শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আরেক মডেলের

বাইডেন মাদকসেবী, বললেন ট্রাম্প

প্রতিদিন ডেস্ক

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আরেক মডেলের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র ৪২ দিন বাকি। এরই মধ্যে আরেক মডেল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। সাবেক এই মডেলের নাম অ্যামি ডরিস। তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ অভিযোগ এনেছেন। এদিকে নানা পর্যায় থেকে ব্যাপকভাবে সমালোচনার মুখে পড়া ডোনান্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন মাদকসেবী, তাকে এ জন্য পরীক্ষা করা হোক। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন।

আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে মুখোমুখি আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে জোর নির্বাচনী প্রচারণা।

এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক মডেল অ্যামি ডরিস অভিযোগ করেন, আজ থেকে ২৩ বছর আগে ইউএস ওপেন টেনিস টুর্নামেন্ট দেখতে গিয়ে তিনি ট্রাম্পের যৌন হেনস্তার শিকার হন। ৪৮ বছর বয়সী ডরিস থাকেন ফ্লোরিডায়। দুই যমজ কন্যার এই মায়ের দাবি, ২০১৬ সালে যখন অন্য আরও অনেক নারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন, তখনই তিনি এ ঘটনার কথা বলতে চেয়েছিলেন। তবে পরিবারের ক্ষতি হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে তখন তিনি সে সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন। ডরিস বলেন, ‘১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে ইউএস ওপেন টুর্নামেন্ট চলাকালে ট্রাম্প ভিআইপি বক্সের বাথরুমের বাইরে তাকে যৌন হয়রানি করেন। তখন ডরিস ছিলেন ২৪ বছরের তরুণী। ট্রাম্প তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জোর করে চুম্বন করেছিলেন, সারা শরীর স্পর্শ করেছিলেন।’ ওই দিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি জানান, ট্রাম্পকে তিনি চেঁচিয়ে সরে যেতে বলেছিলেন, থামতে বলেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প তার ওপর জোর খাটিয়েই যাচ্ছিলেন। ডরিসের অভিযোগ, তাকে এমনভাবে জাপটে ধরা হয়েছিল যে অনেক চেষ্টা করেও ছাড়ানো যাচ্ছিল না। তার দাবি, এত বছর পরও তিনি সেই ঘটনা ভুলতে পারেননি এবং রীতিমতো ‘অসুস্থ’ ও ‘নিপীড়িত’ বোধ করেন। ডরিস আরও বলেন, আপনি যে-ই হোন না কেন, কেউ যখন বলে ‘না’ তার মানে ‘না’। কিন্তু তার ক্ষেত্রে ‘না’ বলে কাজ হয়নি, ট্রাম্প কোনো কিছুর তোয়াক্কাই করেননি। এদিকে ট্রাম্প এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও ডরিস তার দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে ইউএস ওপেনের ওই দিনের টিকিট এবং ট্রাম্পের সঙ্গে তোলা ছয়টি ছবি দ্য গার্ডিয়ানকে দেখিয়েছেন। ‘এত বছর পর কেন এই ঘটনা সামনে আনলেন’- এমন প্রশ্নের উত্তরে ডরিস জানান, তার দুই মেয়ের বয়স ১৩ হতে চলেছে। তাদের সঙ্গে যেন এমনটা না হয়, তিনি তা নিশ্চিত করতে চান। তার মেয়েরা জানুক অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের মা চুপ থাকেননি, মুখ খুলেছেন। ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের জবরদস্তির ব্যাপারে তার মেয়েরা যেন সোচ্চার থাকতে পারে- সেই আকাক্সক্ষা থেকেই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, এর আগেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিকবার যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন বিভিন্ন পর্নোস্টার ও মডেলরা। যেমন গতবারের নির্বাচনের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন পর্নোস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলস। তার একসময় ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেছিলেন পর্নোস্টার। পরে অবশ্য মোটা টাকা দিয়ে এই সম্পর্কের কথা গোপন রাখতে চুক্তি করেন তিনি। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেন তৎকালীন মার্কিন  প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্প। এ ছাড়া রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনেন আরেক পর্নোস্টার জেসিকা ড্রেক। তিনি জানিয়েছিলেন, জেসিকা এবং তার কয়েকজন বান্ধবীকে নিজের স্যুটে আমন্ত্রণ জানান ট্রাম্প। সেখানে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জেসিকা ও তার দুই বান্ধবীকে জোর করে চুম্বন করেন ট্রাম্প। এ ছাড়াও যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন এক মহিলা সাংবাদিকও।

ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন মাদকসেবী : প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের বিরুদ্ধে এবার মাদক সেবনের অভিযোগ তুললেন ট্রাম্প। তবে সরাসরি নয়, একটু ঘুরিয়ে। সম্প্রতি এক মার্কিন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলে বসেন, ‘উনি নিশ্চয়ই কিছু একটা নেন। না হলে বিতর্কসভায় এমন পারফরম্যান্স!’ ট্রাম্পের দাবি, কিছুদিন আগেও মঞ্চে থাকাকালীন নি®প্রাণ শোনাত বাইডেনকে। ‘চূড়ান্ত অপদার্থ’। তবে সাম্প্রতিক কিছু বক্তৃতায় দেখা গেছে, বাইডেন অসম্ভব উন্নতি করেছেন। কীভাবে? এই প্রসঙ্গেই ট্রাম্প বলেন, ‘কিছু একটা না নিলে ওর কথা বা চিন্তাভাবনায় এতখানি স্বচ্ছতা আসার কথা নয়।’ এখানেই শেষ নয়, ২৯ সেপ্টেম্বর দুজনের মুখোমুখি বিতর্কসভা শুরুর আগে বাইডেনের মাদক পরীক্ষার দাবিও জানান ট্রাম্প। বলেন, ‘আমারও পরীক্ষা হোক, আপত্তি নেই।’

রাশিয়া-চীন নিয়ে ট্রাম্প-বাইডেনের পাল্টাপাল্টি : যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল) সিএনএন টিভি আয়োজিত প্রথম টাউন হল মিটিংয়ে জো বাইডেন ‘রাশিয়া অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ট্রাম্পকে জয়ী করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে’ অভিযোগ করে বলেছেন, রাশিয়াকে চড়া মূল্য দিতে হবে নির্বাচনে কোনো ধরনের প্রভাব খাটালে অথবা হস্তক্ষেপ করলে। যদি রাশিয়া বেআইনি প্রভাব বিস্তার করে তাহলে ভøাদিমির পুতিনকে আর্থিক অবরোধের মুখে পড়তে হবে। ডেমক্র্যাটরা কখনোই তাকে ছাড় দেবে না।’ বাইডেন আরও বলেন, ‘আমি মনে করছি রাশিয়া হচ্ছে আমাদের প্রতিপক্ষ। সত্যিকার অর্থেই তা আমি বিশ্বাস করি।’ এ সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, চীন-ও কি তার প্রতিপক্ষ। জবাব দেন ভিন্নভাবে। ‘আমি মনে করি চীন হচ্ছে আমাদের কমপিটিটর (প্রতিদ্বন্দ্বী)। খুবই সিরিয়াস কমপিটিটর।’

অপরদিকে এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বৃহস্পতিবার রাতেই এক টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়ার চেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে চীন। চীন সর্বাত্মকভাবে সক্রিয় রয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অশুভ প্রভাব খাটাতে।’

সর্বশেষ খবর