মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের একের পর এক আত্মসমর্পণের খবর আসছিল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। সে সময় দেখেছি আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো মানসিক শক্তিটুকুও পাকিস্তানি সেনাদের ছিল না। স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষের দিকে। কুমিল্লার শালদা নদীর মন্দবাগ সাব-সেক্টর ক্যাম্পে আমাদের অবস্থান ছিল। খুব সম্ভবত ৩ ডিসেম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খালেদ মোশাররফ হেডকোয়ার্টারে আসেন। নির্দেশ দেন ‘মুভ টু চিটাগাং’। ব্যাটালিয়নসহ যুদ্ধ করতে করতে চট্টগ্রাম যেতে হবে। নির্দেশমতো ৩ ডিসেম্বরই শালদা নদীর মন্দবাগ ক্যাম্প ক্লোজ করে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করি। প্রথম টার্গেট নির্ধারণ করা হয় শালদা নদী টু ফেনী। ৫ কিংবা ৬ ডিসেম্বর ফেনী পৌঁছাই। এর আগেই হানাদার বাহিনী ফেনী ছেড়ে পিছু হটে চট্টগ্রামের দিকে। কিন্তু পিছু হটার সময় ফেনী নদী পার হওয়ার একমাত্র শোভাপুর সেতুটি ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। সেখানে এক দিন
অপেক্ষা করে স্থানীয়দের সহায়তায় নৌকা জোগাড় করে দিনভর পুরো ব্যাটালিয়ন নিয়ে নদী পার হই। শোভাপুর নদী পার হয়ে প্রধান সড়কের একটি শাখা রোড সীতাকু হয়ে চট্টগ্রাম চলে যাই। আরেকটি শাখা রোড রামগড় হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে যায়। এর মধ্যে কর্নেল খালেদ মোশাররফ যুদ্ধে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার আনন্দ স্বরূপ হন খালেদ মোশাররফের স্থলাভিষিক্ত। তিনি আমাদের বাহিনীকে দুই ভাগে বিভক্ত করলেন। এক ভাগ কর্নেল জাফর ইমামের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যাত্রা করে। আরেক ভাগ আমার নেতৃত্বে হায়াকু বাজার হয়ে হাটহাজারী, নাজিরহাট ও ফটিকছড়ি হয়ে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। নাজিরহাটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্যের বিরুদ্ধে মুখোমুখি যুদ্ধ হয় আমাদের। তারা আমাদের কৌশল আর যুদ্ধংদেহী মনোভাবের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে না পেরে যুদ্ধ বন্ধ করে চট্টগ্রামের দিকে পিছু হটে। তারা নাজিরহাট কলেজের দক্ষিণে নদীর পাড়ে অবস্থান নিয়ে ফের আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। আমরা বাধা পেয়ে থেমে যাই। পরে নদী পার হয়ে পশ্চিমে হেঁটে একটি চা বাগানে উঠি এবং পূর্বমুখী হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আচমকা হামলা চালাই। দীর্ঘক্ষণ গুলিবিনিময়ের পর হানাদার বাহিনী বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তারা চট্টগ্রামের দিকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। আমরা নাজিরহাট কলেজ দখলে নিই। এ যুদ্ধে আমাদের একজন সেনা শহীদ হন। তাকে সড়কের পাশে সমাহিত করে চট্টগ্রামের দিকে যাত্রা করি। হানাদার বাহিনীও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চট্টগ্রামের দিকে পিছু হটতে থাকে। ১৫ ডিসেম্বর বিকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উঠি। সেখানে বেজ ক্যাম্প তৈরিসহ সেনা মোতায়েন করে চারদিকে টহলের ব্যবস্থা করি। আমরা পাকিস্তানি হানাদারদের চট্টগ্রাম শহরের দিকে যেতে বাধ্য করি। ১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকেই প্রচার হতে থাকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে। মূলত তখনকার অবস্থায় পলায়নপর পাকিস্তানি সেনাদের যুদ্ধ করার মতো মানসিক শক্তি একটুও অবশিষ্ট ছিল না। ১৬ ডিসেম্বর দুপুর। চট্টগ্রাম ক্লাব ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্রসমর্পণের মূল পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর রাতে বিজয় উদযাপন করা হয়। আমরা চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হলাম। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। অনুলিখন : জয়শ্রী ভাদুড়ী
শিরোনাম
- কুমিল্লা বোর্ডে ফেল থেকে পাশ ১০৮ জন
- আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন অভিনেত্রী মেহজাবীন
- সোমবার সারা দেশে যানবাহন চলবে : পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন
- ব্রিতে নবান্ন উৎসব উদযাপিত
- বগুড়ায় গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা
- নবীনগরে কার্যত্রম নিষিদ্ধ আ.লীগের তিন নেতা গ্রেপ্তার
- একযুগের বেশি পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষকদের কর্মবিরতি
- আর্মি অর্ডন্যান্স কোরের ৪৫তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- বিইউবিটিতে ‘জব হান্টিং ২.০’ শীর্ষক সেশন অনুষ্ঠিত
- সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য করণীয় সব কিছুই করছে ইসি : আনোয়ারুল
- ‘দেশের মানুষ মনে করে হাসিনাকে আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি দেবেন’
- সাবেক মন্ত্রী মায়া ও তার স্ত্রীর নামে দুদকের দুই মামলা
- ফ্যাসিবাদী শক্তি মোকাবিলায় জনগণ সক্রিয় থাকবে : আমানউল্লাহ
- কুয়েতে হোমনা প্রবাসীদের মিলনমেলা ও পিঠা উৎসব
- বিয়ের আশায় ১৭ দিনের নবজাতককে হত্যা করল ৪ খালা
- ইথিওপিয়ায় প্রথমবারের মতো মারাত্মক মারবার্গ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
- চট্টগ্রাম কলেজে শিক্ষক সংকটে বিঘ্নিত গুণগত শিক্ষা
- স্কুল-কলেজের সভাপতির দায়িত্বে ইউএনও–ডিসি
- রূপগঞ্জের গোলাম ফারুক খোকন বিএসটিএমপিআইএ'র সভাপতি
- ২০২৬ সালে ব্যাংকের ছুটির তালিকা প্রকাশ
মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলে পাকি সেনারা
কর্নেল এইচএমএ গাফফার (অব.) বীরউত্তম
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর