শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

কনস্টেবল নিয়োগে চার স্তরের মনিটরিং

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে কনস্টেবল ১০০ জনকে বদলি, ১৮ মামলায় এসআইসহ গ্রেফতার ৪০ প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহায়তায় সম্ভব হয়েছে : আইজিপি

সাখাওয়াত কাওসার

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ছিল চার স্তরের মনিটরিং। নিয়োগ কার্যক্রম তদারকিতে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একটি কমিটি, পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো বিশেষ টিম, স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) একটি দল এবং অন্য আরেকটি গোয়েন্দা দল সার্বক্ষণিক মাঠে ছিল। নিয়োগ কার্যক্রমে ঘুষ লেনদেনসহ অনৈতিক কর্মকান্ডে র জন্য ১৮টি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন একজন উপ-পরিদর্শকসহ ৪০ জন। নিয়োগে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাসহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার সন্দেহে ১০০ জন পুলিশ সদস্যকে বদলি এবং স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সদর দফতর সূত্র বলছে, স্বয়ং পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) তদারকি করেছেন মনিটরিংয়ের বিষয়টি।

এ ব্যাপারে আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাদক, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহায়তার কারণেই সম্ভব হয়েছে স্বচ্ছতার সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ কার্যক্রম। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদেরও সহায়তা ছিল, সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারদেরও ঐকান্তিক সহায়তা এবং কঠোরতাই স্বচ্ছ নিয়োগে বড় ভূমিকা রেখেছে।

আইজিপি বলেন, জবাবদিহিতা নিশ্চিতে পুলিশ সদর দফতর শুরু থেকে কঠোর ছিল। আগে থেকেই পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছিল। সদর দফতর সূত্র বলছে, নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকলে আইজিপি কমপ্লেইন সেলের মোবাইল নম্বর, ই-মেইল এবং ফেসবুক লিংক দিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। গত ১২ জুন পুলিশ সদর দফতরে ত্রৈমাসিক অপরাধ সভায় নিয়োগ সংক্রান্ত আলাদা সেশনের আয়োজন করা হয়। ওই সেশনে এসপি থেকে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মতামত নেওয়া হয়। সবশেষে আইজিপি বিশেষ নির্দেশনা দেন। ২০ জুন পুলিশ সদর দফতর থেকে বিভিন্ন জেলার নিয়োগ প্রক্রিয়া মনিটরিংয়ের জন্য বাছাইকৃত কর্মকর্তাদের ব্রিফ করেন আইজিপি। এরপর ভিডিও কনফারেন্সে প্রত্যেক জেলার পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলেন আইজিপি। আইজিপির নির্দেশনায় পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআর), ডিআইজি (এইচআর), এআইজি (আরএন্ডসিপি-২) সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন। সূত্র আরও বলছে, মাত্র ১০৩ টাকায় চাকরি এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ, সদর দফতরের ব্যাপক প্রচারণার কারণে চলতি বছরে কনস্টেবল পদে চাকরিপ্রার্থী ছিল এক লাখ ৩০ হাজার ৪০৩ জন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার। এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ জন পুরুষ এবং ২ হাজার ৮৮০ জন নারী কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া। স্বচ্ছ নিয়োগ নিশ্চিতে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থারও সহায়তা নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিয়োগ স্বচ্ছ করতে কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ১০০ জন পুলিশ সদস্যকে তাৎক্ষণিক বদলি এবং স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। বর্তমানে এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। টাঙ্গাইলে ঘুষ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে মোহাম্মদ আলী নামের এক উপপরিদর্শককে ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। অবৈধ লেনদেন ও অবৈধ উপায়ে নিয়োগ প্রভাবিত করার চেষ্টার জন্য টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নাটোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, রংপুর, গাইবান্ধায় একটি করে, খুলনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়ায় দুটি করে এবং বগুড়ায় চারটি মামলায় মোট গ্রেফতার করা হয় ৪০ জনকে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের বিষয় উল্লেখ করে অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আধা ঘণ্টা আগে আমরা পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র দিয়েছি। হলগুলোর পরিবেশ ছিল অনেকটা এইচএসসি পরীক্ষার মতো কঠোর। পরীক্ষার খাতার সঠিক মূল্যায়নের জন্য প্রত্যেকটি খাতায় স্বতন্ত্র্য কোড দেওয়া হতো। খাতার মূল্যায়ন শেষে প্রাপ্ত নম্বর উল্লেখ করে জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বাধীন কমিটি পুলিশ সদর দফতরের দলকে তালিকা দিত। তখন ওই কোডকে ডি-কোড করা হতো, যাতে কোনোভাবে নম্বর পরিবর্তনের কোনো সুযোগ না থাকে।

সর্বশেষ খবর