সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুককে অব্যাহতি

গণভবনে ঢুকতে পারেননি শেখ মারুফ, কংগ্রেস কমিটির আহ্বায়ক চয়ন, সদস্য সচিব হারুন, বয়স সর্বোচ্চ ৫৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুককে অব্যাহতি

আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগ নিয়ে জিরো টলারেন্সে রয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা বিতর্কিতমূলক কর্মকান্ডে র অভিযোগ থাকায় যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীকে। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদিকে গতকাল গণভবনে প্রবেশ করতে পারেননি যুবলীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ। গণভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাকে ফটক থেকে ফিরে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া নানা অভিযোগ থাকায় যুবলীগের অপর দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি ও শেখ আতিয়ার রহমান দীপুকেও গণভবনের বৈঠকে যেতে দেওয়া হয়নি। গতকালের বৈঠকে যুবলীগের আসন্ন জাতীয় কংগ্রেসের প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামকে। সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। এ ছাড়া আগামী কংগ্রেস থেকে যুবলীগের পদ পেতে বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৫৫ বছর নির্ধারণ করা হয়। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের সবাইকে অব্যাহতি দিতে নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। ওমর ফারুক চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা করা হয়নি। তবে চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের ২৪ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৫ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ৯ জন ছাড়াও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল গতকাল বিকাল ৫টায়। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা গণভবনের সামনে আসেন। একে একে তারা গণভবনে প্রবেশ করেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে গণভবনের গেটে আসেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ। এ সময় তিনি নাম বললে, তার পাস নেই বলে জানিয়ে দেন নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তিনি চলে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সংগঠনের নেতারা জানান, বিতর্কিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের আগে থেকেই গণভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। গতকালের বৈঠকের জন্য প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ও আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিউর রহমান দিপুর নাম গণভবনে পাঠানো হলেও তাদের পাস দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে দুপুরের আগেই বিষয়টি জানতেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিউর রহমান দিপু। সে কারণে তিনি আসেননি। তারা আগামীতে যুবলীগের কোনো কর্মকান্ডে  সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। সংগঠনের জাতীয় কংগ্রেসেও তাদের সম্পৃক্ততা থাকবে না। নেতারা জানান, অতীতে আর কখনই সংগঠনের কংগ্রেসের আগে এ ধরনের বৈঠক হয়নি। কিছু নেতার বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে গণভবনে বৈঠকটি হয়।  বৈঠকের শুরুতেই সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান আমরা অব্যাহত রাখব। এক্ষেত্রে অপরাধীদের কোনো ক্ষমা নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা যখন দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই, স্বাভাবিকভাবেই কিছু মানুষের ভিতর একটা লোভের সৃষ্টি হয়। যার ফলাফল আমাদের সমাজটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। কাজেই এ ধরনের অন্যায়-অবিচার বরদাস্ত করা হবে না। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার মহানগরের দুই কমিটির সম্মেলন নিয়ে কথা বললে দলীয় সভানেত্রী এ নির্দেশ দেন। সূচনা বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদকে কথা বলার নির্দেশ দেন। এ সময় হারুনুর রশিদ সংগঠনের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসকে বহিষ্কার করার বিষয়টি বৈঠকে অবহিত করেন। একই সঙ্গে আগামী কাউন্সিলে নেতৃত্ব কে দেবেন, এ নির্দেশনা চান সাংগঠনিক নেত্রীর কাছে। এরপর প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, জাতির জনকের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী সংগঠন যুবলীগে এখন ইমেজ সংকট রয়েছে। সংগঠনে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্র থেকে সরাসরি থানা পর্যায়ে কমিটি দেওয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। জেলা নেতাদের নির্দেশনা মানেন না উপজেলা নেতারা। হারানো ইমেজ ফিরিয়ে আনতে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব আনতে হবে। এ সময় যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে কমিটি দেওয়ার অভিযোগ করেন সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন। তিনি বলেন, সাভার ও আশুলিয়া কমিটি গঠনে অর্থের বিনিময়ে অন্য দলের নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডিয়াম সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান কাউকে মানেননি। সবাইকে গালাগাল করতেন। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, নেত্রী যখন স্বপ্রণোদিত হয়ে ধরছেন, তখন কেন এসব বলা হচ্ছে? এতদিন তোমরা কোথায় ছিলে? আমাদের কাছেও তো কিছু বলনি? এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘থাক, কারোর কিছু বলতে হবে না। আমি সব জানি। তোমরা সবাই দায়ী। এসব কথা তোমরা আগে বলনি কেন? অনেকের সঙ্গেই তো আমার দেখা হয়েছে। অনেকেই তো গণভবনে এসেছ। কই কেউ তো কখনই কিছু বলনি? আমি যখন নিজেই উদ্যোগী হয়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করেছি, অপরাধীদের বিরুদ্ধে যখন ব্যবস্থা নিচ্ছি, তখন আর তোমাদের এসব কথা বলার দরকার নেই। ’ 

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে যুবলীগ চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার দরকার নেই। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কই কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করবেন। যুবলীগের বিতর্কিতদের যেন কোনো কাজে সম্পৃক্ত করা না হয়। একই সঙ্গে বর্তমান কমিটি কোনো কমিটি অনুমোদন বা ভাঙতে পারবে না।

কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলামের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, তোমাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। বদনাম না থাকায় তোমাকে দায়িত্ব দিলাম।

বয়স নিয়ে শেখ হাসিনার হাস্যরস : বৈঠকে যুবলীগের বয়সসীমা নিয়ে আলোচনা শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুকে উদ্দেশ করে বলেন, আগে বয়স কত ছিল? জবাবে আমু বলেন, নেত্রী আমি যখন চেয়ারম্যান হই তখন আমার ৩৮ বছর বয়স ছিল। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে এবার ৪৫ করে দিই, কী বলেন? এ সময় যুবলীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, নেত্রী এখন মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে পাঁচ বছর বাড়িয়ে দিই? এ সময় আমির হোসেন আমু বলেন, নেত্রী যেটা ভালো মনে করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে আরও বাড়াতে হবে? এ সময় এবারের কংগ্রেসে বয়স নির্ধারণ না করে আগামী কংগ্রেস থেকে নির্ধারণের অনুরোধ জানান প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও ফারুক হোসেন। জবাবে শেখ হাসিনা ফারুক হোসেনকে বলেন, জেলায় গিয়ে আওয়ামী লীগ কর। জেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের তরুণ নেতৃত্ব দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর