রবিবার, ১৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনে মাহে রমজান

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনে মাহে রমজান

আত্মার সংশোধন, তাকওয়া ও মাহে রমজানের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, যার আত্মা পরিশুদ্ধ আছে সে মুত্তাকি হতে পারে। আর একজন মানুষকে মুত্তাকি বানানোর পেছনে মাহে রমজানের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। দেখুন হাদিসে পাকে  হজরত  রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের কাছে জানতে চাওয়া হয় কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে সত্যবাদী ও পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী, যা পাপাচার, অবিচার, প্রতারণা ও হিংসা থেকে মুক্ত।’  ইবনে মাজাহ হাদিস নং-৪২১৬। মূলত এই ধরনের ভালো মানুষকে সাধারণত মুত্তাকি বা পরহেজগার বলা হয়ে থাকে। আর মাহে রমজান আপন নফস বা আত্মাকে সংশোধন করে নিজেকে মুত্তাকি বানানোর মাস এবং নিজেকে অধিক ইবাদতের মাধ্যমে প্রকৃত মমিন বানানোর মাস। তাই বোঝা গেল, মাহে রমজানের  সঙ্গে আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়ার গভীর যোগসূত্র রয়েছে। মাহে রমজানের ইবাদতের কত বেশি মর্যাদা রয়েছে দেখুন! রমজান মাসের ইবাদত অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক সওয়াবে পূর্ণ। রমজানে একটি নফল আদায় করলে অন্য মাসের একটি ফরজের সমান সাওয়াব পাওয়া যায়। আর একটি ফরজ আদায় করলে সত্তরটি ফরজের সমান সাওয়াব পাওয়া যায়। রমজান মাস রহমত,  মাগফিরাত ও নাজাতে পরিপূর্ণ। যার আত্মার সংশোধন যত বেশি হবে সে তত বেশি রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত পাবে। রমজান মাসে যেমন একটি ভালো কাজের সাওয়াব দ্বিগুণ হয়, তেমনিভাবে একটি গুনাহেরও শাস্তিও দ্বিগুণ হয়। যেহেতু রমজান মাস তাকওয়ার মাস। আর তাকওয়া হচ্ছে, সব ধরনের গুনাহকে বর্জন করে এক আল্লাহর ভয়কে অন্তরে স্থান দিয়ে জীবন পরিচালনার নাম।  তাকওয়া অর্জনের দ্বারাই একজন মানুষের জীবনে পূর্ণতা লাভ করে। মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কালামে পাকে তাকওয়া অর্জন করার প্রতি জোর তাকিদ প্রদান করেছেন বারংবার। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের শুরুতেই আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হুদাল্লিল মুত্তাকিন’। অর্থাৎ এই পবিত্র কোরআন মুত্তাকি তথা তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য হিদায়াত স্বরূপ। আর প্রকৃত মুত্তাকি তারাই হতে পারে যাদের আছে ‘ইসলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধি’। কারণ যার অন্তরের ইসলাহ বা আত্মশুদ্ধি আছে তার জন্য গুনাহমুক্ত জীবন ধারণ করা খুবই সহজ হয়ে যায়। আর আত্মশুদ্ধি ব্যতিরেকে কখনই গুনাহ বর্জন করা সম্ভব নয়। রমজান মাস আমাদের থেকে চলে যাচ্ছে। আর মাত্র কয়েকটি রোজা বাকি আছে। এখনো যদি আমরা প্রকৃত মুত্তাকি হতে না পারি, নিজের স্বভার-চরিত্রের মাঝে যদি আমূল পরিবর্তন না আসে এবং নিজের জীবনের গুনাহ -খাতা মাফ করাতে যদি না পারি, তাহলে এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কিছুই হতে পারে না। কেননা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা এ মাসে বহু রোজাদার ব্যক্তিকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন। আর এটা এ মাসের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ) সুতরাং রমজান মাসে তাকওয়া অর্জন করা অনেক সহজ। পরকালে নাজাত এবং সফলতা পেতে হলে আত্মশুদ্ধির খুবই প্রয়োজন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে আত্মশুদ্ধি অর্জনকারীর সফলতার নিশ্চয়তা ও তা পরিত্যাগকারীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপারে  সূরা শামসে ইরশাদ করেন, ‘ক্বাদ আফলাহা মান জাক্কাহা ওয়া ক্বাদ খাবা মান দাস্সা হা’ অর্থাৎ- ‘যে  পরিশুদ্ধতা অর্জন করেছে, সেই সফলকাম হয়েছে, আর যে তাজকিয়্যাহ বা পরিশুদ্ধতা অর্জন করেনি, বরং গুনাহে নিমজ্জিত রয়েছে, সে ব্যর্থ হয়েছে’। মানুষের আত্মা যখন  তাকে পাপাচার ও সীমালঙ্ঘনের দিকে আহ্বান করে, তখন এই আত্মাই মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিণত হয়।  এজন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় আল্লাহর কাছে অন্তরের খারাপি থেকে অধিক পরিমাণে  মুক্তি  চাইতেন এই বলে  ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরকে আত্মরক্ষার ক্ষমতা দাও এবং তাকে পরিশুদ্ধ কর। তুমিই অন্তরের সর্বোত্তম পরিশোধনকারী এবং তুমিই তার অভিভাবক ও প্রতিপালক’।  মিশকাত হাদিস নং-২৪৬০। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে এবং নিজের অন্তরকে কুপ্রবৃত্তি থেকে দূরে রাখে, জান্নাতই হবে তার জন্য চূড়ান্ত আবাসস্থল’ সূরা আন নাজিআত : ৪০। তাই  অন্তরকে পবিত্র রাখার জন্য নিয়মিত খাদ্য প্রদান ও পরিচর্যা অতিব প্রয়োজন। ঈমান ও নেক আমল হলো অন্তরের সেই খাদ্য। শরীর যেমন খাদ্য পেয়ে শক্তি অর্জন করে তেমনি অন্তরও নেক আমলের মাধ্যমে শক্তি অর্জন করে। এই নেক আমলের সম্পর্ক শুধু মাহে রমজানের সঙ্গেই নয় বরং এর সম্পর্ক সারা জীবনের সঙ্গে। তাই তো দেখা যায় বিচক্ষণ লোকেরা বিবেকশক্তিকে অন্তরাত্মার পরিশুদ্ধিতে নিয়োজিত করে, নেক আমলের মাধ্যমে তার প্রবৃদ্ধি সাধন করে এবং অন্যায়-অকল্যাণের বিরুদ্ধে অন্তরকে বিজয়ী করে। রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে খাঁটি মুসলমান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও টিভি উপস্থাপক

 

সর্বশেষ খবর