শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বড় চমক

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বড় চমক

সম্মেলন ঘিরে এত দিন ছিল টানটান উত্তেজনা। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসছেন? পুরনোদের দায়িত্ব ‘নবায়ন’ হচ্ছে, না নেতৃত্বে আসছে পরিবর্তন?- এমন আলোচনাই ছিল সর্বত্র। শেষ পর্যন্ত গতকাল ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ঘোষিত হয়েছে আগামী দিনের সিলেট আওয়ামী লীগের কা ারিদের নাম। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেক হিসাব-নিকাশ ভুল প্রমাণ করে নেতৃত্ব ঘোষণায় চমক দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এসেছে বড় চমক। গতকাল বিকালে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের সম্মেলনে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দুই কমিটির চার পদে পদপ্রত্যাশী ছিলেন ৩২ জন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন তিনি। জেলা সভাপতি হয়েছেন অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান আর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। অন্যদিকে মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন যথাক্রমে মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির হোসেন। জেলা কমিটিতে চমক দেখিয়েছেন লুৎফুর রহমান। গত কয়েক বছর থেকে বয়সের ভারে ন্যুব্জ লুৎফুর রহমান নিজেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ দায়িত্বে না থাকার কথা জানিয়ে আসছিলেন। বয়সের কারণে তিনি রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। দলীয় কার্যক্রমেও তার অনুপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। ফলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছিল বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর নাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সর্বজনশ্রদ্ধেয় আজন্ম দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতা লুৎফুর রহমানেই আস্থা রাখে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির সহসভাপতি শাহ ফরিদ আহমদ, যুগ্মসম্পাদক নিজাম উদ্দিন ও সুজাত আলী রফিকের নাম আলোচিত হলেও শেষ পর্যন্ত নাসির উদ্দিন খানই আসীন হয়েছেন এ পদে।

সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্যঘোষিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। মহানগরের সভাপতি হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও ছিলেন তিনি। তবে পদ পাওয়ার দৌড়ঝাঁপে তিনি ছিলেন সবার পেছনে। নেত্রীর ওপর আস্থা রেখে তিনি অনেকটা নীরবই ছিলেন। সেই আস্থার প্রতিদান হিসেবে তিনি পেয়েছেন মহানগর সভাপতির দায়িত্ব। সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের স্থলাভিষিক্ত হওয়াটা বড় চমক হিসেবেই দেখছেন নেতা-কর্মীরা। অধ্যাপক জাকির হোসেন মহানগর সাধারণ সম্পাদকের পদপ্রত্যাশী হলেও তদবিরের দৌড়ে তিনি ছিলেন অনেক পিছিয়ে। এ পদ পেতে সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, যুগ্মসম্পাদক বিজিত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদসহ অন্তত ১০ জন নেতা লবিংয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ‘ক্লিন ইমেজের’ আসাদের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে আরেক ‘ক্লিন ইমেজধারী’ জাকিরকে।

উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন : দীর্ঘ ১৪ বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে পুরো নগর ঢেকে যায় ব্যানার-ফেস্টুনে। দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজানো হয় সম্মেলনস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠও। দুপুরে ঢাকা থেকে অতিথিরা এসে যোগ দেন সম্মেলনে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের পরিচালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, উপদেষ্টাম লীর সদস্য ইনাম আহমদ চৌধুরী।

টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া যায় না : ওবায়দুল কাদের

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ওবায়দুল কাদের বলেন, টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের নেতা হতে হবে যোগ্যতা দিয়ে, ত্যাগ দিয়ে, তিতিক্ষা দিয়ে। সময়ের সুবিধাবাদীদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গায়। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা ওড়ায়। আওয়ামী লীগ বীরের রক্ত ছুঁয়ে ঝড়ের বিরুদ্ধে, অন্ধকারের বিরুদ্ধে, দুর্যোগের বিরুদ্ধে দৃপ্ত পদভারে এগিয়ে যায়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, সময়ের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দুজন সেরা প্রধানমন্ত্রীর একজন, বিশ্বের চারজন প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়কের একজন এবং তিনজন সৎ নেতার মধ্যে একজন। তিনি গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর