মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভা বৈঠক

রাজাকারের তালিকা তৈরির বিধান রেখে আইন হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজাকারের তালিকা তৈরির বিধান রেখে সরকার ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২০’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে আইনটির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ২০০২ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ছিল। সেই আইন পরিপূর্ণভাবে বর্তমান সময়ের চাহিদা পূরণ করতে পারছিল না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের খসড়া করেছে। আইনের খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নিবন্ধন কীভাবে হবে, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান সংগঠনের নিবন্ধনের বিধান, কাউন্সিলের কার্যকলাপ পরিচালনা, কীভাবে অর্থায়ন হবে, কাউন্সিলের তহবিল ও বাজেট কীভাবে হবে এসব বিষয় রাখা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সশস্ত্রযুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন তাদের একটা তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। বিদ্যমান আইনে এ বিধান ছিল না। নতুন আইন অনুযায়ী অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে গেজেটভুক্ত ও সনদপ্রাপ্ত অমুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে। রাজাকারের তালিকা কীভাবে করা হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাজাকারের তালিকা করার বিষয়টি খসড়া আইনে রাখা হয়েছে। আইনে সব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকে না, অন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বিধির মাধ্যমে বিস্তারিত কভার করা হবে। এদিকে সরকারি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ডাটা আলাদা সার্ভারে না রেখে নিরাপত্তার স্বার্থে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মেগা ডাটা সেন্টারে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এই ডাটা সেন্টারে ব্যক্তিগত ডাটাও সংরক্ষণের সুযোগ রেখে বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড শীর্ষক কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিক্যাল অব অ্যাসোসিয়েশনের সংশোধিত খসড়ার ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ একটা করে সার্ভার করে। এখন থেকে কেউ আর সার্ভার করতে পারবে না। সবার ডাটা এই কালিয়াকৈর ডাটা সেন্টারে কোম্পানির আন্ডারে স্টোর করতে হবে। কারণ ওখানে সব সেফটি ও সিকিউরিটি থাকবে। সরকারের কোনো ডাটা আর পৃথকভাবে কেউ রাখতে পারবে না। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এটা খুব বড় একটা কাজ হবে। এটার একটা সুবিধা হচ্ছে, এর একটা ব্যাকআপ আছে যশোরে। কোনো কারণে যদি কালিয়াকৈরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে সব ডাটা আবার যশোরের ব্যাকআপ সেন্টার থেকে উদ্ধার করা যাবে। তিনি বলেন, সবার ডাটা কালিয়াকৈরে ডাটা সেন্টারে রাখার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সেটা পুরোপুরি মানা হতো না। সম্প্রতি আমরা দেখলাম কিছু কিছু বড় বড় ডাটা ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু ওটা যেহেতু মেগা সেন্টার, এখন থেকে সব সরকারি ডাটা এখানে রাখতে হবে। ৩০০ টেরাবাইট পর্যন্ত ডাটা ওখানে স্টোর করা যাবে। এখন পর্যন্ত ৭ টেরাবাইট পর্যন্ত করা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বেসরকারি বা ব্যক্তি পর্যায়ের ডাটাও সেখানে সংরক্ষণ করা যাবে। ইউরোপীয় একজন বড় তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আমাদের ডাটা সেন্টার দেখে গেছেন। তিনি বলে গেছেন, তাদের ইউরোপেও এত বড় ডাটা সেন্টার নেই। প্রাইভেট সেক্টরের লোকজন টাকা দিয়ে ডাটা সংরক্ষণ করতে পারবে। নিজেদের আর সার্ভার করার দরকার হবে না। এই ডাটা সেন্টারে যারা ডাটা সংরক্ষণ করবেন, ওই ডাটা সেন্টারের মালিকও ঢুকতে পারবে না, বুঝতেও পারবে না, কিছুই করতে পারবে না। যিনি স্টোর করবেন কেবল তারই এন্ট্রি থাকবে ডাটা সেন্টারে।

কাপড়ের মাস্ক দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরতে অভ্যস্ত করানোর বিষয়ে সরকার নতুনভাবে উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মাঠ প্রশাসন থেকে পরামর্শ এসেছে, জেল দেওয়ার পরেও মানুষের মধ্যে ওইভাবে সচেতনতা আসছে না। সেক্ষেত্রে কাউকে ফাইন করলে সে বলে- ওই যে (পাশ দিয়ে যাওয়া) চার-পাঁচজন মাস্ক ছাড়া যাচ্ছে ওদের ফাইন করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে প্রচার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এফবিসিসিআই-সহ যেসব ব্যবসায়িক সংগঠন আছে তাদের সব সংগঠনকে নিশ্চিত করতে যে, তাদের আওতাধীন সবাইকে এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে তাদের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে মাস্ক পরা এবং এ সংক্রান্ত প্রচারণা চালাতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় প্রধানমন্ত্রী কাপড়ের মাস্ক দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে ধুয়ে ব্যবহার করতে পারবে। জেলা প্রশাসনসহ মাঠ প্রশাসনের সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে এখন থেকে তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক দিতে।

সর্বশেষ খবর