মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বালিশ সমাবেশ

পরমাণু শক্তি কমিশনের অস্বীকার উচ্চ আদালতের বিস্ময়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বালিশ সমাবেশ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিনসিটি আবাসন  পল্লীর বিছানা, বালিশ, আসবাবপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে কেনা এবং তা ভবনে তোলার ঘটনায় গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বালিশ হাতে নিয়ে অভিনব প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে একটি সংগঠন। এদিকে বালিশকান্ডের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে করা রিটের শুনানিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। এ ঘটনায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও দেখতে চেয়েছে আদালত। অন্যদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘কাল্পনিক’ দাবি করে নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত অভিনব প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে হরিলুট হয়েছে তা ইতিহাসে সেরা। দুর্নীতির কালো মেঘ বাংলাদেশকে ঘিরে ফেলেছে। একই সঙ্গে সবাইকে সোচ্চার ও প্রতিবাদী হতে হবে এই মহামারীর বিরুদ্ধে। দেশে দুর্নীতির সঙ্গে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা, একই সঙ্গে কৃষকের মধ্যে চলছে হাহাকার। এতে বাংলাদেশ গণঐক্য সভাপতি আরমান হোসেন পলাশের সভাপতিত্বে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার, জাতীয় বিপ্লবী পার্টির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, গণঐক্যের প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গণপূর্তের প্রতিবেদন চায় হাই কোর্ট : পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিনসিটি আবাসন পল্লীর বিছানা, বালিশ, আসবাবপত্র অস্বাভাবিক মূল্যে কেনা এবং তা ভবনে তোলার ঘটনায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখতে চায় হাই কোর্ট। এ জন্য ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। উচ্চ আদালতের অবকাশকালীন ছুটির পর অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আদালতে দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ-সংক্রান্ত রিটের শুনানি মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করে রেখেছে আদালত। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন কাল্পনিক দাবি পরমাণু শক্তি কমিশনের : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ‘কাল্পনিক’ দাবি করে নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। গতকাল কমিশনের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক স্বাক্ষরিত ব্যাখায় বলা হয়েছে, রূপপুর প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফলে দেশের সর্ববৃহৎ, উচ্চপ্রযুক্তিঘন এবং স্পর্শকাতর প্রকল্পটির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। এ ছাড়া জনমনে এ বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

আর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামো সমধর্মী অপরাপর পাবলিক কোম্পানির বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করে কোম্পানির বোর্ড কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বোর্ডে পরিচালক হিসেবে সরকারের অর্থ বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সংস্থার প্রতিনিধি রয়েছেন। এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) কেউই প্রকল্প থেকে বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে কমিশনের ব্যাখ্যায়।

সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য নির্মিত গ্রিনসিটিতে আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয়ে লাগামছাড়া দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে একটি সংবাদপত্র। এতে দেখা যায়, একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে দাম বাবদ ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা আর সেই বালিশ নিচ থেকে ফ্ল্যাটে উঠাতে খরচ ৭৬০ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি টাকায় আকাশ-সমান দামে এসব আসবাবপত্র কেনার পর তা ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে তুলতে অস্বাভাবিক হারে অর্থ ব্যয়ের এ ঘটনা ঘটিয়েছেন গণপূর্ত অধিদফতরের পাবনা গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর