বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি

আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৮ লাখ, মৃত্যু ৪০ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বিশ্বে এ পর্যন্ত গোটা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আট লাখ ২৩ হাজার ৪৭৯ জন। মারা গেছেন ৪০ হাজার ৬৩৬ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ৭৪ হাজার ১৯ জন। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মধ্য-আফ্রিকার দেশ রিপাবলিক অব কঙ্গোর সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকস জোয়াকিম ইয়োমবি-ওপানগো। মিয়ানমারে গতকাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানে তাবলিগ জামাত থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন গত ৪ মার্চ যে চিকিৎসকের সঙ্গে করমর্দন করেছিলেন সেই চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। আক্রান্তের ব্যাপকতার দিক থেকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যে চীনে প্রথম করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল সেখানকার মৃত্যুর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যু। অবশ্য এর আগেই চীনের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া ইতালি। করোনায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ইতালিতে। মিয়ানমারে প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে গতকাল। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। মিয়ানমার সরকারের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এর আগে সোমবার পর্যন্ত মিয়ানমারে ১৪ জন শনাক্ত হয়েছিল বলে জানানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুসারে, রাশিয়ায় একদিনে করোনাভাইরাসে শনাক্ত ৫০০ জন। যুক্তরাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্পেনে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। মারা গেলেন ৮৪৯ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৮১৮৯ জন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চারজনে তিনজন কোনো না কোনোভাবে লকডাউন অবস্থায় আছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপে লকডাউনের কারণে সম্ভবত বেঁচে গেছেন ৫৯ হাজার মানুষ। ইরানে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ। করোনারোধে সহায়তা করতে ভেনেজুয়েলায় চীনের স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।

কঙ্গোর সাবেক প্রেসিডেন্টের মৃত্যু : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মধ্য-আফ্রিকার দেশ রিপাবলিক অব কঙ্গোর সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকস জোয়াকিম ইয়োমবি-ওপানগো। বিবিসি জানায়, তিনি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মারা গেছেন, তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। ওপানগোর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত দেশটির নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৭৯ সালে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেনিস স্যাসু এনগুয়েসু ওপানগোকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।

১৯৯১ সালে দেশটিতে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হয়। তার আগে বেশ কয়েক বছর কারাগারেই কাটাতে হয় ওপানগোকে। তবে ১৯৯৭ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গৃহযুদ্ধ শুরু হলে প্যারিসে নির্বাসনে যান ওপানগো। সেখানেই কয়েকদিন আগে তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।

দিল্লির মসজিদে তাবলিগ জামাত, করোনায় ৬ জনের মৃত্যু : ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি মসজিদের তাবলিগ জামাতে অংশ নেওয়ার পর ছয় ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে তেলেঙ্গানায়। জামাতে অংশ নেওয়ায় তারা করোনায় আক্রান্ত হন এবং মঙ্গলবার তাদের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে কাশ্মীরের শ্রীনগরেও একজনের মৃত্যু হয়, তিনিও ওই জামাতে অংশ নেন। ভারতীয় টেলিভিশন এনডিটিভির অনলাইন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১ থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে দিল্লির ওই মসজিদে অন্তত দুই হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল। দিল্লিতে ওই মসজিদে শুধু ভারত নয় সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কিরগিজিস্তান থেকেও অনেকে অংশ নিয়েছিলেন।

পাকিস্তানে তাবলিগ জামাতের ৩৬ সদস্য আক্রান্ত : পাকিস্তানের হায়দারাবাদে তাবলিগ জামাতের ৩৬ সদস্যের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে দেশটির সিন্ধু প্রদেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। আক্রান্তরা সবাই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে তারা, জানিয়েছে ডন। এ নিয়ে হায়দরাবাদ শহরে কভিড-১৯ আক্রান্ত মোট ৪৩ জন শনাক্ত হলো বলে সিন্ধুর স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মীরন ইউসুফ জানিয়েছেন। ইউসুফ জানান, সিন্ধুতে করাচির পর তাবলিগ জামাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম কেন্দ্র নূর মসজিদ থেকেই এ ৩৬ জনের খোঁজ মিলেছে। ডন জানিয়েছে, দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮০০ জন।

ব্রিটেনে মৃতের সংখ্যা ১৪০০ ছাড়িয়েছে : যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি জানান, ব্রিটেনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে। সোমবার দেশটিতে মারা যায় ১৮০ জন। এর মধ্যে ইংল্যান্ডে ১৫৯ জন, ওয়েলসে ১৪ জন, স্কটল্যান্ডে ছয়জন ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে একজন। এ ছাড়া ব্রিটেনজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। ডেইলি মেইল জানায়, গত দুই দিনের তুলনায় সোমবার মৃতের সংখ্যা কমেছে। এ নিয়ে টানা দুই দিন কমল মৃতের সংখ্যা। এর আগে রবিবার মারা যায় ২০৯ জন ও শনিবার ২৬০ জন। মৃতের সংখ্যা কমলেও স্বস্তি মিলছে না। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা ফের বাড়তে পারে। এদিন প্রথমবারের মতো হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়া রোগীদের সংখ্যাও সরকারি হিসাবে যোগ করা হবে। এতদিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের সংখ্যা হিসাবে যোগ করা হয়নি। ডেইলি মেইল জানায়, ব্রিটেনজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আনুমানিক ২০ লাখের বেশি হতে পারে। কেননা, সরকার কেবল সেসব রোগীদেরই পরীক্ষা করছে, যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রিন্স চার্লস : ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছেলে ও ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লস করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়ার পর সেলফ আইসোলেশনে ছিলেন প্রিন্স অব ওয়েলস। তবে তিনি এখন সেলফ আইসোলেশন থেকে বের হয়েছেন। চার্লসের স্ত্রী ক্যামেলিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। তারপরও তিনি এক সপ্তাহের জন্য সেলফ আইসোলেশনে থাকবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর