বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

জাহান্নামের আজাব ও মুক্তির উপায়

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

জাহান্নামের আজাব ও মুক্তির উপায়

জাহান্নাম, দোজখ, আজাব ও শাস্তি ইত্যাদি। এ ধরনের শব্দগুলো বড় ভয়ানক। শোনা বা কল্পনা করা মাত্রই ভয়ে বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম। আর যখন জান্নাত ও তার নেয়ামতের কথা শুনি বা চিন্তা করি তখন আনন্দে মনটা ভরে যায়। বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। মাহে রমজানের শেষ দশক জাহান্নাম মুক্তির দশক। এই দশকও প্রায় শেষের দিকে। আজ পবিত্র রমজানের ২৭ তারিখ। এখন থেকেই আমাদের হিসাব করা উচিত যে, এই রমজানে আমরা কতটুকু রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত অর্জন করতে পেরেছি। শেষ দশক জাহান্নাম মুক্তির দশক। জাহান্নাম মুক্তি অনেক বড় বিষয়। জাহান্নামের আজাব যে কত কঠিন তা আমরা কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা কিছুটা আন্দাজ করতে পারি। আমাদের জানা ও বোঝা থেকে অনেক বেশি ভয়াবহ জাহান্নামের শাস্তি। জাহান্নাম সম্পর্কে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘এটা তো লেলিহান অগ্নি, যা গায়ের চামড়া খসিয়ে দেবে।’ (সূরা মাআরিজ : ১৫-১৬) হাশরের ময়দানে জাহান্নামিদের অবস্থা হবে অত্যন্ত করুণ। পুলসিরাতকে আল্লাহ জাহান্নামের ওপর দিয়ে বানিয়েছেন। এই পুলসিরাত দিয়ে মানুষকে পার হতে হবে। চাই সে জাহান্নামি হোক বা জান্নাতি। যারা জান্নাতি তারা বিদ্যুৎগতিতে পার হয়ে যাবেন। আর যারা জাহান্নামি তারা পিছলে জাহান্নামে পতিত হবে। সাধারণত আমরা চুলায় আগুন জ্বালালে সেই আগুনের রং হয় হলুদ। আর জাহান্নামের আগুন আল্লাহ এত বছর জ্বালিয়ে রেখেছেন যে, সেই আগুনের রং কালো। জাহান্নামিদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন, ‘যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, (অর্থাৎ জাহান্নামি) সে বলবে, হায়! আমায় যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হতো। আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায় আমার মৃত্যুই যদি শেষ হতো। আমার ধন-সম্পদ আমার কোনো উপকারে এলো না। আমার ক্ষমতা বরবাদ হয়ে গেল।’ (সূরা হাক্কাহ : ২৫-২৯) অতঃপর আল্লাহ সেই জাহান্নামির ব্যাপারে ফেরেশতাদের বলবেন, ‘ধর! একে গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। অতঃপর তাকে শৃঙ্খলিত করার ৭০ গজ দীর্ঘ শিকলে। নিশ্চয়ই সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না এবং মিসকিনদের আহার দিতে উৎসাহিত ছিল না। অতএব, আজকের দিনে এখানে তার কোনো সুহৃদ নেই এবং ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত কোনো খাদ্য নেই। গোনাহগার ব্যতীত কেউ এটা খাবে না।’ (সূরা হাক্কাহ : ৩০-৩৭) এভাবে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে জাহান্নামি ও পাপীদের বিষয় আলোচনা হয়েছে। ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের প্রতি কোনো ভ্রƒক্ষেপ করবেন না। আর তাদের কোনো অভিভাবক নেই, কোনো সাহায্যকারীও নেই।’ প্রিয় পাঠক! একটি বিষয় লক্ষ্য করুন, যদি আল্লাহ হাশরের ময়দানে আমাদের প্রতি ভ্রƒক্ষেপ না করেন তাহলে আমাদের কী অবস্থা হবে। তাই আমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। কোনো গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তওবা ও এস্তেগফারের মাধ্যমে ক্ষমা করিয়ে নিতে হবে। জাহান্নাম থেকে বাঁচার অনেক মাধ্যম রয়েছে। যেমন গিবত-শেকায়েত থেকে বেঁচে থাকা, মিথ্যাচার থেকে বেঁচে থাকা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করা। বিশেষ করে চল্লিশ দিন লাগাতার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তাকবিরে উলার সঙ্গে আদায় করা, বেশি বেশি দান-সদকা করা, জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তির দোয়া করা, সর্বদা মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা, ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর সাতবার আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার পাঠ করা, বেশি বেশি কালামে পাকের তেলাওয়াত করা। ইত্যাদি। তাই আসুন! মাহে রমজানের এখনো যে কয়টি রোজা বাকি আছে, এই কয়দিনে মাওলা পাকের কাছে জাহান্নাম ও তার শাস্তির ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে দোয়া করি, ‘হে আল্লাহ আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তিদান কর। আমাকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার কর। আমাকে জাহান্নামের ইন্ধন বানাবে না।’ অসীম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের দোয়া কবুল করবেন। ইনশা আল্লাহ।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও টিভি উপস্থাপক।

সর্বশেষ খবর