সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

উসকানি রোধে নিয়মিত মনিটরিং থাকতে হবে

জিন্নাতুন নূর

উসকানি রোধে নিয়মিত মনিটরিং থাকতে হবে

মে. জে. (অব.) আবদুর রশিদ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো উসকানিমূলক তৎপরতা এড়াতে আমাদের নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোনো ধরনের পোস্টিং জননিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হলে তা চিহ্নিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এজন্য আমাদের ডিজিটাল সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। ডিজিটাল সক্ষমতা তৈরি হলে কোনো বিপজ্জনক পোস্ট সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। তখন এর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তাও নেওয়া যাবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।  তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার হচ্ছে বৈশ্বিক একটি সমস্যা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের কারণে পৃৃথিবীর অন্য দেশগুলোতেও সোশ্যাল মিডিয়াকে নেতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী নয়। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন এটি মনিটরিংয়ের জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। অন্য দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট বাহিনী কোনো পোস্ট থেকে উত্তেজনা ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হলে তবে তা মনিটরিং করে। আবদুর রশীদ বলেন, আমাদের সংশ্লিষ্ট বাহিনীকেও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো পোস্ট আদান-প্রদানের মাধ্যমে যদি তা ভাইরাল হয় এবং তা থেকে যদি সমাজে উত্তেজনা তৈরির আশঙ্কা থাকে তবে এর প্যাটার্ন শনাক্ত করে এ ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ এখনো কিছুটা দুর্বল। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর যে মনিটরিং ব্যবস্থা তাতে সার্বিকভাবে তারা অনুধাবন করতে পারে না যে কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একটি পোস্ট ছড়িয়ে তা থেকে দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে আগে থেকে কোনো দাঙ্গা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। দাঙ্গা পরিস্থিতি শুরুর পর তারা বুঝতে পারেন যে নির্দিষ্ট একটি এলাকায় দাঙ্গা হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই কিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে যায়। এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে এমন সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেউ উসকানিমূলক পোস্ট ছাড়লে তা আটকে যায়। আর এটি দেখামাত্র সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী তা বিশ্লেষণ করে দেখে যে এটি কোনো ধরনের সংঘাত ছড়াবে কিনা। এটি যে খুব উচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তি তাও না। বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এটি ব্যবহারও করে। এর মাধ্যমে পূর্ব ধারণা অনুযায়ী কোনো একটি এলাকায় সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে কিনা এমন আশঙ্কার বিষয়ে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দেওয়া সম্ভব। আমাদেরও এমন সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যারা উসকানি ছড়ায় তাদের এটি করার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। সংঘাত ছড়ানোর জন্য তারা সংঘাতের উৎস হিসেবে কৃত্রিমভাবে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যারা এসব ছড়াচ্ছে তারা প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। সাধারণত আমরা দেখি ধর্মের নামে যেসব উত্তাপ ছড়ানো হয় সেগুলো আমাদের দেশে রাজনীতিকে প্রভাবিত করার জন্য ছড়ানো হয়। ধর্ম নিয়ে যে দলগুলো রাজনীতি করে তারাই মূলত এ ধরনের কাজ করে এবং উসকানিমূলক বিভিন্ন পোস্ট কে ছড়াবে এবং তা কীভাবে ভাইরাল করা হবে তার পরিকল্পনাও তারা আগে থেকে করে রাখে। এরপর এ ধরনের পোস্ট ভাইরাল করে মানুষকে উত্তেজিত করে আরেক পক্ষ গণপিটুনি বা দাঙ্গার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আমরা এ ধরনের পরিস্থিতিতে দেখেছি যে অনেক সময় বিধর্মীদের আক্রমণ করা হয়েছে। এর আগেও আমরা কক্সবাজারের রামুতে এ ধরনের পরিস্থিতি লক্ষ্য করেছিলাম। আর এ ধরনের ঘটনাগুলোর মধ্যে আমরা সামগ্রিকভাবে একটি প্যাটার্নের মিল পাই। আর বোরহান উদ্দিনের ঘটনাকেও সেই প্যাটার্নের একটি কপি বলে মনে হচ্ছে। ধারণা করছি ‘কপিক্যাট’ পরিকল্পনা নিয়েই এ ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। কিন্তু এর পেছনে রাজনীতি আছে। আবদুর রশীদ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এখন একটি আন্দোলনহীন অবস্থা বিরাজ করছে। শাসকদলের বিরোধী যারা আছে তারা কোনো উত্তেজনা তৈরি করতে পারছে না- যার মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করে রাস্তায় নামাতে পারবে। এজন্য তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

এর ফলে সরাসরি রাজনীতি না জড়িয়ে ধর্মকে সম্পৃক্ত করে গণমানুষকে উত্তেজিত করে তোলার চেষ্টা করছে। বর্তমানে ভোলার ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও এর সঙ্গে অতীতে উসকানিমূলক অন্য ঘটনাগুলোর প্যাটার্নের মিল পাওয়া যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর