শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সরু পথে ঠেলা ধাক্কাধাক্কি

তাবিথের ওপর হামলায় ইসিতে দুই তদন্ত প্রতিবেদন, তাবিথ ও কাউন্সিলর প্রার্থীকে সতর্ক করে চিঠি, অধর্তব্য অপরাধ- বলছে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটের অভিমত- ফৌজদারি সংশ্লিষ্ট

গোলাম রাব্বানী

সরু পথে ঠেলা ধাক্কাধাক্কি

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দারুস সালাম থানা পুলিশ। গতকাল রিটার্নিং অফিসারের কাছে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করে রিটার্নিং অফিসার আবুল কাসেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি যে প্রতিবেদন পেয়েছি তা কমিশনে পাঠিয়ে দেব।

পুলিশ তার তদন্ত প্রতিবেদনে হামলাকে মামুলি ঠেলা-ধাক্কাধাক্কি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, এটা অধর্তব্য অপরাধ। তবে ম্যাজিস্ট্রেট তার প্রতিবেদনে বলেছেন- তাবিথ আউয়ালের আনীত অভিযোগ ফৌজদারি অপরাধ সংশ্লিষ্ট। যা মোবাইল কোর্টে নয়, দন্ডবিধি-১৮৬০ মতে বিচার্য। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাবিথ আউয়াল মিছিলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে আগে কিছু জানাননি। প্রচারণার বিষয়টি আগে থানাকে অবহিত করলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। এদিকে তাবিথ আউয়াল ও সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর প্রার্থীকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছেন উত্তরের রিটার্নিং অফিসার।

রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দেওয়া প্রতিবেদনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান শাহারীয়ার বলেছেন, তাবিথ আউয়ালের আনীত অভিযোগ ফৌজদারি অপরাধ সংশ্লিষ্ট, যা মোবাইল কোর্টে নয়, দন্ডবিধি-১৮৬০ মতে বিচার্য। এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার আবুল কাসেম বলেন, বিস্তারিত তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিস্তারিত তদন্ত তো ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করা যাবে না। এটার জন্য সময় প্রয়োজন। আমি যে প্রতিবেদন পেয়েছি তা কমিশনে পাঠিয়ে দেব। কমিশন নিশ্চয় এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে তাই তাবিথ আউয়াল ও সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর প্রার্থীকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছি। তাতে বলেছি, যেন প্রচারে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশ ও ইসিকে বিষয়টি জানায়।

রিটার্নিং অফিসারের কাছে দারুস সালাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহমেদ একটি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়- পুলিশকে অবহিত না করেই গত ২১ জানুয়ারি সকালে তাবিথ আউয়াল কর্মী-সমর্থক নিয়ে গাবতলী পর্বতা সিনেমা হল এলাকায় প্রচারণা চালান। সাড়ে ১১টার দিকে বড়বাজারের দিকে যায়। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সরোয়ার মাসুমের নেতৃত্বে সমর্থকরা প্রচারণা চালিয়ে গলিপথ হতে মেইন রাস্তার দিকে এগিয়ে যায়। উল্টো দিক থেকে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা মুখোমুখি হয়ে পড়ে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়- ‘সরু রাস্তায় দুই দলের নেতা-কর্মী সমর্থকরা মুখোমুখি হওয়ায়, তাদের মাঝে ঠেলা, ধাক্কাধাক্কি হতে থাকে মর্মে জানা যায়। দুই দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা মুখোমুখি হয়ে পড়লে এলাকায় টহলে থাকা পুলিশ তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষকে দুই রাস্তায় সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে উভয় পক্ষ নিজেদের মতো করে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালায়। যা অধর্তব্য প্রকৃতির অপরাধ বলে স্থানীয় প্রকাশ্যে ও গোপনে জিজ্ঞাসাবাদে প্রতীয়মান হয়। এ সংক্রান্ত আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর পূর্বে থানাকে অবহিত করা হলে এহেন পরিস্থিতির হয়তো উদ্ভব হতো না। পূর্ব হতে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হতো।’ এর আগের আরেক ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলছেন-বিএনপির ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল নির্বাচনী প্রচারণা শুরু থেকে দারুস সালাম থানা এলাকায় যে কয়েকদিন প্রচারণা চালিয়েছেন তা সম্পর্কে দারুস সালাম থানায় পত্র মারফত বা মৌখিকভাবে কখনো জানানো হয়নি।

গত ১২ জানুয়ারি তাবিথ আউয়াল বেলা ১১টার দিকে শাহআলী থানার শাহআলী মাজারের সামনে তার দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে থাকেন। অন্যদিকে সকাল ১০টা থেকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের পক্ষে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক দারুস সালামের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা করতে থাকেন। এ সময় তাবিথ আউয়ালের পক্ষে বিএনপি সমর্থিত নেতা-কর্মীরাও বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছিল। ছাত্রদল ও যুবদল কর্মীরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় মেয়র প্রার্থীকে আগে নিতে চাইলে নিজেদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বে তারা শাহআলীর উত্তর বিশিল এলাকায় গিয়ে প্রচারণা চালায়। উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি গাবতলীতে তাবিথ আউয়াল অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট থানা এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা দেন রিটার্নিং অফিসার।

তাবিথ ও কাউন্সিলর প্রার্থীকে সতর্ক করে চিঠি

ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম বলেছেন, মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সরোয়ার মাসুম নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তাদের সতর্ক করে চিঠি দিচ্ছি। গতকাল আগারগাঁওয়ের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, কোনো এলাকায় প্রচারণায় যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করতে হয়। তারা দুজনেই সেটি করেননি। তাই তাদের সতর্ক করে

চিঠি দেওয়া হবে। আবুল কাসেম বলেন, প্রার্থীদের গণসংযোগে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে থানাকে অবহিত করার পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তাকেও জানাতে হবে। এটা না করায় দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দারুস সালাম থানাকে আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছিলাম। তারা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা সেটি কমিশনে পাঠাব। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। ব্যক্তি বা দল আমাদের কাছে বড় নয়। কেউ যদি আচরণবিধি ভঙ্গ করে, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

তাবিথের বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ নিয়ে ইসিতে বিচারপতি মানিক : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ করেছেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। গতকাল নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের কোম্পানি এনএফএম এনার্জির (সিঙ্গাপুর) তিনজন শেয়ারহোল্ডার আছেন, তাদের একজন তাবিথ আউয়াল, অন্য দুজন তার সহযোগী। তিনজন মিলে এই কোম্পানির সব শেয়ারের মালিক। কোম্পানিটির মূল্য দেখিয়েছে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে। এটা বিশ্বের যে কোনো দেশের টাকার অর্থেই বেশ বড়। কিন্তু এই তথ্য তাবিথ তার হলফনামায় উল্লেখ করেননি। তার মনোনয়ন আইনত বাতিল হতে বাধ্য। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আইন তো পরিষ্কার যে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকলে উনি নির্বাচনের অযোগ্য। সমস্যা হচ্ছে সময়টা খুব কম। তাবিথ নির্বাচনে জিতে গেলেও টিকতে পারবেন না যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে রবিবার একটি রিট আবেদন করার চিন্তা করছেন বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি যখন আমার চোখে এসেছে। আমার বিবেকে লেগেছে। আমি দেশের একজন নাগরিক। আমি ব্যক্তিগতভাবে করেছি এটা।

সর্বশেষ খবর