বুধবার, ১২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

সামষ্টিক অর্থনীতি এখন সবচেয়ে বেশি চাপে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সামষ্টিক অর্থনীতি এখন সবচেয়ে বেশি চাপে

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, যে কোনো সময়ের তুলনায় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখন সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে। অপশাসনের সুবিধাভোগীরা যদি নীতিমালাকে প্রভাবিত করে, তাহলে কোনো কিছুতেই পরিবর্তন আসবে না। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সংলাপ পরিচালনা করেন আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ। দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশের সামস্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, অর্থনীতির একটি শক্ত ভিত ছিল। সেই শক্তিতে এখন চিড় ধরেছে। সেই শক্তিতে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। এর অনুষঙ্গ হলো কর আহরণে অপারগতা। তার মতে, এ মুহূর্তে তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তা হলো প্রথমত-রাজস্ব আহরণ, দ্বিতীয়ত-ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ও তৃতীয়ত-টাকার বিনিময় হার অবনমন করা। এটা যদি অতিক্রম না করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে অভিলাষ, সেই অভিলাষের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করার সুযোগ কম হবে। অন্য উৎস থেকে যদি আমরা বিনিয়োগ করার চেষ্টা করি তাহলে সামস্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে র অর্থ ব্যয়ের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ বছর অর্ধেক এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে মাত্র ৩ মাসে। এটা যে কী এডিপি হবে তা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না। সরকার যেটা মনে করছে টাকা সস্তা করলে আমদানি ব্যয় বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর একটা প্রভাব পড়বে। আমরা যেটা মনে করি মূল্যস্ফীতির এখন যে অবস্থান আছে, এই মূল্যস্ফীতির হার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে। সেহেতু টাকাকে একটু অবমূল্যায়ন করা হলে তা সহ্য করার শক্তি অর্থনীতির আছে। কিন্তু অন্য সময় মূল্যস্ফীতি যদি বেড়ে যায়, তাহলে এটা করা জটিল হয়ে পড়বে। সুতরাং টাকার মান পুনর্নির্ধারণ অবশ্যই প্রয়োজনীয়। ব্যাংক খাতের প্রসঙ্গ তুলে দেবপ্রিয় বলেন, এ বিষয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো। তিন-চার বছর ধরে এ বিষয়ে বলতে বলতে এমন একটা অবস্থায় এসেছি অবশেষে ব্যাংক খাতের সংকট সবাই উপলব্ধি করছে। কিন্তু প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে আমরা তার প্রতিফল দেখি না। বর্তমান সরকার আসার পর যে কয়কটা পদক্ষেপ নিয়েছে, সবকটি পদক্ষেপ ব্যাংক খাতের জন্য আরও ক্ষতিকর হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকদের বাঁচাতে কার্ডধারী প্রত্যেক কৃষককে ৫ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানান তিনি। সম্প্রতি কৃষকদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। শিল্প ও কৃষির মধ্যে যে বাণিজ্য স্বত্ব থাকে, এই বাণিজ্য স্বত্ব কৃষকের বিপরীতে গেছে। এটা যদি অব্যাহত থাকে আগামীদিনে বাংলাদেশে কৃষকদের টিকে থাকা খুবই কঠিন হবে। ব্রিফিংয়ে সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-রাজস্ব আহরণের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেওয়া। সরকারি ব্যয়ে শৃঙ্খলা থাকা বা অপচয় রোধ করা। কর ছাড় বন্ধ করা ও কর খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানো ও সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে আনা। টাকার মান অবনমন করা। ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা ও সুদের হার ও ব্যাংকের তারল্য সংকট মিটিয়ে ফেলা। পুঁজিবাজারে সংস্কারের ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। ধানের ক্ষতি পোষাতে প্রত্যেক কৃষককে ৫ হাজার করে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সরকারি প্রতিষ্ঠানে অডিট করে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া এবং সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানো।

সর্বশেষ খবর