রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

তিন জুয়াড়ির ভয়ংকর তথ্য

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ম্যাচ চলাকালে গ্রেফতার হওয়া তিন ভারতীয় ক্রিকেট জুয়াড়ির কাছ থেকে একের পর এক বের হয়ে আসছে ভয়ংকর তথ্য। ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক সফরগুলো ঘিরে নিজেদের সক্রিয় হওয়ার কথা তারা স্বীকার করেছেন পুলিশের কাছে। তবে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে ‘ফিক্সিং’ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার পরও বাংলাদেশ হারায় ম্যাচটিকে সন্দেহের বাইরে রাখছে না তারা। গ্রেফতার তিন জুয়াড়ির ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে জুয়া খেলতে পৃথিবীর কমপক্ষে ২৬টি দেশ ভ্রমণের তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে।

মামলার তদন্ত সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পশ্চিম জোনের উপকমিশনার মনজুর মোর্শেদ বলেন, ‘গ্রেফতার তিনজন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে জুয়া খেলার কথা স্বীকার করেছেন। শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবল, বেসবল, রাগবিসহ অন্যান্য খেলায় জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন তারা। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘তারা কীভাবে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছে, তাদের সঙ্গে খেলোয়াড়দের কোনো লেনদেন হয়েছে কি না এবং জব্দ করা ডিভাইস দিয়ে কোনো ই-ট্রানজেকশন হয়েছে কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু তথ্য পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম দর্শকশূন্য থাকলেও তিন সন্দেহভাজন জুয়াড়ি মাঠে বসেই খেলা উপভোগ করেছেন। টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকলেও তারা কীভাবে মাঠে প্রবেশ করেছেন তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া টিকিট স্পনসর প্রতিষ্ঠানের। তবে গ্রেফতার তিন জুয়াড়ি খেলোয়াড়, কর্মকর্তা কিংবা স্পনসর প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টিকিট সংগ্রহ করেছে কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে। গ্রেফতার তিন জুয়াড়ির সঙ্গে আর কার কার যোগাযোগ রয়েছে তদন্ত করা হচ্ছে তাও। তাদের জব্দকৃত মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির কাছে পাঠানো হয়েছে। ডিভাইসগুলোতে থাকা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টুইটার অ্যাকাউন্টের তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সিআইডির রিপোর্ট পাওয়ার পর সব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচটিকে সন্দেহের বাইরে রাখছে না তদন্ত সংস্থা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারা ওই ম্যাচে ভালো অবস্থানেই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে বসে। তাই ম্যাচে ফিক্সিং হয়েছে কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে। জানা যায়, গ্রেফতার চেতন শর্মা, সুনীল কুমার ও সানি ম্যাগু আন্তর্জাতিক জুয়াড়ি চক্রের সদস্য। তারা ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও সফর করেছে। বাংলাদেশে কোনো ক্রিকেট দল সফরে এলেই ছুটে আসতেন চেতন শর্মা ও তার দল। গত দু-এক বছরে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রায় প্রতিটি সিরিজ চলাকালে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন তারা। বাংলাদেশ ছাড়াও ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, আমিরাত, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে তৎপরতা রয়েছে এ চক্রের। জুয়ার জন্য পৃথিবীর অন্তত ২৬টি দেশ তাদের ভ্রমণ করার প্রাথমিক তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। প্রসঙ্গত, ৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ চলাকালে গ্রেফতার করা হয় ভারতীয় তিন জুয়াড়িকে। পরদিন বিসিবির পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ড শেষে তিনজন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর