শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
ঢাকা

দীর্ঘ অপেক্ষায়ও মিলছে না সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী ঢাকায় করোনা আক্রান্ত কিংবা সাধারণ রোগী কেউই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না। রাজধানীর হাসপাতালে শয্যা, অক্সিজেন, আইসিইউ, অ্যাম্বুলেন্সসহ  নানা সংকট। যারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের খোঁজ পর্যন্ত নিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা টেস্টের জন্য রাজধানীর হাসপাতালের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। তবু টেস্ট করাতে পারছে না তারা।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ৯৬৪টি। এর মধ্যে আইসিইউ ৩৯৯টি এবং কিডনি ডায়ালাইসিস ১০৬টি। রাজধানীতে সাত হাজার ২৫০টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউ ১৩৭টি ও কিডনি ডায়ালাইসিস শয্যা ১০১টি। রাজধানীতে গতকাল পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার পেরিয়েছে। রাজধানীতে শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকার ১৩টি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছিল। এর মধ্যে একটি বেসরকারি হাসপাতাল সরকারের সঙ্গে চুক্তি থেকে সরে গেছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এ পরিস্থিতিতে বর্তমানে রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে ফাঁকা নেই আইসিইউ। রাজধানীর হাসপাতালে শয্যার ব্যবস্থা করতে পারছে না করোনা আক্রান্ত জরুরি রোগীরা। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন থাকলেও অনেকগুলোতে নেই আবার আইসিইউ। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে করোনা রোগীর আইসিইউ পেতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। ঘটছে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও। এত বিপুলসংখ্যক রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। জটিলতা না থাকলে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের ৪০ শতাংশের উপসর্গ থাকে মৃদু, মাঝারি মাত্রার উপসর্গ থাকে ৪০ শতাংশের, তীব্র উপসর্গ থাকে ১৫ শতাংশের। জটিল পরিস্থিতি দেখা যায় বাকি পাঁচ শতাংশ রোগীর মধ্যে। রাজধানীতে টেস্টের জন্য হাসপাতালের দরজায় বাড়ছে মানুষের ভিড়। শনাক্ত থেকে চিকিৎসা সব জায়গাতেই হুড়োহুড়ি। অসুস্থ শরীর নিয়ে রাত থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল, মুগদা হাসপাতালসহ করোনা টেস্টের বুথে লাইনে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। জটিল রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বলা হলেও দেখা দিচ্ছে শয্যা সংকট। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় সিলিন্ডার নিয়ে টানাটানিতে জীবন চলে যাচ্ছে রোগীর। নেই পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন, আইসিইউর ব্যবস্থা। যারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের খোঁজ পর্যন্ত নিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা পজেটিভ জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে তারা। আক্রান্ত হওয়ার ২০ দিন পর করোনার কোনো উপসর্গ না থাকলেও নমুনা নিতে আসছে না কেউ। রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তি জানান, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ফল জানিয়ে ফোনে বার্তা আসে। এরপর নিজে থেকে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওষুধ খেয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কেউ খোঁজ নেয়নি। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। ২০ দিন পর পুনরায় টেস্ট করানোর চেষ্টা করেও ব্যবস্থা করতে পারছেন না তিনি। করোনার আক্রমণে বিপদে পড়েছেন সাধারণ রোগীরাও। করোনা টেস্টের সনদ না থাকলে মিলছে না জরুরি সেবা। হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে রোগীর মারা যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

সর্বশেষ খবর