বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

টিকার মহড়া শুরু ২৭ জানুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

টিকার মহড়া শুরু ২৭ জানুয়ারি

সরকারের কেনা প্রথম ধাপের ৫০ লাখ ডোজ ও ভারতের উপহারের ২০ লাখ ডোজ মিলিয়ে আগামী ২৭ জানুয়ারি টিকা কার্যক্রম উদ্বোধনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২০-২৫ জনকে টিকা দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর পর্যবেক্ষণমূলক হিসেবে ঢাকার চার হাসপাতালের ৪০০-৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকা কর্মসূচি শুরুর পরিকল্পনা করছে সরকার। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বলেন, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুর দেড়টায় এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে ভারতের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছাবে। এগুলো ইপিআই স্টোরে সংরক্ষণ করা হবে। ২৫ জানুয়ারি বেক্সিমকোর মাধ্যমে কেনা টিকার চালান এলে কর্মসূচি শুরু হবে। ২৭ কিংবা ২৮ জানুয়ারি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২০-২৫ জন মানুষকে টিকা দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে কর্মসূচি শুরু হতে পারে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন। ব্যাপকভাবে টিকাদান শুরুর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৪০০-৫০০ জনকে টিকা দিয়ে সাত দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশব্যাপী টিকাদান  কর্মসূচি শুরু হতে পারে। সরকারের কেনা প্রথম ধাপের ৫০ লাখ ডোজ ও ভারতের উপহারের ২০ লাখ ডোজ মিলিয়ে প্রথম মাসে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। পরের মাসে দেওয়া হবে ৫০ লাখ ডোজ। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রানেজেকার টিকার ডোজ অনুযায়ী তৃতীয় মাসে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ৬০ লাখ টিকা দেওয়া হবে। টিকাদানে সরকারি হাসপাতালের বাইরে কোনো কেন্দ্র হবে না। টিকা সংক্রান্ত তথ্য প্রচারে সেল করা হয়েছে। নিয়মিত বুলেটিনের মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে। বেসরকারি অনেক হাসপাতাল টিকাদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আবেদন করেছে। তাদের ২০টি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে এবং এখনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, সব টিকার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। জ্বর, গায়ে ব্যথা, টিকা দেওয়া জায়গা হালকা ফুলে যেতে পারে। কিন্তু এনাফাইলিপিসের যে চিন্তা করা হচ্ছে তা এ পর্যন্ত কোনো টিকাই হয়নি। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিকে সেবা দিতে হাসপাতালেই টিকাদান কেন্দ্র করা হয়েছে। টিকা দেওয়ার পর ওই ব্যক্তি ১০-১৫ মিনিট ওখানেই অবস্থান করবেন। টিকাদান কেন্দ্রে ভিড় করা যাবে না, দর্শনার্থী হয়ে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। তাদের সার্বিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে, টেলিমেডিসিন সেবার ব্যবস্থা থাকবে। তাই অহেতুক বিভ্রান্তি, গুজব ছড়িয়ে অনাস্থা তৈরি করা যাবে না। ভ্যাকসিন শরীরে কতদিন কার্যকর থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, টিকা দেওয়ার পর তা শরীরে কতদিন কার্যকর থাকবে এই তথ্য এখনো পৃথিবীর কারও কাছেই নেই। এ নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন। টিকা দেওয়ার পর অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কি না তা টেস্ট করে দেখার পরিকল্পনা রয়েছে। কারা টিকা পাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৮ বছরের নিচে শিশুরা টিকা পাবে না। গর্ভবতী নারী, ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা টিকা কর্মসূচির বাইরে থাকবে। এ ছাড়া এক কোটি মানুষ দেশের বাইরে থাকেন। সবমিলিয়ে প্রায় সাত কোটি মানুষ টিকা পাবে না। বয়স্ক মানুষদের টিকা দেওয়া এই কর্মসূচির বড় চ্যালেঞ্জ। জুয়েনা আজিজ বলেন, বিমানবন্দরে টিকাগ্রহণ থেকে শুরু করে ইপিআই স্টোরে নিয়ে যাওয়াসহ সবকিছু কঠোর নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে করা হবে। ঢাকার স্টোর থেকে সারা দেশে টিকা পরিবহনের সময় পুলিশ পাহারায় নিয়ে যাওয়া হবে। টিকা কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণ করবেন তারা। আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, করোনা টিকা কার্যক্রমের সবকিছু ‘সুরক্ষা অ্যাপ’-এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সরকারের মনোনীত ব্যক্তি ও ৮০ বছরের বেশি বয়সীরা এই অ্যাপস মোবাইলে ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে পারবেন। এখানে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের সঙ্গে নাম, ঠিকানা, রোগের ইতিহাস সব তথ্য দিয়ে টিকা নিতে নিবন্ধন করতে হবে। আপাতত অন্য কেউ নিবন্ধন করতে পারবেন না। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অন্যদের জন্য অ্যাপস নিবন্ধনের সুযোগ করে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর