কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও চার সহযোগী সংগঠনের আসন্ন কাউন্সিল ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীদের পদভারে মুখরিত ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়। পদ-পদবি টিকিয়ে রাখা এবং প্রত্যাশীদের পদচারণায় প্রতিদিন উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে শোডাউন করছেন সহযোগী সংগঠনের পদপ্রত্যাশীরা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সভানেত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ এবং কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় পদপ্রত্যাশীরা অন্যকে টপকিয়ে নিজেকে শো-আপে মেতে ওঠেন। চলে সেলফির প্রতিযোগিতাও। গত দুই দিন সরেজমিন ধানমন্ডি সভানেত্রীর ও কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। গত দুই দিন সরেজমিন দেখা গেছে, বেলা ১১টা থেকেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করতে দেখা যায় নেতা-কর্মীদের। কেউ যান নিজের অবস্থান জানতে। আবার খ খ মিছিল নিয়ে কেউ যান নিজের অবস্থান জানান দিতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলেও নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ক্রমাগত বাড়তে থাকে। মিছিল আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে দলীয় কার্যালয়। অন্যদিকে ধানমন্ডি ৩/এ দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে বিকাল ৩টা থেকে মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার আগে কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এই ভিড় প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে। বুধবার বিকালে ধানমন্ডি কার্যালয়ে দেখা গেছে, বিকাল ৩টা থেকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা নেই। বিকাল ৫টায় সভানেত্রীর কার্যালয়ে প্রথমে আসেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। সাড়ে ৫টায় দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ যখন প্রবেশ করছিলেন তখন ১২-১৫ জন সাবেক ছাত্রনেতা তাকে ‘প্রটোকল’ দিয়ে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। কাউকে কাউকে সেলফি তুলতে দেখা যায়। পদপ্রত্যাশীদের সেলফি বাজিতে গোলাপের মুখে বিরক্তির ছাপ লক্ষ্য করা যায়। এর কিছু পরেই শতাধিক লোকের বহর নিয়ে সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে আসেন ঢাকা মহানগর উত্তরের কোষাধ্যক্ষ ওয়াকিল উদ্দিন। সন্ধ্যার পর সভানেত্রীর কার্যালয়ে একে একে প্রবেশ করেন দলের কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় সভানেত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়কে তার গাড়ি প্রবেশ করা মাত্রই গাড়ির দুই পাশে শত শত নেতা-কর্মী জড়ো হন। গাড়ি থেকে নেমে সভানেত্রীর কার্যালয়ে ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয় তাকে। এরপর দলীয় কার্যালয়ে আসেন দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান। তাদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। সভানেত্রীর কার্যালয়ে এসেছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহও। আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও সাবেক নেতাদের মধ্যে মুকুল বোস, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বদিউজ্জামান ভুইয়া ডাবলুকে কার্যালয়ে দেখা গেছে। সন্ধ্যার আগে থেকে খ খ মিছিল নিয়ে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগের নেতাদের সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে দেখা গেছে, যুবলীগের আবুল বাশার, মহিউদ্দিন মহি, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নির্মল রঞ্জন গুহ, গাজী মেসবাউল হক সাচ্চু, সাবেক ছাত্রনেতা শেখ সোহেল রানা টিপু, কৃষক লীগের সমীর চন্দ্র চন্দ। এ ছাড়াও সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে বুধবার দলীয় সভানেত্রী কার্যালয়ে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এসেছিলেন বলরাম পোদ্দার, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, গোলাম সরোয়ার কবির, সাইফুর রহমান সোহাগ। সাবেক ছাত্রনেতা ছাড়াও তারকা জগতের আকবর হোসেন পাঠান ফারুক এমপি, রানা হামিদ আসেন দলীয় কার্যালয়ে। ধানমন্ডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠানিক বৈঠক, আলাপ-আলোচনা, কর্মসূচি নির্ধারণ, আড্ডা ও আনুষঙ্গিক দাফতরিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের। ধানমন্ডি কার্যালয়ের সামনের দোকানগুলোতেও বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। জুসের দোকানি শামসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানালেন, আগের তুলনায় বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। উৎসুক নেতা-কর্মীদের ভিড়ে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার এক বাসিন্দা বললেন, নেতা-কর্মীদের ভিড়ে আমরা যারা স্থানীয় বাসিন্দা আছি, বিকালে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করা বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পায়ে হেঁটে আসা গেলেও গাড়ি নিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। গতকাল ও বুধবার সরেজমিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও তার আশপাশের এলাকার সড়কগুলোতে মানুষের জটলা দেখা গেছে। খ- খ- মিছিল, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে মুখরিত এলাকা। বুধবার সন্ধ্যায় বিশাল বহর নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে যান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বড় শোডাউন করতে দেখা যায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ রায়কে। তিনি আসন্ন সম্মেলনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে পঙ্কজ দেবনাথ, রফিকুল ইসলাম লিটন, সালেহ মোহাম্মদ টুটুল শোডাউন করেন। এ ছাড়াও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, মাহবুবুর রহমান হিরন, আব্দুস সাত্তারসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতাকে শোডাউন করতে দেখা গেছে। বসে নেই যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের নেতারাও। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর। আগামী ৬ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ২৩ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলনের নির্দেশনা রয়েছে। সে কারণে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনে পদপ্রত্যাশীদের ভিড় করতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা করে নেওয়ার প্রত্যাশায়ও ভিড় করছেন অনেকে।