শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগ-ছাত্রদলে টানটান উত্তেজনা

আদালতের নির্দেশে স্থগিত ছাত্রদলের কাউন্সিল, নেতাদের বিস্ময়

নিজস্ব ও আদালত প্রতিবেদক

আদালতের নির্দেশে স্থগিত ছাত্রদলের কাউন্সিল, নেতাদের বিস্ময়

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল আয়োজনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১০ জনকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকার চতুর্থ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফারজানা আক্তার এ আদেশ দেন। এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপিসহ ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা সরকারের

ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। ছাত্রদলের উৎসবমুখর কাউন্সিলকে বানচাল করতেই এ অপকৌশল। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করল। তবে আমরা এ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।’

এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী মোহাম্মাদ ছাত্তার মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, ‘ছাত্রদলের গত কমিটির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. আমানউল্লাহ বাদী হয়ে আদালতে এ মামলা করেন। মামলায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বরের আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল কেন বন্ধ করা হবে না- সে বিষয়ে ১ থেকে ১০ নম্বর বিবাদীদের শোকজ করার আবেদন করা হয়েছে।’

আদালতের সেরেস্তাদার আবদুর রশিদ জানান, ‘ভারপ্রাপ্ত বিচারক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ছাত্রদলের কাউন্সিল আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন এবং ১ থেকে ১০ নম্বর বিবাদীদের শোকজ করেছেন।’

মামলার বিবাদীরা হলেনÑ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু, আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও রাজীব আহসান। এ ছাড়া মামলায় মোকাবিলা বিবাদী করা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও নির্বাচন কমিশনকে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, চলতি বছরের ৩ জুন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী একটি প্রেস রিলিজ দিয়ে ছাত্রদলের গত কমিটি বাতিল করে দেন। পরে ৯ জুন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্রদলের কাউন্সিল আয়োজনে তিনটি কমিটি গঠন করেন এবং তার স্বাক্ষরিত একটি প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় খবর জানান। এ ছাড়া ২২ জুন ছাত্রদলের ১২ জন নেতাকে বহিষ্কার করেন। বিবাদীদের এ ধরনের নোটিসে স্বাক্ষর করা বেআইনি।

বিএনপির বিস্ময় : ছাত্রদলের কাউন্সিলে আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল সন্ধ্যায় যখন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ-সংক্রান্ত নোটিস যায়, তখন কার্যালয়ে থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন নেতা-কর্মীরা। নোটিসের কপি গ্রহণ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের আইনজীবী ও সাবেক নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। লন্ডন থেকে স্কাইপিতে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান খায়রুল কবির খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আশা করি আমরা আইনি লড়াইয়ে জিতব। শুক্র-শনিবার দুই দিন ছুটি থাকায় হয়তো আমরা যথাসময়ে ছাত্রদলের কাউন্সিল করতে পারব না। তবে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে শিগগিরই কাউন্সিল করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাব।’

দিনভর সরগরম ছিল নয়াপল্টন কার্যালয় : এর আগে কাউন্সিল ঘিরে দিনভর সরগরম ছিল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। দুপুর ১২টায় নয়াপল্টন অফিস থেকে ছাত্রদলের কাউন্সিলরদের মধ্যে কার্ড বিতরণ শুরু হয়। প্রার্থীদের পক্ষে নেতা-কর্মী-সমর্থকরা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন পল্টন অফিস। প্রার্থীর পক্ষে জীবনী ও অঙ্গীকারসংবলিত লিফলেট ভোটারদের মধ্যে বিলি করা হয়। কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে করতে রিটার্নিং অফিসারসহ ছয় কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা হলেন কাউন্সিল, ২০১৯-এর রিটার্নিং অফিসার ফজলুল হক মিলন; সহকারী রিটার্নিং অফিসার শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আজিজুল বারী হেলাল; পোলিং অফিসার এ বি এম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

সর্বশেষ খবর