শিরোনাম
রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

অনেক মার খেয়ে প্রতিষ্ঠিত এ দল

-অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

অনেক মার খেয়ে প্রতিষ্ঠিত এ দল

আওয়ামী লীগের সূচনাকালের সদস্য অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী বলেছেন, অনেক দুঃখ অত্যাচার সয়ে সয়ে আজ এখানে, সুদৃঢ় অবস্থায় এসেছে দল। যাত্রাপথের শুরুতে বাধা-বিপত্তি আর বিপক্ষের নিপীড়ন এতটাই নির্মম ছিল যে তখন আওয়ামী লীগ করার জন্য লোক পাওয়া যেত না। ঢাকা মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান কাজী বশিরের বাসা ঢাকার গোলাপবাগ এলাকার বাগানবাড়িতে আওয়ামী লীগ যাত্রা শুরু করে। সভা করতে বুড়িগঙ্গার ওই পাড়ে গিয়েও রেহাই মেলেনি। সেখানে হামলা চালানো হয়েছে। অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী (৮৭ উত্তীর্ণ) কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁওয়ে তার বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, আমরা যেখানেই আওয়ামী লীগের সভা করতে গেছি সেখানেই মুসলিম লীগ আর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আহমেদ আলী এখন বয়সের ভারে কাতর। প্রোস্টেট ক্যান্সারে ভুগছেন। সব সময় বিছানায় পড়ে থাকেন। একটি কথার পর আরেকটি কথা গুছিয়ে বলতে অনেক সময় নেন। কানেও তেমন শোনেন না। বললেন, ‘আমার স্মৃতি থেকে অনেক তথ্য উধাও হয়ে যাচ্ছে।’ তবে কথাবার্তায় বোঝা যায়, এখনো আওয়ামী লীগের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তাকে খুব ছুঁয়ে যায়। তিনি বলেন, ক্ষমতায় বসে দলকে উপেক্ষা করা বা ভুলে যাওয়া ঠিক নয়। সব সময় মানুষের সঙ্গে, মাঠপর্যায়ের দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। আহমেদ আলী বলেন, যারা মার খেয়ে খেয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, দল যদি তাদের ভুলে যায়, তার মতো দুঃখজনক তো আর কিছুই হয় না। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাকালের সদস্যদের অনেকেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। হাতেগোনা কয়েকজন হয়তো বেঁচে আছেন। তাদের সবাইকে একত্র করে দলের পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো হলে দলই তো সম্মানিত হবে। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আহমেদ আলী আরও বলেন, দেশমাতৃকাকে ঔপনিবেশিক শক্তির কবলমুক্ত করতে জীবনবাজি রেখে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। সেদিন কারও কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া ছিল না। সবাই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেছিল। জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে অর্থের মোহ কখনই কাবু করতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় তিনি যখন অধিষ্ঠিত হলেন তখনো সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। ক্ষমতাসীন বঙ্গবন্ধুর চারপাশে থাকা কিছু চাটুকার তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছিল। আহমেদ আলী এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, এ রকম দুরাচারীদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। নইলে জাতি গঠনে আওয়ামী লীগের সব ত্যাগ ম্লান হয়ে যেতে পারে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী। মুক্তিযুদ্ধকালে আগরতলায় যুবশিবির কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা শত্রুমুক্ত হলে প্রথম মুক্তির বিজয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন তিনি। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করে মেম্বার অব গণপরিষদের (সংবিধান প্রণয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত) সদস্য হন। এক সময় তিনি ছিলেন বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বার কাউন্সিলের প্রথম নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন তিনি। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের জন্ম ১৯৩২ সালের ১ মার্চ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কাজলিয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। আহমেদ আলী দেশের রাজনীতির ওপর বেশকটি বই রচনা করেছেন- যার অন্যতম ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিকথা’।

সর্বশেষ খবর