বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই।

গতকাল ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সভায় বক্তৃতা পর্বের আগে ‘শতবর্ষে শত পুরস্কার’ শীর্ষক অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এ কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফা প্রণয়নটা অনেকে অনেকভাবে বলতে চায়। কেউ এর পরামর্শ, ওর পরামর্শ... কিন্তু আমি নিজে জানি যে, এটা তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) সম্পূর্ণ নিজের চিন্তার ফসল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির উত্থান ঘটে। বিজয়কে এরা নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে সুযোগ আর নেই। কারণ ইতিহাস নিজস্ব গতিতে চলে, ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে পথ দেখিয়েছেন, সে আদর্শকে ধারণ করেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা প্রস্তাব উপস্থাপন ও ছয় দফা আন্দোলনের বিভিন্ন দিক তুল ধরে বলেন, ছয় দফা আন্দোলন একপর্যায়ে এক দফা আন্দোলনে পরিণত হয়। এ ছয় দফার ওপর ভিত্তি করেই মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় অর্জন। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা লুফে নিয়েছিল। এত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ কোনো বিষয়ে বুকের রক্ত দিতে পারে তা ছিল অভাবনীয়। তিনি বলেন, এ ছয় দফা ছিল সম্পূর্ণ বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব চিন্তার ফসল। বঙ্গবন্ধু নিজে লিখতেন আর হানিফকে (মোহাম্মদ হানিফ, ঢাকার সাবেক মেয়র) দিয়ে টাইপ করাতেন। একমাত্র হানিফ ছাড়া আর কেউ জানত না। এ ছয় দফা নিয়ে তিনি যখনই আলোচনা করেছেন, তখনই আমাদের জাতীয় পতাকা কী হবে, জাতীয় সংগীত কী হবে, জাতীয় স্লোগান কী হবে তা নিয়েও আলোচনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর এ ছয় দফার বিরুদ্ধে পাকিস্তানে তো ছিলই, এ দেশেও দালাল তৈরি হয়। ছয় দফার পরিবর্তে আট দফা প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তখন বঙ্গবন্ধু জেলে। কিন্তু আমার মা এ ব্যাপারে দৃঢ় ছিলেন। আমাদের বাড়িতে আওয়ামী লীগের মিটিং হয় সেখানে ছয় দফার পক্ষেই সিদ্ধান্ত হয়। ছয় দফা আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ছয় দফা নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে জেলাতে সভা করেছেন সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি যখনই এ দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন তখনই গ্রেফতার হয়েছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, বিচারে ফাঁসির রায় দিয়ে হত্যা করা। গণপ্রতিরোধের ফলে ছয় দফা আন্দোলন এক দফায় পরিণত হয়। আইয়ুব খান মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মিলিটারির একটি গাড়িতে করে এনে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ জাতিকে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গমাতার স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা ফজিলাতুন নেছা অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ছিলেন। আমাদের ৩২ নম্বরের বাড়িতে সভা হলো, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। সেখানে ছয় দফা না আট দফা- এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক। সেখানে সিদ্ধান্ত হলো, আমরা একমাত্র ছয় দফাই মানব। এখানে আট দফার দরকার নেই। ঠিক এভাবে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই কিন্তু আমাদের এগোতে হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, এরপর যখন দেখল এভাবে কিছু হচ্ছে না, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে জাতির পিতাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হলো, তখন তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলা হলো। আমাদের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমিও তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। কামালও তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছে। সেখানে আন্দোলন হয়, সংগ্রাম হয়। সারা দেশের মানুষ এ ছয় দফাকে লুফে নিয়েছিল। কোনো একটা দাবি এত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ এমনভাবে গ্রহণ করতে পারে, অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে দিতে পারে, এটা সত্যি এক অনন্য অবস্থা। একমাত্র বাংলাদেশেই এটা সম্ভব হয়েছিল, সেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে। তিনি বলেন, জাতির পিতা কারাগারে ছিলেন, এ কথা সত্য। কিন্তু কারাগারে যখন আমরা সাক্ষাৎ করতে যেতাম, তখন তিনি মাকে বিস্তারিত বলে দিতেন কী কী করতে হবে। মা এসে তখন সেটা পৌঁছে দিতেন পার্টির কাছে এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কাছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাদের লক্ষ্য ছিল, যে করেই হোক এ মামলায় বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির রায় দিয়ে হত্যা করা। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তখন এমনভাবে গণজাগরণ তৈরি হলো যে আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান বাধ্য হয়েছিল মামলা প্রত্যাহার করে নিতে। ঊনসত্তরের ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে মুক্তি দেয়। সেটাও ছিল অদ্ভুত। ঠিক দুপুরের আগে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে একটা মিলিটারি গাড়িতে করে বঙ্গবন্ধুকে সোজা ৩২ নম্বরের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে কয়েক মুহূর্তে পালিয়ে চলে যায়। ওরা তখন মানুষের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত ছিল। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খবর পেয়ে বাড়ি চলে এসে দেখি, লোকে লোকারণ্য। এভাবেই কিন্তু ছয় দফার আন্দোলন এক দফায় পরিণত হয়। তিনি বলেন, ছয় দফার ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু আমাদের মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের বিজয় অর্জন। সেদিক থেকে ছয় দফা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা বলেন, ইতিহাস আসলে মুছে ফেলাই হয়েছিল। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর আমাদের অনেকে জানতেই পারেনি, ৭ মার্চের ভাষণও নিষিদ্ধ ছিল। এ ভাষণ কখনো কেউ শুনতে পারত না। এটা বাজাতে গিয়ে আমাদের আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। আস্তে আস্তে মানুষ সব জানতে পারছে। আমার খুব ভালো লেগেছে যে, আমাদের নতুন প্রজন্ম তাদের যে আগ্রহ, তারা চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছে। ইতিহাসের অনিবার্যতায় আজ জাতির পিতার দর্শন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্ব জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। এমনকি জাতিসংঘ উদ্যোগ নিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে জাতিসংঘ এরই মধ্যে একটি স্ট্যাম্প রিলিজ করেছে। বিশ্বনেতারা বিভিন্ন দেশে অনেক কর্মসূচি নিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর