আমি ১৯৪৪ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা। আমার আব্বা রেলওয়ে হাসপাতালের ডাক্তার ছিলেন। আমরা ফজলুল হক হলের গেটের উল্টো দিকে রেল কোয়ার্টারে ১৯৪৪ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ছিলাম। ১৯৪৮ সালে যখন বাংলা ভাষা আন্দোলন শুরু হয়, তখন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদর দফতর ছিল ফজলুল হক হল মিলনায়তনে। আমি তখন স্কুলের ছাত্র। ফজলুল হক হল, ঢাকা হল, কার্জন হল, বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন, খেলার মাঠ-এসব এলাকা আমাদের খেলার বা বেড়ানোর জায়গা ছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয় এত বড় ছিল না এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও ছিল কম। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমাদের অবাধ গতিবিধি ছিল, ফলে ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই অর্থাৎ ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষা আন্দোলন প্রত্যক্ষভাবে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু হলে বিভিন্ন সংগঠনের যেসব কর্মী এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা বিশ্বাস করতেন পাকিস্তানকে যদি প্রগতিশীল, আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হয় তাহলে পাকিস্তানের স্বার্থেই (পূর্ব বাংলার স্বার্থে তো বটেই) দুটি রাষ্ট্রভাষা চাই। সে জন্য ১৯৪৮ সালে যখন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু হয়, তখন শুরুতে তাদের দাবি ছিল-পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক ভাষা বাংলা চাই। পরে ধীরে ধীরে তা রূপান্তরিত হয় পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে। ১৯৫২ সালে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা দুটি হতেই হবে-একটি উর্দু, অপরটি বাংলা; কেবল উর্দু নয়। ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালের শুরু থেকেই সংগ্রামী রূপ নেয়। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একদল ছাত্রের সমাবেশ ঘটেছিল। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলনও দানা বেঁধে উঠেছিল, যে কোনো সরকারের পক্ষে ১৯৫২ সালের এ নতুন জোয়ার দাবানো কঠিন ছিল। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের লাঠিচার্জ, ছাত্রদের পিকেটিং, জনসভা, কালো পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার তৈরি, উদ্বোধন, গোরস্তানে শহীদদের মাতা-পিতার সমাবেশ-এসব ছবি আমি তুলেছিলাম। ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি যখন গুলি চলে, তখন আমি শহীদ মিনারের কাছাকাছি জায়গায় ছিলাম। গুলির শব্দ শুনে আশ্রয় নিয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাঝের গাড়ি-বারান্দায়। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব, ইনি একসময় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন, আর ছিলেন কমরুদ্দিন আহমদ-ইনি বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি যে সভা হয়, তার ছবিও তুলেছিলাম, ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য ১০ জন মিছিল করে সারিবদ্ধভাবে তাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন-সে ছবিও আমার তোলা আছে। ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল বেলা কলাভবনের ওপরে কালো পতাকা তোলা হয়, তার ছবিও আমি তুলেছি। ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যখন প্রথম শহীদ বরকতের মা গেলেন গোরস্তানে, তাঁরও ছবি আমার তোলা। আরও অনেক ছবি তুলেছি। ২১ ফেব্রুয়ারি গুলি চলার পর পরই হাসান হাফিজুর রহমান, বোরহানুদ্দীন খান জাহাঙ্গীর এবং আমি-তিনজনে বেগমবাজারের এক প্রেসে গিয়ে একটি লিফলেট ছাপানোর ব্যবস্থা করি, সে লিফলেট আমরা প্রচার করেছিলাম। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষার সর্বত্র ব্যবহার আমরা চেয়েছিলাম। সে আশা পূরণ হয়নি। আমরা অনেকেই ভাষার মর্যাদা অনুভব করি না। ভাষার মর্যাদা দিলেই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।
শিরোনাম
- করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন জনপ্রিয় অভিনেতা কেনেথ কলি
- সকালের মধ্যে সাত জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের সম্ভাবনা
- ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে: আমিনুল
- ইমন-হৃদয়-তানভীরের ত্রয়ী দাপট কলম্বোতে
- শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ
- মান্না ছিলেন বাংলাদেশের জেমস বন্ড: জাহিদ হাসান
- জ্ঞানীরা পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায় : ফয়জুল করিম
- পাহাড়ি ফল ঐতিহ্যের অংশ : উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা
- পল্লী বিদ্যুতের সাব-যোনাল অফিস স্থানান্তরের প্রতিবাদে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ
- প্রবাসী ভাইয়ের লাশ আনতে গিয়ে প্রাণ গেল দুই ভাইয়ের
- নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে : নার্গিস বেগম
- বিচার ও সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হবে : নাহিদ
- চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের আনন্দ মিছিল
- উত্তাল বঙ্গোপসাগরে আশ্রয় নিল শত শত ট্রলার, চার বন্দরে সতর্কতা
- বিএনপি নামলে নির্বাচন পেছানোর সাহস কারো নেই : গয়েশ্বর
- পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ফ্যাসিজমের রাস্তা বন্ধ হবে : জামায়াত আমির
- রূপগঞ্জে কুপিয়ে আহত ইলেকট্রিশিয়ানের মৃত্যু
- কুড়িগ্রামে কঠোর নিরাপত্তায় উল্টো রথ যাত্রা উদযাপন
- মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা সিলেটে যাচ্ছেন কাল
- চিঠিতে সই ট্রাম্পের, ১২ দেশের ওপর আসছে নতুন শুল্ক
ভাষার মর্যাদা দিলেই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে
রফিকুল ইসলাম
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর