শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় শেখ হাসিনা

গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে কিছু মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসে

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে কিছু মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসে

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে কিছু মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসে। তারা নিঃশ্বাস নিতে পারে না। আজ আমরা দেশটাকে একটা অবস্থানে নিয়ে এসেছি। এর মূল শক্তিটাই ছিল দেশের জনগণ ও তাদের সমর্থন। সাংগঠনিকভাবে আমাদের দলকে শক্তিশালী করতে আরও জনমত সৃষ্টি করতে হবে। যেন আমাদের চলার পথে যত বাধাই আসুক অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। গতকাল বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা     বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত উপদেষ্টাপরিষদ ও ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপদেষ্টাপরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। তার দল অবহেলা করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে না। তিনি বলেন, আমরা মানুষের সুখ দুঃখের সাথী হয়ে, মানুষের বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের কল্যাণে ও উন্নয়নে কাজ করা-এই নীতিতে কাজ করি বলেই আজ দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সরকার যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম। তিনি বলেন, এখন বৃষ্টি হচ্ছে, বন্যা হচ্ছে, কোথাও নদী ভাঙন হতে পারে বা পাহাড়ে ধস নামতে পারে। সারা দেশে কোথায় কী ঘটছে সরকার প্রতিনিয়ত খবর নিচ্ছে এবং সেখানে যার যা দায়িত্ব তা দেওয়া আছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে যার যা দায়িত্ব তা পালন করে যাচ্ছে। এতে কোনো শৈথিল্য নেই।

দুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপি সরকারে একটি ঘটনার কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ’৯১-এর ঘূর্ণিঝড়, তখনতো বিএনপি সরকার ক্ষমতায়। তারা জানেই না এত বড় একটা ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, এত মানুষ মারা গেছে। সংসদে যখন আমি বললাম, এত বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, এত মানুষ মারা গেছে, তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সংসদকে জানালেন, ‘যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরেনি।’ তখন আমি জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম যে, ‘কত মানুষ মরলে আপনার তত মানুষ হবে বলেন’-এ ছাড়া বলার মতো কিছু ছিল না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবেও জনগণের পাশে থাকে। অতীতেও ছিল।

আমরা দেশের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রেখেছি। এই ১০ বছরে আমরা কোনো হোঁচট খাইনি কিংবা পিছিয়ে যাইনি, আবার হঠাৎ করে লাফও দিইনি। আমরা আরও সামনে যেতে চাই। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চাই। সে পরিকল্পনা আমাদের আছে।

উন্নয়নের এই যাত্রাপথের নানা বাধা বিপত্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই চলার পথ কিন্তু খুব সহজ ছিল না। প্রতি পদে পদে বাধা, অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, নির্যাতন অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। তার পরও আমরা কিন্তু এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।

দেশের উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক শক্তি, সাংগঠনিক শক্তি ও জনগণের সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ’৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর থেকে তার দল এ পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম করতে করতে সরকার গঠন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে; সেখানে মূল শক্তিটাই জনগণের সমর্থন। আর অবশ্যই মহান আল্লাহর একটা রহমত ছিল। সেজন্যই বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পেরেছে। শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নে সফলতা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। সরকার গঠনের আগে আওয়ামী লীগের কিছু পরিকল্পনা ছিল দেশকে নিয়ে। সেই কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের নিজেদের একটা চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনা ছিল। সে জন্যই সরকারে এসে আমরা দেশটাকে আজ এত দূরে আনতে পেরেছি। আগামী দিনে দেশকে আমরা কোথায় নিয়ে যাব? সে পরিকল্পনাও আমাদের আছে। তা ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছি। ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করা, জনমত সৃষ্টি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। এ জন্য দলের উপদেষ্টাপরিষদের সদস্যদের সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, উপদেষ্টারা আমাদের ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্কের’ মতো। আপনাদের সবাইকে সক্রিয় হতে হবে।

দেশের অগ্রগতিকে যারা অস্বীকার করেন, ভিত্তিহীন সমালোচনা করেন তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের দেশের কিছু লোক থাকে যাদের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। এই যে আমরা অর্থনৈতিকভাবে যতদূর এগোই, কিছু লোকের সবসময় এটাকে ভিন্ন চোখে দেখার অভ্যাস। এরা আসলে কখনো গণতান্ত্রিক ধারাটা চায় না। গণতান্ত্রিক ধারা বজায় থাকলে এদের যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। অস্বাভাবিক কিছু হলে তাদের খুব দাম বাড়ে।

 

সর্বশেষ খবর