শিরোনাম
সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর কেন জরুরি

মার্চের মধ্যে দুই ধাপে স্থানান্তর করার প্রস্তাব - ব্যবহারের অভাবে স্থাপনা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা

জুলকার নাইন, ভাসানচর থেকে ফিরে

ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর কেন জরুরি

আবাসনসহ সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ভাসানচরে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নানা কারণেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সুপারিশ এসেছে, বর্ষা মৌসুম শেষে আগামী মার্চের মধ্যে দুই ধাপে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের। সেটা সম্ভব না হলে সরকারের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় দেশের অন্য কোনো জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তরের। আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে ব্যবহার না শুরু করলে স্থাপনাগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) অস্থায়ী বসবাসের জন্য স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন। অবকাঠামোসমূহ অন্যান্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে, তা না হলে বিদ্যমান স্থাপনাসমূহ ব্যবহারের অভাবে বিনষ্ট হয়ে যাবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ভাসানচরে প্রেরণ সম্ভব না হলে, বাংলাদেশের দুস্থ ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর ও বিদ্যমান জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমসমূহে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প, মহিষসহ অন্যান্য পশু পালন ও পনির প্রক্রিয়াজাতকরণ, মৎস্য চাষ ছাড়াও অর্থনৈতিক কর্মকা- হিসেবে পর্যটনশিল্প স্থাপন, অর্থনৈতিক জোন স্থাপন ও ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার ইত্যাদির পরিকল্পনা করা যেতে পারে। জানা যায়, তিন বছর আগে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর নতুন-পুরনো প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার স্থান হয় টেকনাফ-উখিয়ায়। আকস্মিকভাবে ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার জন্য ক্যাম্প করায় তৈরি হয় পরিবেশগত ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা। তবে সে সময়ই এ ধরনের সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। সে নির্দেশেই সূত্রপাত হওয়া আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে সার্বিক অগ্রগতি মনিটরিং ও পর্যালোচনা করে আসছেন। প্রকল্প পরিচালক কমডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন ভাসানচর জনবল স্থানান্তর করার জন্য শতভাগ প্রস্তুত। যাতায়াতের নিরাপত্তা ও কভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন বর্ষা মৌসুম শেষে ডিসেম্বর মাস নাগাদ ৫০ হাজার জনবল এবং আগামী বছরের মার্চে পুরো ১ লাখ এফডিএমএনদের (রোহিঙ্গা) স্থানান্তর পরিকল্পনা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পরিবর্ধিত শেল্টার স্টেশনগুলোতে হওয়া ২টি হাসপাতাল ও ৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে জেলা সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় বেড, সরঞ্জামাদি ও ডাক্তার (পুরুষ ও মহিলা), নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া এখন ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে। জানা যায়, রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করতে দীর্ঘদিন থেকে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আপত্তির কারণে সরকারের এই প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এটা নিয়ে কথা বলেন। এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা সেখানে না যেতে চাইলে আমাদের দেশের অসহায় মানুষকে সেখানে রাখা হবে।’ তবে করোনা মহামারীর শুরুর দিকে সাগর থেকে উদ্ধার করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়। তারা সেখানে ভালো আছে। ইতিমধ্যে ভাসানচরে ‘গো অ্যান্ড সি’ প্রকল্পের অধীনে গত মাসের শুরুর দিকে ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে চার দিনের সফরে ভাসানচর দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। ফিরে এসে তারা অবকাঠামোর প্রশংসা করলেও সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর