছে, চোরাই কাপড় ব্যবসা থেকে বিভিন্ন সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পকেটেও ঘুষের টাকা পৌঁছে যায়। এমনকি বিজিএমইএর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যন্ত এই কারবার থেকে ঘুষ আদায় করেন। কারণ অনেক গার্মেন্ট মালিকের মূল ব্যবসাই হলো এই আন্ডারগ্রাউন্ড চোরাই কাপড়ের ব্যবসা। কোনোমতে ২০-২৫টি মেশিন বসিয়ে তারা ভুয়া উৎপাদন দেখায়। কিন্তু আড়ালে চোরাই কাপড়ের ব্যবসাই হলো প্রকৃৃত ধান্দা। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু ইসলামপুরেই বছরে অন্তত ১০ হাজার কনটেইনার কাপড় আসে। এ ছাড়াও রাজধানীর আরও কয়েকটি জায়গায় চোরাই কাপড়ের গোপন বাজার গড়ে উঠেছে। জানা গেছে, শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধায় আমদানি হওয়া পণ্য চোরাই পথে কালোবাজারে বিক্রয় প্রতিরোধে রাত-দিন বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছেন ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের এক দল সাহসী ও চৌকস কর্মকর্তা। তারই ধারাবাহিকতায় উপ-কমিশনার রেজভী আহম্মেদ ও সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফয়সালের নেতৃত্বে গত ১৭ এপ্রিল দুটি প্রিভেন্টিভ দল পুরান ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালায়। অভিযানকারী দল রাত ১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন নামফলকবিহীন একটি গুদামের সন্ধান পায়। সেখানে প্রচুর পরিমাণে বন্ড সুবিধায় আমদানি হওয়া পণ্য চোরাইপথে বিক্রয়ের জন্য মজুদ পাওয়া যায়। ওইসব চোরাই পণ্য আটক শেষে কাস্টমস কর্মকর্তারা ফিরে আসার সময় অবৈধ চোরাকারবারি চক্রের দুষ্কৃতকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা নিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হামলায় ৬ জন কাস্টমস কর্মকর্তা আহত হন। কাস্টমসের একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে হামলায় নেতৃত্বদানকারী মাহফুজুর রহমান (৪৮) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। জানা গেছে, কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর চোরকারবারিদের এই হামলার ঘটনা ও সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধনের অভিযোগে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মওদুদ হাওলাদারের আত্মীয় হলেন চোরাকারবারি দলের অন্যতম সদস্য ও হামলায় নেতৃত্বদানকারী মাহফুজুর রহমান। এ প্রসঙ্গে ঢাকা কাস্টস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, হামলাকারীরা সরকারি কাজে বাধা দিয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। তাদের কোনো ছাড় নেই। এ ছাড়া রাজস্ব সংরক্ষণ ও দেশীয় শিল্পের বিকাশে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। প্রসঙ্গত, রপ্তানিতে সহযোগিতা করতে সরকার শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্তভাবে আমদানির সুযোগ দেয়। এই শুল্কমুক্ত সুবিধা ‘বন্ড সুবিধা’ নামে পরিচিত। বন্ড সুবিধা পাওয়ার অন্যতম শর্ত থাকে, হিসাবমতো কাঁচামাল আমদানি করতে হবে এবং তা খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। আমদানিকৃত শুল্কমুক্ত পণ্য সংশ্লিষ্ট কারখানার বন্ডেড ওয়্যার হাউসে মজুদ রেখে উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। বাস্তবে কোনো ধরনের পোশাক কারখানা না থাকার পরও ৪৭৯টি প্রতিষ্ঠানের নামে আছে বন্ড লাইসেন্স। এসব বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করে পণ্য আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন কালোবাজারের সঙ্গে জড়িত অসাধু পোশাক কারখানার মালিকরা।

সর্বশেষ খবর