ম্যারাডোনা মারা গেছেন- তা মেনে নিতে পারছেন না কেউ। প্রিয় ফুটবলারের মৃত্যুতে কাঁদছেন সবাই। কাঁদতে কাঁদতে কেউ লুটিয়ে পড়ছেন মাটিতে। কেউ আবার অশ্রুসজল চোখে দাঁড়িয়ে আছেন এক কোনায়। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ কাসা রোসাডার আশপাশের চিত্র এখন এমনই। সবাই শোকে পাথর। শুধু আর্জেন্টিনা কিংবা বুয়েনস এইরেস নয়, গোটা বিশ্বই এখন শোকস্তব্ধ। দিয়েগো ম্যারাডোনা : বর্ণময় একজন ফুটবলার। কিংবদন্তি ফুটবলার, একজন মহানায়ক। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার আবার একটু পাগলাটেও। স্বপ্নের ফুটবল খেলা ফুটবল মহানায়ক এখন শুধুই ছবি! তিনি আর ফিরবেন না, মানতে পারছেন না কেউ। ৬০ বছর বয়সে গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে, বাগ্রুদ্ধ করে, শোকের সাগরে ভাসিয়ে ম্যারাডোনা চিরস্থায়ী হয়েছেন অজানা এক দেশে। যেখানে আরেক ফুটবল জাদুকর ও সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার পেলে খেলতে চেয়েছেন তাঁর সঙ্গে ফুটবল! কিংবদন্তি ফুটবলার ম্যারাডোনার মৃত্যু মেনে নিলেও বিশ্বাস করতে পারেননি আর্জেন্টিনার আরেক ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি। টুইট করেছেন, ‘ম্যারাডোনা আমাদের ছেড়ে গেছেন। কিন্তু ছেড়ে যাননি। ওনি অবিনশ্বর।’ প্রিয় ফুটবলারের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না ফুটবল বিশ্ব। মানতে পারছেন না আর্জেন্টাইনবাসী। কিংবদন্তি ফুটবলার, বিশ্বজয়ী ফুটবলারকে সম্মান জানাতে তিন দিনের রাষ্ট্র্রীয় শোক ঘোষণা করেছে আর্জেন্টিনা সরকার। ম্যারাডোনার শবদেহ রাখা হয়েছে প্রেসিডেন্টের বাসস্থান কাসা রোসাডায়। ধারণা করা হচ্ছে প্রিয় ফুটবলারকে দেখতে ১ মিলিয়ন লোক উপস্থিত থাকবেন কাসা রোসাডায়। প্রিয় ফুটবলারকে বিদায় জানাতে আর্জেন্টাইন সরকার প্রস্তুত সর্বোচ্চ সম্মান জানাতে।
ম্যারাডোনার জন্ম ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েনস আইরেস প্রদেশের ছোট্ট শহর লানুসায় এক দরিদ্র পরিবারে। তিন কন্যাসন্তানের পর ম্যারাডোনার জন্ম। ছোট থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা। পরিবারকে সাহায্য করতে ‘বল বয়’ হিসেবে শুরু। এক সময় বল বয় ১৯৮৬ সালে হয়ে ওঠেন বিশ্বজয়ী। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৭৭ সালে সুযোগ পান আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে। বয়স কম বলে ১৯৭৮ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলা হয়নি। ঘরের মাঠে লাখ, কোটি ফুটবলপ্রেমীর সামনে ফুটবল খেলতে না পারার কষ্টকে ভোলেন ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে। বিশ্বকাপে ম্যারাডোনাই একমাত্র ফুটবলার যিনি একটি সাধারণ মানের দলকে একক প্রচেষ্টায় বিশ্বসেরা করেন। বিশ্বকাপে তার জাদুকরী ফুটবলে সম্মোহিত ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। বিশেষ করে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর গোল দুটি তাকে ইতিহাসের সোনালি পাতায় ঠাঁই দিয়েছে আলাদাভাবে। দুই গোলের একটি বিতর্কিত ‘হ্যান্ড অব গড’ এবং অন্যটি সর্বকালের সেরা গোল। চার বছর পর ১৯৯০ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে আবারও টেনে তুলেন। কিন্তু বাজে রেফারিং তাঁকে আর সুযোগ দেয়নি বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে ধরার। ফাইনালের বাঁশি বাজতেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। সেই কান্নায় শরিক হয়েছিল গোটা বিশ্ব। চারটি বিশ্বকাপ খেলা ম্যারাডোনা জাতীয় দলকে বিদায় জানান ১৯৯৭ সালে। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১ ম্যাচে গোল করেছেন ৩৪টি। বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচে ৮ গোল।
ফুটবল কিংবদন্তি ম্যারাডোনা এখন শুধুই ছবি। তাকে বিদায় জানাতে আর্জেন্টাইনবাসী প্রস্তুত সর্বোচ্চ সম্মান জানাতে।