মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বড় ভাইয়ের নির্দেশ মেনে আবরারকে প্রহার

আদালতে রবিনের জবানবন্দি, অমিত বহিষ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক

বড় ভাইয়ের নির্দেশ মেনে আবরারকে প্রহার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় রিমান্ডে থাকা মেহেদী হাসান রবিন দোষ স্বীকার করেছেন। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জাল হোসেনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানিতে তিনি খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘বড় ভাইয়ের নির্দেশ মেনে আবরারকে সেই রাতে বেদম প্রহার করি।’ জবানবন্দি দেওয়ার পর রবিনকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহাকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আদালত প্রতিবেদক জানান, রিমান্ডে থাকার সময়ে রবিন ঘটনার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান তাকে আদালতে হাজির করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। পরে ঘটনার বিষয়ে বিচারকের সামনে বিস্তারিত বর্ণনা করেন। রবিন বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ছাত্র রবিন রাজশাহীর পবা উপজেলার কাপাসিয়া গ্রামের মো. মাকসুদ আলী ও রশিদা বেগমের ছেলে। রবিন বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র।

এই হত্যা মামলায় এর আগে বুয়েটছাত্র ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অনীক সরকার ও মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত আসামি শামীম বিল্লাহ ও মোয়াজ আবু হোরায়রাকে ৫ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। মামলা সূত্রে জানা গেছে, তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা রাজধানীর চকবাজার থানায় ১৯ জনের নামে বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে ১৯ আসামিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। আবরার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত কয়েক দিনে মোট ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। হত্যাকান্ডে  জড়িত হিসেবে যাদের নাম এসেছে, তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।

অমিতকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার : আবরার ফাহাদকে হত্যার সময় ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও’ ঘটনার সঙ্গে সে জড়িত ছিল বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে। ঘটনার সঙ্গে ‘যোগাযোগের প্রমাণ পেয়ে’ বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা অমিত সাহাকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন।

আলোচিত এ খুনের অন্যতম সন্দেহভাজন হিসেবে তার নাম আসার পরও মামলায় তার নাম না থাকা নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। পরে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সবুজবাগে আত্মীয়র বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত শুক্রবার ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সারাফুজ্জামান আনসারী তার জামিন নাকচ করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরাই যে ফেসবুকে মন্তব্যর সূত্র ধরে শিবির সন্দেহে আবরারকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে, তা সংগঠনটির তদন্তে উঠে এলে ১১ জনকে বহিষ্কার করা হয়। সোমবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অমিতকেও বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।

শেরেবাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর কক্ষে গত রবিবার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালিয়ে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়, সেই কক্ষেরই আবাসিক ছাত্র অমিত। সেদিন আবরারকে ওই কক্ষে ডেকে নেওয়ার আগে অমিত মেসেঞ্জারে আবরারের খোঁজ করেন তার এক সহপাঠীর কাছে, যার স্ক্রিনশট পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গত সোমবার দিনভর বুয়েটে তদন্ত চালিয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয় আরও নয়জনকে। এদের মধ্যে অমিতসহ চারজনের নাম আবরারের বাবার করা মামলার ১৯ আসামির তালিকায় ছিল না।

সর্বশেষ খবর