মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

দেশের ৮০ শতাংশ আক্রান্ত বিদেশ ফেরত নন

নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক লোকাল ট্রান্সমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে কেবল একজন দেশের বাইরে থেকে এসেছেন। রবিবার পর্যন্ত জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটউটের (আইইডিসিআর) দেওয়া তথ্যানুসারে, দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বা লোকাল ট্রান্সমিশন হয়েছে ৮৮ জনের।

আইইডিসিআরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আক্রান্তের মধ্যে ছয়জন ইতালি, তিনজন যুক্তরাষ্ট্র ও দুজন সৌদি আরব থেকে এসেছেন। এ ছাড়া জার্মানি, বাহরাইন, ভারত, কুয়েত ও ফ্রান্স থেকে আসা আরও পাঁচজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত। আক্রান্ত বাকিদের কেউ দেশের বাইরে থেকে আসেননি। যদিও শুরুতে বাইরে থেকে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার কারণে ভাইরাসটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ‘সীমিত আকারে’- দেশের উচ্চপর্যায়ে থাকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এ কথাটি এখন অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা করোনাভাইরাস আক্রান্তের মধ্যে ৮০ শতাংশই বাংলাদেশের।

আইইডিসিআরের তথ্যানুযায়ী, ২২ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মিরপুরের একজন বাসিন্দা মারা যান। এর দুই দিন পরই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মিরপুরের ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মৃত ওই ব্যক্তির এক প্রতিবেশী। কিন্তু এদের কেউই দেশের বাইরে থেকে আসেননি। এরপর ২৫ মার্চ আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ‘সীমিত আকারে’ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে বলে জানান। এর দুই সপ্তাহ পর ৫ এপ্রিল ১৮ জনের এ ভাইরাসে আক্রান্তের কথা জানান তিনি। এর মধ্যে ১২ জন ঢাকার, পাঁচজন নারায়ণগঞ্জের ও একজন মাদারীপুরের বাসিন্দা।

আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘ভাইরাসটির সংক্রমণ এখনো এলাকাভিত্তিক। ঢাকার বাসাবোয় মোট নয়জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মিরপুরের টোলারবাগে শনাক্ত হয়েছেন ছয়জন। এ ছাড়া মিরপুরের অন্য এলাকাগুলোয় আক্রান্ত হয়েছেন আরও পাঁচজন।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে, যদি না এখনই সাধারণ মানুষ বাইরে ঘোরাফেরা বন্ধ না করে। এ ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তি, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন, বিশেষ করে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, যাদের অন্যান্য অসুখ রয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি আছেন এমন ব্যক্তি, যার একই সঙ্গে করোনার উপসর্গ দেখা গিয়েছে, আগে থেকে অন্য কোনো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এবং বিপুলসংখ্যক মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন এমন ব্যক্তিরাও এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিতে পারেন। তবে বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও আইইডিসিআর মনে করছে, প্রবাসীদের দেশে ফেরত আসাই করোনা সংক্রমণের অন্যতম কারণ।

এদিকে নারায়ণগঞ্জেও হু হু করে বাড়ছে করোনা রোগী ও মৃতের সংখ্যা। গতকাল বিকাল পর্যন্ত এ জেলায় করোনা আক্রান্ত হন ২৫ জন, মারা যান চারজন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনজন। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দুই-ই বেশি নারায়ণগঞ্জে। এজন্য এখানকার বাসিন্দাদের সবার মধ্যে শুধু একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কীভাবে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন! নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগী বা মৃতদের পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে কোনো প্রবাসীর সঙ্গ বা সংস্পর্শের আলামতের প্রমাণ আমরা পাইনি। তাই এখন পর্যন্ত আমরা এটাকে লোকাল ট্রান্সমিশন বলে যাচ্ছি।’

একই কথা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটির কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, ‘এখন প্রবাসী নয়, স্থানীয়দের মাধ্যমেই এ ভাইরাস ছড়াচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়া কেউই যেন ঘর থেকে বের না হন সেজন্য সবার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা। নয় তো নারায়ণগঞ্জে যেভাবে বিস্তার হচ্ছে এ রোগের, তা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।’ প্রসঙ্গত, ৩০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপেজলার রসুলবাগে শিউলি আক্তার পুতুল (৪৫), ৪ এপ্রিল ফতুল্লার কাশীপুরের ব্যবসায়ী আবু সাইদ (৫৫), ৫ এপ্রিল রাতে সদর থানার দেওভোগ আখড়া এলাকার চিত্তরঞ্জন ঘোষ ও ৬ এপ্রিল শহরের জামতলায় গিয়াসউদ্দিন (৬০) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে জেলার নয়টি এলাকায় দেড় হাজার পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর