শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আসামে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ গুলিতে নিহত ২

বাংলাদেশ উপমিশনে নিরাপত্তা জোরদার

প্রতিদিন ডেস্ক

আসামে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ গুলিতে নিহত ২

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে গুয়াহাটি।

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে ভারতের আসাম রাজ্যে রাতভর বিক্ষোভের পর গতকাল সেখানে হাজার হাজার  সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত দুই জন। বিক্ষোভকারীরা রাজধানী গুয়াহাটিতে কারফিউ ভঙ্গ করে দোকানপাট ও যানবাহনে আগুন দেয়। রেলস্টেশনেও ভাঙচুর চালায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। রাজ্যসভায় আইনটি পাস হওয়ার পরই  সহিংস বিক্ষোভ  শুরু হয়। বিভিন্ন বার্তা সংস্থা জানায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাশ্মীরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সেনাবাহিনীর কিছু ইউনিটকে আসামে আনা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াালসহ বেশ কজন বিজেপি নেতার বাড়িঘরে হামলা করেছে। উত্তেজনা প্রশমনের জন্য রাজ্যের ১০টি জেলায় মোবাইল ফোন সংযোগ ও ইন্টারনেট গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসসহ ভারতের বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল সংসদে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল বা সিএবি নামে পরিচিত এই বিতর্কিত বিলটির বিরোধিতা করেছে। ভারতের বিভিন্ন মুসলিম দলের নেতারাও বিলটিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। আসামে যারা এই বিলের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাদের বক্তব্য, এই বিলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসামে আরও বেশিসংখ্যক বাঙালি হিন্দুর আসার পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। আসামে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় অহমীয়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাভাষী জনগণের বিরোধ চলছে। গতকাল এনডিটিভি অনলাইনের খবরে জানা যায়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কারফিউ ভেঙে বের হওয়া বিক্ষোভকারীদের তাড়ানোর জন্য ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক দিনের বিক্ষোভে ২০ থেকে ৩০ জন আহত হয়েছেন। বেশ কিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছে। ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েক হাজার অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ত্রিপুরা ও আসামের সব ট্রেন এবং উড়োজাহাজের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। বেসামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করতে বলা হয়েছে।

অহমীয়াদের প্রতি মোদির আশ্বাস : আসাম অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছেন, এই আইনটি নিয়ে আসামের বাসিন্দাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। ইংরেজি এবং অহমীয়া ভাষায় পাঠানো একের পর এক টুইট-বার্তায় মোদি বলছেন, আসাম চুক্তির অনুচ্ছেদ ছয়কে রক্ষা করার জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে এবং কেন্দ্রীয় সরকার সম্ভাব্য সবকিছুই করবে। এই চুক্তিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের রাজনৈতিক, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক এবং ভূমির অধিকারকে হেফাজত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

আইনের বিরুদ্ধে মামলা : নাগরিকত্ব আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ (আইইউএমএল) গতকাল আদালতে মামলা করেছে। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা এক আর্জিতে আইইউএমএল বলছে, এই আইনটি ভারত সংবিধানের সাম্য, মৌলিক অধিকার এবং জীবনের অধিকার সংক্রান্ত বিধানগুলোকে ভঙ্গ করছে।

গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ উপ-মিশনের নিরাপত্তা জোরদার : ভারতের গুয়াহাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-মিশনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভারতের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ‘বিতর্কিত’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাসকে  কেন্দ্র করে আসাম রাজ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় এবং কারফিউ জারি করায়, বাংলাদেশ উপ-মিশনের নিরাপত্তা  জোরদার করা হয়। গতকাল রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে, গত বুধবার বিল পাসকে কেন্দ্র করে গুয়াহাটি শহরে লোকজন বিক্ষোভ শুরু করলে বিমানবন্দরে গুয়াহাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনারের গাড়ি আক্রমণের শিকার হয়।

পরে বিমানবন্দর থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনারকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর