সামাজিক সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশে গরিব মানুষের পেছনে যতটা খরচ হয়, এর চারগুণ বেশি খরচ হয় ধনীদের পেছনে। আবার নারীদের চেয়ে পুরুষরা বাংলাদেশে বেশি পরিমাণে সামাজিক সুরক্ষা ভোগ করে থাকেন। অবশ্য সামাজিক সুরক্ষায় মোট ব্যয়ের দিক থেকেও বাংলাদেশ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বেশ পিছিয়ে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে এশিয়ার ২৫টি দেশের ‘দ্য সোশ্যাল প্রোটেকশন ইন্ডিকেটর ফর এশিয়া : অ্যাসেসিং প্রোগ্রেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ পরিমাণ আর্থ-সামাজিক সুরক্ষায় খরচ করে। তালিকার শীর্ষে থাকা জাপান খরচ করে জিডিপির ২১ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ এশিয়ার নিচের দিককার পাঁচটি দেশের একটি। বাংলাদেশের পেছনে আছে শুধু মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভুটান ও লাওস। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম। বাংলাদেশের মাত্র ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ সামাজিক সুরক্ষার কোনো না কোনো সুবিধা পান। তবে বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপির মাত্র দশমিক ২ শতাংশ গরিব মানুষের পেছনে খরচ হয়। আর ধনীদের পেছনে খরচ হয় দশমিক ৮ শতাংশ। এর মানে, গরিবের পেছনে যত টাকা খরচ হয়, এর চারগুণ বেশি টাকা ধনীদের জন্য খরচ হয়। জানা যায়, দেশে এখন ৭৪ লাখ লোক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পান। এই কর্মসূচির আওতায় সরকার বিধবা ভাতা, দরিদ্র নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি দিয়ে থাকে। এ ছাড়া টেস্ট রিলিফ, ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিডি), কাজের বিনিময়ে টাকাসহ (কাবিটা) বিভিন্ন কর্মসূচিও আছে। তবে সব নাগরিক পায় এমন কোনো সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাংলাদেশের নেই। গত অর্থবছরে ১৬ ধরনের কর্মসূচিতে ২৭ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে। ১০ বছর আগে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই হিসাবের মধ্যে অবশ্য সরকারি পেনশনভোগীদের জন্য বরাদ্দ করা টাকাও আছে। সরকারি চাকরির পর অবসরভোগীদের প্রায় শতভাগই দারিদ্র্যসীমার ওপরে বাস করেন। তাই পেনশন বাবদ খরচ বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ জিডিপির ২ শতাংশের মতো হয়।