দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ৭৮৩ জনে। একই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে চার হাজার ১৪ জনের শরীরে। এটিই একদিনে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে গত ১৭ জুন সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল চার হাজার আটজন। দেশে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে করোনা শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৪১ হাজার ৮০১ জন। আইইডিসিআরের অনুমিত হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে আরও দুই হাজার ৫৩ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৫৭ হাজার ৭৮০ জনে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সবশেষ তথ্য জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এসব তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৬ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ছিল ৯০ বছরের বেশি। এ ছাড়া একজনের বয়স ৯০ থেকে ৯১ বছরের মধ্যে, ছয়জনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ১৪ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, সাতজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, তিনজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, দুজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ২২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন, খুলনা বিভাগে পাঁচজন, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে তিনজন করে এবং রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা একজন করে ছিলেন। ৪৫ জনের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩০ জন, বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪ জন এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় একজনকে। নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে বর্তমানে ৬৮টি ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে কারিগরি সমস্যার কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৫টি ল্যাবের ফলাফল পাওয়া গেছে। এ ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৪১৩টি, তবে আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ১৭ হাজার ৮৩৭টি। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো সাত লাখ ৪৮ হাজার ৪৩টি। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ২৬ শতাংশ।
কভিড-১৯ পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ : সরকারি ব্যবস্থায় কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য ফির হার নির্ধারণ করে পরিপত্র জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ড. নার্গিস বেগম স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে বলা হয়, সব সরকারি হাসপাতালে ‘খুব শিগগিরই’ এ নির্দেশনা কার্যকর করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, বুথ থেকে নমুনা সংগ্রহ এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে ২০০ টাকা করে দিতে হবে। আর বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করলে রোগী প্রতি ফি দিতে হবে ৫০০ টাকা। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বলছে, কভিড-১৯ শনাক্তে আরটিপিসিআর টেস্ট বর্তমানে বিনামূল্যে করছে সরকার। এ কারণে ‘কোনো উপসর্গ ছাড়াই অধিকাংশ মানুষ’ এ পরীক্ষা করানোর সুযোগ নিচ্ছে। এ অবস্থায় কভিড-১৯ এর নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে অপ্রয়োজনীয় কভিড-১৯ টেস্ট পরিহার করার লক্ষ্যে পরীক্ষার জন্য এ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে পরিপত্রে বলা হয়েছে, পরীক্ষার ফি বাবদ আদায় করা অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত সব সুযোগ-সুবিধা এবং মুক্তিযোদ্ধা, দুস্থ ও গরিব রোগীদের চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা সংক্রান্ত আগের সরকারি আদেশ বহাল থাকবে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রথম কভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষা হয় গত ২১ জানুয়ারি। প্রথম দিকে শুধু আইইডিসিআরে পরীক্ষা করা হলেও সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এপ্রিলের শুরুতে ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানো হয়। ২৯ এপ্রিল প্রথমবারের মতো চারটি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার সুযোগ দেয় সরকার। পরে আরও কয়েকটি হাসপাতালে পরীক্ষা শুরু হয়। এসব হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বর্তমানে দেশের ৬৮টি গবেষণাগারে কভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নমুনা পরীক্ষার কিট সরবরাহ করছে সরকার।