দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে দিন দিন উত্তেজনা বাড়ছে। প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে বিভিন্ন পৌরসভায় সংঘাত-সহিংসতা ঘটেছে। এ নির্বাচনে বেশি উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা। প্রচারণা নিয়ে সংষর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। অনেক পৌরসভায় পোস্টার লাগাতেও বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন পৌরসভায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রচারণা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন। ১৬ জানুয়ারি এ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে তৃতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে আজ। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অনেক দলের প্রার্থী মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে। দেশের তিন শতাধিক পৌরসভার মধ্যে তৃতীয় ধাপে ৬৪টিতে ভোট হবে ৩০ জানুয়ারি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। আর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
দ্বিতীয় ধাপে বাড়ছে উত্তেজনা : দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে গত বুধবার। এ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী হওয়ায় মেয়র পদে চারজন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৬১টি পৌরসভায় মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দাঁড়িয়েছে ৩২২১ জন। তবে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে এ ধাপে সংষর্ষের ঘটনা ঘটছে।
শুক্রবার পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভা নির্বাচনে পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি দলীয় প্রার্থী সিরাজ মল্লিক অভিযোগ করেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় তার ছোট ভাই ও ১০/১২ সমর্থক পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কালাইচরা এলাকায় পোস্টার লাগাতে গেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। এরপর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা উপজেলা বিএনপি কার্যালয় ভেঙে তছনছ করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, পুলিশকেও বলেছি কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর আমাদের লোকজন পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগালেই প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। ৩১ ডিসেম্বর মাইকিং করার সময় মাইকও ভেঙে দিয়েছে তারা। সব ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। আমরা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ চাই। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুল আলম বাচ্চু জানান, ধানের শীষের প্রার্থী পরাজয় নিশ্চিত ভেবে নৌকার সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চাচ্ছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারাও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলেন, বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা সংঘবদ্ধ হয়ে নৌকার সমর্থকদের ওপর হামলা করে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে পৌর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রার্থীদের অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।অন্যদিকে গত বুধবার প্রচারণা শুরুর প্রথম দিনে রাজশাহী বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর সমর্থককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আবদুল মালেকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন ওই পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভবানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মামুনুর রশীদের ওই সমর্থকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, রাতে নিজের দোকানের সামনে মামুনের পোস্টার টানাচ্ছিলেন দুখু নামের এক সমর্থক। ওই সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন ভবানীগঞ্জ বাজারের গোডাউন এলাকায় দুখুর ওপর হামলা করে। এতে দুখু গুরুতর আহত হন।
এ বিষয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবদুল মালেকের সমর্থকরা ভবানীগঞ্জ পৌর এলাকার কোথাও তাকে পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না। তার কর্মীদের ওপর হামলা করছে। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাচন অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবদুল মালেক। তিনি বলেন, সব প্রার্থী স্বাধীনভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। দুখু সরকারের ওপর হামলা কারা করেছে তা তিনি জানেন না। দ্বিতীয় ধাপে ৬১ পৌরসভায় ভোট ১৬ জানুয়ারি। সেদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। দ্বিতীয় ধাপে ইভিএমে ভোট হবে ২৯টি পৌরসভায়। বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট হবে। ওইদিন গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায়ও ভোট হবে; পুনঃতফসিলের পর এটি যুক্ত হয়েছে দ্বিতীয় ধাপে। এবার পৌরসভার ভোট চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ২৮ ডিসেম্বর ২৪ পৌরসভায় ভোট হয়, এখানকার অধিকাংশ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হন।