শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনা খাদ্যমূল্য বাড়াচ্ছে

মজুদ বাড়াতে ও সংকট এড়াতে আমদানি এবং অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহের পরিকল্পনা

মানিক মুনতাসির

বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে খাদ্যসহ প্রায় সব ধরনের পণ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে সারা বিশ্বেই পণ্যমূল্য দ্রুত ওঠানামা করছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন-মজুদ ও সরবরাহ চেইনেও প্রভাব পড়েছে। দামেও হেরফের হচ্ছে। খাদ্য বিভাগের চাল আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্যপণ্য সংগ্রহ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে দাম বৃদ্ধির জন্য করোনা পরিস্থিতিকে দায়ী করা হয়েছে। এ জন্য মজুদ বাড়ানো ও সংকট এড়াতে আমদানি এবং অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে নিরবচ্ছিন্ন খাদ্যপণ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে সরকার। যদিও গত বোরো মৌসুমে ঘোষিত খাদ্যপণ্য সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করে মন্ত্রণালয়। এ জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে খাদ্যপণ্য আমদানি শুরু করেছে সরকার।

এদিকে মজুদ পরিস্থিতি দ্রুত কমে আসছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ ৬ লাখ ৪৪ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ৫ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং গম ১ লাখ ৮ হাজার টন। অথচ ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মজুদ ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ৫ লাখ ৪৮ হাজার টন এবং গম ১ লাখ ৫৬ হাজার টন। আর মাত্র ছয় মাস আগে খাদ্যপণ্য মজুদ ছিল ১০ লাখ টনের বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনা-পরবর্তী বিশ্বে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪০ থেকে ৬০ কোটি বাড়তে পারে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশের ১৬ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার ৩ কোটি ৩০ লাখ দরিদ্র। এর মধ্যে আবার ১ কোটি ৭০ লাখ অতিদরিদ্র। তবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, করোনা-পরবর্তী দিনগুলোয় বিশ্বমন্দার ভয়াল থাবার পাশাপাশি হানা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ। ফলে ২০৩০  সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্য পূরণে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এই যখন সার্বিক প্রেক্ষাপট তখন কৃষি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশকে। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ১০টিই কোনো না কোনোভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। ফলে সামনের দিনগুলোয় খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আমলে নিয়েই মজুদ ও উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে খাদ্য বিভাগের সদ্যসাবেক মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বলেন, খাদ্যপণ্যের মজুদ শক্ত থাকলে যে কোনো দেশের সরকার স্বস্তিতে থাকে। ফলে দুর্যোগ এলে সবার আগে জনসাধারণের জীবনের নিরাপত্তা এবং এর পরই স্থান পায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এবারের মহামারী হিসেবে করোনা সারা বিশ্বকেই অচল করে দিয়েছে। ফলে এর প্রভাব খাদ্য উৎপাদন, বণ্টন ও সরবরাহ চেইনে কিছুটা তো পড়েছেই।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত খাদ্যপণ্য আমদানির উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। এখন পর্যন্ত ৬ লাখ টন খাদ্যপণ্য আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টনের আন্তর্জাতিক টেন্ডারও সম্পন্ন হয়েছে। বাকি সাড়ে ৩ লাখ টন খাদ্যপণ্য আসবে জিটুজি ভিত্তিতে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ খাদ্যপণ্য আমদানি করে মজুদ বাড়াতে চায় সরকার। এ ক্ষেত্রে নিকট অতীতে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশ থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি করলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে এবারই পাশের দেশ ভারত থেকেই চাল আমদানি করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বাজার দর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কয়েক মাস ধরে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে। ভোজ্য তেলের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া গুঁড়া দুধসহ প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েছে। এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রধানতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে করোনা মহামারীকেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর