মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রিজেন্টের সাহেদের যাবজ্জীবন

ভদ্রবেশী অপরাধীদের জন্য একটি বার্তা : আদালত

আদালত প্রতিবেদক

রিজেন্টের সাহেদের যাবজ্জীবন

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার মহানগর ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘সাহেদ অত্যন্ত চালাক ও ধুরন্ধর ব্যক্তি। আমাদের এ সমাজে সাহেদের মতো ভদ্রবেশে অনেক লোক রয়েছে। এই রায়ে তাদের কাছে বার্তা পৌঁছে যাবে। সাহেদ ২০ লাখ টাকা লোন নিয়ে গাড়ি ক্রয় করেন। কিন্তু আদালতের কাছে সে  বিষয়টি অস্বীকার করে মিথ্যা তথ্য দেন। গাড়িতে অস্ত্র রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তিনি আদালতের কাছে কোনো অনুকম্পা পেতে পারেন না।’ রায় ঘোষণার আগে গতকাল দুপুরে কারাগার থেকে আসামি সাহেদকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় সাহেদের হাতে হাতকড়া ও মাথায় হেলমেট দেখা যায়। এ ছাড়া গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট আর পরনে ছিল জিন্সের প্যান্ট। আদালতে উপস্থিত সাহেদ রায় শুনে অনেকটাই নির্বিকার ছিলেন। রায় ঘোষণার পর সাহেদকে কারাগারে নিতে প্রিজন ভ্যানে ওঠানো হয়। এ সময় সাহেদ বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পাইনি। উচ্চ আদালতে যাব। সেখানে আমি ন্যায়বিচার পাব।’

এদিকে রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘সাহেদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানার অস্ত্র আইনের এই মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। এটি তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম রায়। অস্ত্র আইনের ১৯(এ) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড সাজার আদেশ দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি আরেকটি ধারায় সাহেদকে সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে তার ক্ষেত্রে যাবজ্জীবনই প্রযোজ্য হবে। আসামি সাহেদ যে অপরাধী তা এ মামলার রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এ রায় সমাজে দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। সাহেদ নিজ হেফাজতে অবৈধ পিস্তল রাখায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং গুলি রাখায় সাত বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেয় আদালত। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।’ এদিকে সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’ মামলা সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়। মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। একই আদালত ২৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এর আগে ৩০ জুলাই সাহেদ করিমকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। চার্জশিটে বলা হয়, অস্ত্রটি আসামি সাহেদের কেনা। তবে সেটি অবৈধ। অস্ত্রটি কেনার পর কোথাও ব্যবহার করা হয়নি। এ জন্য ব্যালাস্টিক পরীক্ষায় কোনো হাতের ছাপ আসেনি। মামলা তদন্তকালে প্রমাণিত হয়েছে, আসামি সাহেদ অবৈধভাবে অস্ত্র ও গুলি নিজ দখলে রেখেছেন। এর আগে গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ড চলাকালে সাহেদকে নিয়ে উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালানো হয়। পরে সেখান থেকে অস্ত্র, গুলি ও মাদক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ডিবি আলাদা দুটি মামলা করে। এর আগে ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয় সাহেদকে। পরদিন করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্টসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাহেদকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। রিমান্ড চলাকালে সাহেদ করিমকে নিয়ে ১৮ জুলাই রাতে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে উত্তরা পশ্চিম থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হয়। এর আগে ৬ জুলাই সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুরের দুই শাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে র‌্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা টেস্টের রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। ওই দিনই রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখাকেই সিলগালা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর সন্ধ্যায় হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর