শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
নাগরিকত্ব আইন বাতিল দাবি

ভারতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভে

একে একে বন্ধ করা হচ্ছে মোবাইল পরিষেবা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে গতকাল ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। ব্যাপক লাঠিচার্জ এবং গ্রেফতার অভিযান চালিয়েও এ বিক্ষোভ ঠেকানো যায়নি। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ বিক্ষুব্ধ

অঞ্চলগুলোতে একের পর এক মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিচ্ছে। এদিকে ম্যাঙ্গালুরুও লখনৌতে তিন বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, সারা দেশে নাগরিকত্ববিরোধী বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে পুলিশ। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে গতকাল লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন রাজধানী দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, কর্ণাটক, পাটনা, চ-ীগড়, কলকাতাসহ ১০টি রাজ্যের শহরগুলোতে। এ সময় গণহারে গ্রেফতার করা হয়েছে বিক্ষোভকারীদের। এক হিসাব অনুযায়ী, এক দিনেই অন্তত দেড় হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেঙ্গালুরুর খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ও সরকারের

সমালোচক রামাচান্দ গুহও রয়েছেন। তিনি জানান, তিনি ভারতের মোহনদাস গান্ধীর একটি ছবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিলেন, তখন তাকে পুলিশ আটক করে। এ ছাড়া বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে লখনৌয়ে নিহত হয়েছেন এক বিক্ষোভকারী।

তার নাম মহম্মদ ভাকিল। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ভাকিল নিহত হন বলে জানা গেছে। এদিন সকাল থেকেই লখনৌ ও উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি জায়গায় তা-ব চালান বিক্ষোভকারীরা। তারা বাস, গাড়ি, পুলিশ  থানা ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ করেন। উত্তেজিত জনতাকে ঠেকাতে পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, বিক্ষোভ ঠেকাতে দিল্লির সঙ্গে জয়পুরকে সংযুক্ত করা মহাসড়কে পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করা সব গাড়িতে তল্লাশি করছে। এতে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়েছে এবং অনেকেই তাদের বিমানযাত্রার নির্ধারিত ফ্লাইট ধরতে পারেননি। দিল্লির বেশ কয়েকটি মেট্রো স্টেশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুপুরের দিকে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শত শত সাধারণ মানুষ জোহরের নামাজ আদায় করেছেন। এ সময় তাদের চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেন হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা। কলকাতা ও বিহারে বামপন্থিরা বিশাল বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে। তাদের ডাকে এ দুই জায়গায় সর্বাত্মক বন্ধ পালিত হয়েছে। দিল্লিতে মোবাইল পরিষেবা কেন বন্ধ রাখা হয়েছে, সে প্রশ্নে এয়ারটেল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের জানিয়েছে, সরকারি নির্দেশে দিল্লির কয়েকটি জায়গায় মোবাইল ইন্টারনেট, ভয়েস কল ও এসএমএস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সীলামপুর ব্রিজপুরী, দিল্লির আইটিও এবং উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। খবরে আরও জানা গেছে, দিল্লির মান্ডি হাউস এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গতকাল পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচরি, সিপিআই সাধারণ সম্পাদক ডি. রাজা, কংগ্রেস নেতা সন্দীপ দিক্ষীত। বিক্ষোভের জেরে দিল্লিতে অন্তত ১৪ মেট্রো রেল স্টেশন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এদিন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মৌন মিছিলে অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন ক্লাব থেকে শুরু হয়ে এ মিছিল যায় পুরানি চুঙ্গি এলাকা পর্যন্ত। মিছিলে বিশাল অংশে ছিলেন নারী শিক্ষকরা। অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়েছে যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশেও। রাজ্যটির একাধিক জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। একাধিক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও সম্বল জেলা ও লখনৌয়ের একাধিক স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মাধেগঞ্জ এলাকায় একাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সম্বলে পোড়ানো হয় কয়েকটি সরকারি বাস। হাসানগঞ্জে থানায় ঢুকে পুলিশের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ বলছে, কেবলমাত্র লখনৌয়ে ২০ মোটরসাইকেল, ১০টি গাড়ি, তিনটি আস, চারটি গণমাধ্যমের ওবি ভ্যান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশাল সংখ্যক বিক্ষোভকারী জমায়েত হন কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুর টাউন হলের সামনে। বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক রিজওয়ান আরশাদসহ অনেককে গ্রেফতার করে পুলিশ। মুম্বাইয়ের ক্রান্তি ময়দানেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। সেখানে অংশ নেন হুমা কুরেশি, সুশান্ত সিং, রাহুল বোস, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, ফারহান আখতারের মতো সেলিব্রেটি তারকারাও। অন্যদিকে কলকাতার ধর্মতলার রানী রাসমণি এভিনিউয়ে সভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নাগরিকত্ব আইন নিয়ে জাতিসংঘের অধীনে গণভোট দাবি করেন। এদিকে সন্ধ্যায় দিল্লিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনেও দলের কোর কমিটির বৈঠক বসে। এ সময় ২৮ ডিসেম্বর দেশজুড়ে ‘ভারত বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও’ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক : বিক্ষোভ সামাল দিয়ে করণীয় কী হবেÑ তা ঠিক করতে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানা যায়নি।

বিবিসি জানায়, আসামের গুয়াহাটিতে যে সহিংসতা হয়েছিল, তার জন্য সরকার দায়ী করছে মুসলমানদের একটি দল এবং কংগ্রেসের কয়েকজন মুসলমান নেতাকে।

 তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে ‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’ নামে মুসলিমদের ওই সংগঠনটি তাদের কোনো সদস্যের সহিংসতায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করছে।

বিক্ষোভের আরও খবর : দিল্লির মান্ডি হাউজ এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গতকাল পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচরি, সিপিআই সাধারণ সম্পাদক ডি. রাজা, কংগ্রেস নেতা সন্দীপ দিক্ষীত। বিক্ষোভের জেরে দিল্লিতে অন্তত ১৪ মেট্রো রেল স্টেশন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এদিন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মৌন মিছিলে অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন ক্লাব থেকে শুরু হয়ে এ মিছিল যায় পুরানি চুঙ্গি এলাকা পর্যন্ত। মিছিলে বিশাল অংশে ছিলেন নারী শিক্ষকরা। অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়েছে যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশেও। রাজ্যটির একাধিক জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। একাধিক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও সম্বল জেলা ও লখনৌয়ের একাধিক স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মাধেগঞ্জ এলাকায় একাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সম্বলে পোড়ানো হয় কয়েকটি সরকারি বাস। হাসানগঞ্জে থানায় ঢুকে পুলিশের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ বলছে, কেবলমাত্র লখনৌয়ে ২০ মোটরসাইকেল, ১০টি গাড়ি, তিনটি আস, চারটি গণমাধ্যমের ওবি ভ্যান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া বিশাল সংখ্যক বিক্ষোভকারী জমায়েত হন কর্নাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুর টাউন হলের সামনে। বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক রিজওয়ান আরশাদসহ অনেককে গ্রেফতার করে পুলিশ। মুম্বাইয়ের ক্রান্তি ময়দানেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। সেখানে অংশ নেন হুমা কুরেশি, সুশান্ত সিং, রাহুল বোস, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, ফারহান আখতারের মতো সেলিব্রেটি তারকারাও। চন্ডীগড়ে সিএএ এবং এনআরসির প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। চেন্নাইতে বিজেপি ও এআইএডিএম-এর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। তেলেঙ্গানায় শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়। বিহারে বাম শিক্ষার্থী সংগঠনের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি অ্যাম্বুলেন্সও। পাটনা, দ্বারভাঙাসহ একাধিক জায়গায় ট্রেন চলাচলে প্রভাব পড়েছে, বাস চলাচলও ছিল প্রায় বন্ধ। রাজেন্দ্রনগর বাস টার্মিনালে রীতিমতো তা ব চালায় অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন (এআইএসএফ) নামে একটি সংগঠন। কলকাতায় মৌলালির রামলীলা ময়দানেই ১৭টি বাম দল জমায়েত করে। তারা মিছিল করে পার্ক সার্কাস ময়দানে লেডি ব্রাবোর্ন কলেজের সামনে পর্যন্ত যায়।

অন্যদিকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে কলকাতার ধর্মতলার রানী রাসমণি এভিনিউয়ে সভা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এ সময় তিনি নাগরিকত্ব আইন নিয়ে জাতিসংঘের অধীনে গণভোট দাবি করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর