বাতি জ্বলছে বিস্তর, কিন্তু আলো খুবই কম। এভাবেই বলা যায়, বিহার বিধানসভা নির্বাচনোত্তর অবস্থা সম্পর্কে। যা ঘটবে তার সামান্য ঘটেছে, যা ঘটেছে তার ছোট একটা অংশ মিডিয়ার নজরে ধরা পড়ছে।
বিহারের নির্বাচনপ্রসূত যে বিষয়টি পন্ডিতদের চমকে দিয়েছে : রাজনীতিকদের স্তম্ভিত করেছে, তা হলো- ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন’ নামক সংগঠনের উত্থান। সংগঠনটিকে সংক্ষেপে ‘এমআইএম’ বলা হয়ে থাকে। কিষনগঞ্জ ও তার সংলগ্ন এলাকায় ৫টি আসনে জয়ী হয়েছে এমআইএম। এর ফলে ওই অঞ্চলের সীমাঞ্চল আসন এলাকার মুসলিম ভোটব্যাংক কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়ে গেল। সর্বশেষ মুসলিম ঘাঁটি কংগ্রেসকে পরিত্যাগ করেছে- এটা পরিষ্কার।
নির্বাচনে এই বিপর্যয় বলে দিচ্ছে কেন কংগ্রেসের সিনিয়র নেতারা মনে করেন, অর্থবহ নেতৃত্বের অধীনে দলটি চলছে না। তাদের আরও গুরুতর অনুভূতি হলো, ভুল নেতৃত্ব দল চালায় বলেই বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে বিপর্যয় ঘটেছে। দলের সামনের দিনগুলো আরও অন্ধকারময় হবে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হাঁটলে গন্তব্যে পৌঁছা দূরকথা, ধপাস পতনে মাটিতে চিৎপাত হয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী।
সীমাঞ্চলে মুসলিম অধিবাসী শতকরা ৩৬ ভাগ। কিষনগঞ্জে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ৬৫ শতাংশ। দেখা যায়, এ অঞ্চল দুটোর ৫ আসনেই এমআইএম বিজয়ী। বাহাদুরগঞ্জ আসনে এমআইএম পায় ৮৫৪৭২ ভোট আর কংগ্রেস পেয়েছে ২৯৮১৮ ভোট। পাঁচ বছর আগে ২০১৫ সালের নির্বাচনে বাহাদুরগঞ্জ আসনে কংগ্রেস পেয়েছিল ৫৩৫৩৩ ভোট : আমুর আসনে তখন পেয়েছিল ১০০১৩৫ ভোট। বিহারের নির্বাচনে কংগ্রেস ৭০ আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র ১৯টিতে জিতেছে।
১৯৫২ সাল থেকেই মুসলমানরা কংগ্রেসকে লালন করছিল। গত তিন দশক ধরে অবস্থা পাল্টাতে থাকে। যখনই তারা বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প পেয়েছে সেদিকে ঝুঁকেছে। কংগ্রেস থেকে মুসলিম ভোটের মুখ ফেরানো শুরু ১৯৬৭ সালে। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টই প্রথম জোট যারা মুসলিম ভোটকে আলগা করতে পেরেছে। মমতা ব্যানার্জির কৌশলের কাছে পরাস্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত, তিন দশক ধরে এই ফ্রন্টের কব্জায় ছিল মুসলিম ভোট। উত্তরপ্রদেশে মুলায়েম সিং যাদবও একই কাজ করেছেন মমতার মতো, মুলায়েম এখনো মুসলিম ভোটের ওপর নির্ভর করেন। আসামে আঞ্চলিক নেতা বদরুদ্দিন আজমলের চোটপাট। ইনি দেওবন্দ থেকে পাস করা আলেম এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের রাজ্য সভাপতি। আজমল এখন অল ইন্ডিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের প্রধান। ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনে তিনি তার ভোটগুলো কংগ্রেসের দিকে ফেরান এবং আবিষ্কার করেন যে, কাজটি বেহুদাই করেছেন। তার মনে হয়েছে, কংগ্রেস ভোট টানতে পারে না কিংবা টানতে আগ্রহী নয়। প্রশ্ন উঠেছে, এমআইএম তরুণ মুসলিমদের মন জয় করল কীভাবে? জবাবে বলা হয়- দলটির মধ্যে দোনোমনো ব্যাপার নেই। সে যা, তা-ই তার পরিচয়। রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) যেমন বলে সে হচ্ছে যাদব সম্প্রদায়ের- এমআইএম সেভাবে বলে, ‘এই দল মুসলিমদের’। যুবকরা তো ঝুঁকবেই।
ভারত বিভাগের আগে, হায়দরাবাদ যখন দেশীয় রাজ্য, তখন ১৯২৭ সালে এমআইএমের প্রতিষ্ঠা। সর্বশেষ নিজাম (হায়দরাবাদের শাসক) মীর কাসেম আলী খানের নীরব সম্মতিতে দলটি গঠিত হয়। কাসেম রিজভী নামের এক আইনজীবী ১৯৪৪ সালে এমআইএমের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং হায়দরাবাদের ভারতভুক্তির বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলন শুরু করেন। তিনি রাজাকারদের দলের আঘাতকারী শক্তি বানিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে রিজভী গ্রেফতার হন। পরে তিনি পাকিস্তান চলে যান। রিজভীর পর নেতা হন আবদুল ওয়াইসি। তিনি দলটিকে পারিবারিক বিষয় করে তোলেন। ওয়াইসির নাতি আসাদুদ্দিন এখন দলটির অবিসংবাদিত নেতা। আসাদ তার দলকে বিভিন্ন রাজ্যে প্রসারিত করছেন। আগামী বছর অনুষ্ঠেয় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে লড়বার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
এমআইএম নানা রাজ্যে পা ফেলছে আর কংগ্রেসের পা রাখার মতো জায়গা যেখানে যেখানে ছিল তা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। কেরালায় কংগ্রেস এখনো সজীব আছে। কিন্তু লোকসভায় আসন পেতে রাহুল যখন ওখানে যান তখন মুসলিম লীগের করুণাকে ভরসা করেন। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদব বলছেন, তিনি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে আগ্রহী নন। আর বিহারে আরজেডি বলছে, ‘৭০টি আসনে কংগ্রেস ছাড় না দিলে আমরা সরকার গঠন করার মতো গরিষ্ঠ আসন পেয়েও যেতে পারতাম।’
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        